এশিয়ান বাংলা, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ থেকে ৫ যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল ভোরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আড়াইহাজারের পাঁচরুখী এলাকা থেকে ৪ জনের গুলিবিদ্ধ এবং রূপগঞ্জের এশিয়ান বাইপাস সড়কের কুশাবো এলাকা থেকে মাথা থেঁতলানো এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। আড়াইহাজারে পাওয়া লাশের পাশ থেকে দুটি পিস্তল, গুলি ও একটি প্রাইভেটকার জব্দ করেছে পুলিশ। নিহতের মধ্যে তিনজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। তারা হলেন- পাবনার আতাইকুলা থানাধীন ধর্মগ্রাম পুষ্পপাড়া এলাকার লোকমান হোসেনের ছেলে জহিরুল (৩৩), জামানের ছেলে ফারুক হোসেন (৩৫) ও মিরপুরের লুৎফর মোল্লা (৩৬)। তারা ডাকাতদলের সক্রিয় সদস্য।

আড়াইহাজার থানার ওসি মুহাম্মদ আবদুল হক জানান, রোববার ভোর রাতে জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইন থেকে ফোনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাঁচরুখী প্রাইমারি স্কুলের পাশে লাশ পড়ে থাকার সংবাদ পান তিনি। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেন। প্রত্যেকটি লাশের মাথা ও শরীরের বিভিন্নস্থানে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।

এবং মুখাবয়ব থেঁতলে দেয়া হয়েছে। নিহত সকলের বয়স ৩০ থেকে ৩৬-এর মধ্যে। এ ছাড়া লাশগুলোর পাশ থেকে দুইটি পিস্তল, এক রাউন্ড তাজা গুলি ও একটি প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-০৫০১) জব্দ করে পুলিশ।
ওসি জানান, ৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাদের সকলের শরীরের বিভিন্নস্থানে গুলিসদৃশ ক্ষতচিহ্ন আছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদ্বয় ডাকাতদলের সদস্য বলে ধারণা পুলিশের। ডাকাতির মালামাল ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মাঝে গুলিবিনিময়ে তাদের মৃত্যু হতে পারে বলে অনুমান করছে পুলিশ।

অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যমে ছবি দেখে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত করেন তাদের প্রতিবেশী মো. মামুন মোল্লা। তিনি জানান, নিহত একজন পাবনা সদর উপজেলার ধর্মগ্রাম পুষ্পপাড়া এলাকার লোকমান হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম ও জামান হোসেনের ছেলে ফারুক হোসেন। আরেকজন হলেন লুৎফর মোল্লা (৩৬)। তার বাবার নাম মনসুর মোল্লা। সে রাজধানী ঢাকার রামপুরায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন। পেশায় বাসচালক। রোববার বেলা পৌনে ৩টায় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে গিয়ে রেশমা আক্তার শরীরে টি-শার্ট দেখে একজনের লাশ শনাক্ত করেন। এবং শনাক্তকৃত লাশটি তার স্বামী লুৎফর মোল্লার। এসময় তিনি হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার সঙ্গে আসা তার বড় ভাই ইউনুছ মোল্লা ও নিহতের স্বজনরাও আসেন। স্বজনদের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।

নিহত লুৎফরের স্ত্রী রেশমা জানান, তার স্বামী বাসচালক। শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে বাসা থেকে বের হন। এবং সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামেন। রাত ১টায় স্বামীর সঙ্গে তার শেষবারের মতো কথা হয়। এরপর থেকে স্বামীর মোবাইল ফোন বন্ধ পান। রোববার সকালে টেলিভিশনে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ৪ জনের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে ছুটে আসেন তিনি। নিহত লুৎফর মোল্লার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে রিশাদ ৮ম শ্রেণি ও মেয়ে লিজা ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে।
পাবনা জেলার আতাইকুলা থানার ওসি মাসুদ রানা জানান, আড়াইহাজারে আমার এলাকার ধর্মগ্রামের বাসিন্দা জহিরুল ও ফারুকের লাশ পাওয়া গেছে- এটা আমি একটি মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে তাদের বিরুদ্ধে কি কি মামলা রয়েছে তা কাগজপত্র না দেখে আমি নিশ্চিত করতে পারছি না।

অপরদিকে, রোববার ভোরে রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কে অজ্ঞাতনামা যুবকের (৩৬) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাকে হত্যার পর মুখের একপাশে থেঁতলে দেয়া হয়েছে। ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম জানান, পুলিশের ধারণা ডাকাতদের ডাকাতি করা মালামাল ভাগাভাগি করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ তাকে হত্যা করে সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায়। অপরদিকে কুশাব জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল মতিন জানান, ফজরের নামাজের আগেই সড়কে পুলিশের একাধিক গাড়ি ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। নামাজ শেষে পরপর কিছু পোশাকধারী পুলিশ সড়কটি বন্ধ করে দিয়ে মুসল্লিদের চলাচলে বাধা দেয়। এর কিছুক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলে লাশটি পড়ে থাকতে দেখেন তারা। সকাল ৮টার দিকে অপর একদল পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
স্থানীয়দের ধারণা তারা মাদক কারবারি অথবা ডাকাতদলের সদস্য। পুলিশের কথিত বন্দুক যুদ্ধে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ তাদের। পৃথক ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে উভয় থানায়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল্ল্যাহ আল মামুন (অপরাধ) সকালে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে জানান, রোববার ভোর পৌনে ৫টার দিকে সরকারি সেবা সার্ভিস ৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে রাস্তার দুই পাশে পড়ে থাকা অবস্থায় চার ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। জেলা পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাস্থল থেকে যেহেতু পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে তাতে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ডাকাতদলের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়ে থাকতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে গুলির কোনো খোসা উদ্ধার করা হয়নি। এতে মনে হচ্ছে গুলির কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে লাশের ময়নাতদন্তের পর সঠিকভাবে বলা যাবে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version