এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির মরদেহ নিকটবর্তী কোনো বন বা খামারে ফেলে দেয়া হতে পারে- তুরস্কের কর্মকর্তারা এমন সন্দেহ করছেন। এমন সন্দেহ-ধন্দের মধ্যে খাসোগির দেহাবশেষের সন্ধানে ইস্তাম্বুলের উপকণ্ঠে একটি জঙ্গল ও মর্মর সাগরের কাছের এক শহরে তল্লাশি চালাচ্ছে তুরস্ক। শুক্রবার বিবিসির খবরে বলা হয়, অনুসন্ধানের সময় সৌদি কনস্যুলেট ও কনসাল জেনারেলের বাসভবন থেকে নেয়া নমুনা খাসোগির ডিএনএর সঙ্গে মেলে কিনা, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
দুই সপ্তাহ আগে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর থেকেই রাজপরিবারের নীতির কট্টর সমালোচক খাসোগির আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাকে সৌদি গুপ্তচররা কনস্যুলেটের ভেতরেই টুকরো টুকরো করে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলেছে বলে অভিযোগ আঙ্কারার। রিয়াদ এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও তুরস্ক বলছে, তাদের কাছে খাসোগিকে হত্যার পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে।
কনস্যুলেট ভবন ও কনসালের বাসভবন তল্লাশি চালিয়ে বহু নমুনা পাওয়া গেছে বলেও দাবি তুর্কি কর্মকর্তাদের। প্রাপ্ত নমুনা থেকে খাসোগির ডিএনএ উদ্ধারেরও চেষ্টা চলছে।
এর মধ্যেই সৌদি সাংবাদিকের ‘দেহাবশেষের খোঁজ পেতে’ বেলগ্রাড জঙ্গল ও ইয়ালোভা শহরের একটি স্থানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তুর্কি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, কনস্যুলেট ভবন ও কনসালের বাসভবন শেষে তারা তাদের তদন্ত আরও বিস্তৃত করেছেন। নিখোঁজের দিন কনস্যুলেট ভবন থেকে যেসব যানবাহন বেরিয়ে গেছে সেগুলোর গন্তব্য দেখেই বেলগ্রাড জঙ্গল ও ইস্তাম্বুল থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরের ইয়ালোভায় অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়।
এ দুটি স্থানে খাসোগির দেহাবশেষ থাকতে পারে বলেও অনুমান তাদের। খাসোগির দেহাবশেষ নিশ্চিহ্ন করার ক্ষেত্রে কোনো একটি ফার্ম হাউস বা ভিলাকে ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা তাদের। এর আগে বৃহস্পতিবার তুর্কি তদন্ত দল খাসোগির খোঁজে ইস্তাম্বুলের কনস্যুলেট ভবন ও কনসালের বাসভবনে দ্বিতীয় দফা তল্লাশি চালায়। ১২ ঘণ্টার ওই তল্লাশিতে এ দুই স্থানের মাটি ও পানিসহ অসংখ্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পাওয়া গেছে ফিঙ্গারপ্রিন্টও।
খাসোগি মনে হয় মরেই গেছেন- ট্রাম্প : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশেষে বলেছেন, সৌদি সাংবাদিক খাসোগি মারা গেছেন বলেই মনে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার মন্টানায় একটি রাজনৈতিক সমাবেশে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের তার এ ধারণার কথা জানান ট্রাম্প। এদিন দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে খাসোগি বেঁচে নেই বলে স্বীকার করেন। তবে খাসোগি হত্যার শিকার হয়েছেন- এমনটি না বলে ‘মারা গেছেন’ বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
খাসোগির অন্তর্ধানের পর তার পরিণতি নিয়ে এটিই ট্রাম্পের প্রথম বক্তব্য। ‘খাসোগি সম্ভবত মারাই গেছেন’ মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার কাছে এমনটিই মনে হয়েছে। এটি দুঃখজনক।’
এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সৌদি আরব সফর শেষে ফিরে ট্রাম্পকে এ ব্যাপারে সর্বশেষ তথ্য জানান। এর কয়েক ঘণ্টা পরই খাসোগিকে নিয়ে ওই মন্তব্য করেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে ফের সৌদি আরবকে কড়া শাস্তি দেয়া হবে বলে সতর্ক করেন তিনি। তবে ঘটনার আদ্যোপান্ত এখনও জানতে চান বলেও জানান ট্রাম্প।
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোতে আস্থা আছে বলে জানিয়েছেন। এসব প্রতিবেদনে খাসোগি হত্যায় সৌদি আরবের উচ্চপর্যায়ের ভূমিকা থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে। তবে এর ভিত্তিতে এখনই কোনো উপসংহার টানতে চান না বলে জানান ট্রাম্প। চূড়ান্ত ফল পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অচিরেই ঘটনার অতলে পৌঁছে যাব।’