এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের পর এবার অস্বাভাবিক ফলের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইউনিটটির ভর্তি পরীক্ষায় রেকর্ড সংখ্যক নম্বর পেয়ে সম্মিলিতভাবে প্রথম হওয়া জাহিদ হাসান আকাশ ফেল করেছেন নিজ ব্যবসায় শাখার ‘গ’ ইউনিটে। এছাড়াও বিজ্ঞান শাখা থেকে প্রথম হওয়া মো. তাসনিম ফেল করেছেন নিজের বিজ্ঞান শাখার ‘ক’ ইউনিটে। আবার পাসকৃতদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ জনই স্ব স্ব শাখার ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসের এক অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও ভর্তিচ্ছুরা। ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার দাবি করেছেন অনেকে। গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টা থেকে এখনো টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে আমরণ অনশন করছেন আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী। কিন্তু প্রশাসন এখনো পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তে অনড়।
বুধবার সকালে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সমন্বয়কারী ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, আমরা কাউকে এখনো ভর্তি করিনি। তারা আসলে তাদের বিষয়ে তদন্ত ও যাচাই-বাছাই হবে। এরপর যদি কেউ প্রমাণিত হয় যে অসদুপায় অবলম্বন করে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদিকে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ (কবি সামাদ)’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা অবহিত আছি।

বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আসা তথ্যের সঙ্গে আমরা এগুলো মেলাবো। এরপর আমরা বিষয়টি নিয়ে বসবো। সেখানেই ঠিক করবো কী করা যায়। বিষয়টি নিয়ে আমরাও ভাবছি। একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ‘ঘ’ ইউনিটে রেকর্ড ১১৪ দশমিক ৪০ নম্বর পেয়ে সম্মিলিতভাবে প্রথম হওয়া জাহিদ হাসান আকাশ ৩৪ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে ফেল করেছেন নিজ ব্যবসায় শাখার ‘গ’ ইউনিটে। যেখানে পাস করতে লাগে ৪৮ নম্বর। তার দুই ইউনিটের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- তিনি ‘গ’ ইউনিটে বাংলায় পেয়েছিলেন ১০ দশমিক ৮, ইংরেজিতে পেয়েছিলেন মাত্র ২ দশমিক ৪০, হিসাব বিজ্ঞানে ৫ দশমিক ২৮, ব্যবসায় নীতিতে ৬ দশমিক ৭২ এবং ফিন্যান্সে ৯ দশমিক ৮৪ পেয়ে ফেল করেছেন। অথচ তিনিই এক মাসের ব্যবধানে সম্মিলিত ‘ঘ’ ইউনিটে পেয়েছেন ১১৪ দশমিক ৩০ নম্বর। যেখানে বাংলায় পেয়েছেন অবিশ্বাস্য ৩০ এর মধ্যে ৩০, ইংরেজিতে ৩০ এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৩০, সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়বলিতে ২৮ দশমিক ৩০ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ২৫ দশমিক ৫০ নম্বর। অন্যদিকে ১০৯ দশমিক ৫০ নম্বর পেয়ে ‘ঘ’ ইউনিটে বিজ্ঞান শাখা থেকে প্রথম হওয়া তাসনীম বিন আলম ফেল করেছিলেন নিজ বিজ্ঞান শাখার ‘ক’ ইউনিটে। সেখানে তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ৪৩ দশমিক ৭৫ নম্বর।

এছাড়াও ‘ঘ’ ইউনিটের ফলাফলে প্রথম সারির ১০০ জনের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ জনই নিজ নিজ শাখার ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি অফিসের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদিকে বিতর্কিত ফলাফল বাতিলসহ চার দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে আমরণ অনশন করছেন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আখতার হোসেন। গতকাল বিকালে তিনি মানবজমিনকে বলেন, যতক্ষণ আমার দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস না দিবে প্রশাসন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি আমার অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। সকালে তার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এ সময় সংগঠনটির নেতারা ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিল করার দাবি করে নতুনভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে মেধাবীদের সুযোগ দিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version