এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বা কোনো রাষ্ট্রীয় পদ পাওয়ার ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর এই নিয়ে সরকারের তরফে নানা বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গণফোরামের অবস্থান পরিষ্কার করতে বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সরকারের তরফে অব্যাহত আক্রমণাত্মক বক্তব্যের জবাবে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী বা তারেক রহমানসহ অন্য কোনো বিশেষ নেতার প্রতি সমর্থন হিসেবে এই উদ্যোগকে দেখার কোনো সুযোগ নেই। যারা ক্রমাগতভাবে আমার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ, ভিত্তিহীন ব্যক্তিগত আক্রমণ করে চলেছেন, তাদেরকে আমি এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দিতে চাই যে- নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বা কোনো রাষ্ট্রীয় পদ পাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুমাত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমি কাজ করে যাবো।’ ড. কামাল বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশে কীভাবে একটি কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সে বিষয়ে আমার চিন্তা-ভাবনা আমি আপনাদের জানাতে আগ্রহী।

একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার নিশ্চয়তার জন্য জনগণের মধ্যে ঐকমত্য হয়ে আছে। দেশের জনগণ এমন একটি নির্বাচন দেখতে চায়, যে নির্বাচনে তারা ভয়ভীতি ও প্রভাব ছাড়া তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবেন। জনগণের এই উদ্বেগ ও আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দেশের নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য গণফোরাম ব্যাপক-ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে সাতটি দাবির ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।

দাবিগুলো হচ্ছে- ১. বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া; ২. মন্ত্রিসভার পদত্যাগ; ৩. সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় নির্বাহী বিভাগ/সরকার গঠন; ৪. রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেয়া; ৫. বাকস্বাধীনতা ও রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করা; ৬. জনগণের আস্থা আছে এমন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন; এবং ৭. নির্বাচনের ইভিএম ব্যবহার না করা। আমি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। গণফোরাম সভাপতি বলেন, দাবিগুলো প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জাতীয় পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যে পৌঁছেছি। যার ফলে ‘জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট’ নামে একটি উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ড. কামাল হোসেন বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নাগরিক সমাজের ঐক্য বজায় রাখার লক্ষ্যে ‘জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট’ কাজ করে যাবে, যাতে করে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বত্র গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে আমাদের দাবিগুলো আদায়ের জন্য আমরা এমন ব্যক্তি ও দলের সঙ্গে কাজ করবো যারা একটি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সংকল্পবদ্ধ এবং যারা এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চান যেখানে ধর্ম, জাতিগত পরিচয় ও লিঙ্গের ভিত্তিতে কারো বিরুদ্ধে বৈষম্য করা হবে না। সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে অভিযোগ করে ড. কামাল বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এই লক্ষ্যগুলোর প্রতি সংকল্পবদ্ধ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এই লক্ষ্যগুলো অর্জনে কাজ করে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে এই প্রক্রিয়ার সম্পৃক্ত দলগুলোর মধ্যে কোনো সংশ্লিষ্ট নেই। সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের সাধারণ মোস্তফা মহসীন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান, জগলুল হায়দার আফ্রিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওম শফিকুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোশতাক আহমেদসহ দলটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version