এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আগামী ডিসেম্বরকে নির্বাচনের সম্ভাব্য মাস হিসাব করলে বাকি রয়েছে প্রায় আড়াই মাস। কিন্তু এখনও প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি আওয়ামী লীগে। তাই একেকটি নির্বাচনী আসনে প্রচারণায় আছেন একাধিক প্রার্থী। প্রতিটি আসনে অন্তত ৫জন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাব করলে তিন শ’ আসনের বিপরীতে সংখ্যাটা দাঁড়ায় দেড় হাজারের মতো। যদিও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নেতাদের হিসাবে এ সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় সাংগঠনিক সফর শেষ করেছে আওয়ামী লীগ। সেখানে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংখ্যা দেখে অনেকটা চক্ষু চড়কগাছ হয়েছে দলটির নেতাদের। এদিকে বিভিন্ন নির্বাচনী আসনে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় সেখানে বিরোধ বাড়ছে।

কোন্দলে জর্জরিত হচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। যার ঢেউ এসে পড়ছে ঢাকায় আওয়ামী লীগ অফিসেও। দলের সাংগঠনিক নেতাদের প্রায় ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে বিভিন্ন এলাকার নেতাদের বিরোধ মেটাতে। কখনও কখনও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে মনোনয়ন ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরোধ ততই বাড়ছে। তবে দলের এ অবস্থাকে ইতিবাচক হিসাবে ব্যাখ্যা করছেন শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক মানবজমিনকে বলেন, টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। দলে বেড়েছে নেতা-কর্মী। মাঠপর্যায়ে আমাদের সমর্থকের সংখ্যা দিন দিন আরো বাড়ছে। তাই দেশের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় দল হিসেবে নির্বাচনের আগে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংখ্যা বাড়তেই পারে। একই প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে যে কেউ মনোনয়ন প্রত্যাশা করতে পারেন। তাই এ নিয়ে বিরোধ দেখা যাওয়াটা স্বাভাবিক। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ যাবে না। মনোনয়ন দিলে সবাই তার পক্ষে কাজ করবেন। তবে দু-এক জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। দল সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল রয়েছে। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, মনোনয়ন ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব কাজ করছে। ভোটার ও দলের হাইকমান্ডের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা পৃথক পৃথক প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামায় বেকায়দায় পড়েছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা। শীর্ষ নেতাদের সিদ্ধান্ত মেনে তাদেরও মাঠে নামতে হচ্ছে। এ নিয়ে বিরোধ ও দূরত্ব বাড়ছে। এতে সংগঠনেও ছড়িয়ে পড়েছে নীরব বিভক্তি। একাধিক নেতা বলেন, এই পরিস্থিতি সচেতনভাবে সামাল দিতে না পারলে আগামী নির্বাচনে কোন্দল বাড়তে পারে। রংপুর এবং দিনাজপুর অঞ্চলের কয়েকটি জেলার আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তাদের এলাকাগুলোতে কোন্দল বেড়েই চলেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো প্রকাশ্যে সংঘর্ষেও রূপ নিচ্ছে। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, দলের তিন সাংগঠনিক কমিটিতে (নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা) নেতাদের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ না থাকলেও ১৬টি আসনের মধ্যে ১২টিতেই নিজ দল ও জোটের শরিক দলের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দূরত্ব রয়েছে। ভেতরে ভেতরে নেতাদের মধ্যে বিরোধ ও দলাদলি রয়েছে। এ কারণে একেকটি আসনে আওয়ামী লীগের পাঁচ থেকে ছয়জন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। প্রায় একই চিত্র দেশের অন্যান্য নির্বাচনী আসনগুলোতও। এদিকে মনোনয়ন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলছেন-একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নের বাইরে গিয়ে কেউ প্রার্থী হলে তার ‘খবর’ আছে। এবার কেউ বিদ্রোহ করলে তার খবর আছে। বিদ্রোহ করলে সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার। কাজেই অপর্কম করবেন না। কারও ব্যাপারে গীবত করবেন না। আওয়ামী লীগ যদি আওয়ামী লীগের শত্রু হয়, বাইরের শত্রু প্রয়োজন হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রার্থী হতে চাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু প্রার্থী হতে গিয়ে ঘরের মধ্যে ঘর করবেন না। মশারির মধ্যে মশারি লাগাবেন না। যাকে মনোনয়ন দেয়া হয় তিনি বাকি প্রার্থীদের শত্রু ভাববেন না। যারা মনোনয়ন চাইবেন তাদের মনোনয়নের মার্কা হবে নৌকা। তিনি আরো বলেন, চা দোকানে বসে বিএনপিকে নিয়ে সমালোচনা করেন, আপনারা নিজের দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কথার আক্রমণ করেন। নিজের দলের লোককে নিয়ে সমালোচনা করার বদ অভ্যাস ত্যাগ করার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রত্যেকের আমলনামা জমা আছে। আমলনামা দেখে, জনপ্রিয়তা যাচাই করে মনোনয়ন দেয়া হবে। যার পক্ষে জনগণ আছে, জনগণ যাকে ভালোবাসে তাকে বঞ্চিত করা হবে না।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version