এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : দিন গড়াচ্ছে আর নতুন নতুন তথ্য বের হচ্ছে ‘খাসোগি হত্যার ঝুলি’ থেকে। খাসোগি খুনে ফেঁসে গিয়ে বারবার বিবৃতি বদলাচ্ছে সৌদি রাজপরিবার। আর এর মধ্যেই বেরিয়ে এলো সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আরেকটা তথ্য। ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার ঠিক আগে তাকে ফোন করেছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। কিছুক্ষণ কথাও হয়েছিল তাদের। কিছু একটা নিয়ে দরকষাকষিও হয়েছিল। খাসোগিকে দেশে ফেরার প্রস্তাব দিচ্ছিলেন যুবরাজ। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়। রোববার এমন দাবি করেছে তুরস্কের সরকারপন্থী দৈনিক ইয়েনি সাফাক। একই দিনে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবাইর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘খাসোগি হত্যার ঘটনা বড় ধরনের একটি মারাত্মক ভুল। তবে এ খুনে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কোনো ভূমিকা নেই।’ এ নিয়ে কয়েক দফা বিবৃতিতে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছে রিয়াদ। এর পরপরই খাসোগি হত্যাকাণ্ডের নগ্নসত্য আগাগোড়া বের করেই ছাড়ব বলে আরও একবার নিজের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা জানালেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান।

ইয়েনি সাফাক পত্রিকার বরাতে দ্য নিউ আরব জানায়, কনস্যুলেটের ভেতর সৌদির পাঠানো টিম খাসোগিকে আটক করে। পরে ফোনে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে তাকে কথা বলিয়ে দেয় ওই দল। এ সময় খাসোগিকে রিয়াদে ফিরে আসার ব্যাপারে বোঝানোর চেষ্টা করেন সৌদি যুবরাজ। সৌদি ফিরে গেলে গ্রেফতার এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে পারেন এমন আশঙ্কায় যুবরাজের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন খাসোগি। এরপরই মূলত গুপ্তঘাতকদের ওই দল খাসোগিকে হত্যা করে। এ খবরের সূত্র নিরপেক্ষভাবে নিশ্চিত করেনি দ্য নিউ আরব। তবে তুরস্কের গণমাধ্যম এ পর্যন্ত খাসোগি হত্যাকাণ্ডের যেসব তথ্য প্রকাশ করেছে সেগুলোর সবই সত্য প্রমাণিত হয়েছে।

২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর থেকে খাসোগি নিখোঁজ হন। দীর্ঘ ১৭ দিন পর শুক্রবার প্রথমবারের মতো এ সাংবাদিককে হত্যার কথা স্বীকার করে রিয়াদ। তারা জানান, কনস্যুলেটের ভেতর ধস্তাধস্তিতে তিনি নিহত হয়েছেন। পরদিন সৌদি এক কর্মকর্তা খাসোগি হত্যার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। রোববার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমবারের মতো তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে খাসোগির পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুবাইর। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি একটি মারাত্মক ভুল। ভয়াবহ এক মর্মান্তিক ঘটনা। তার পরিবারের সঙ্গে আমরাও সমব্যাথী। আমরা তাদের বেদনা হৃদয়ঙ্গম করতে পারছি। দায়ীদের জবাবদিহি করা হবে বলে আমি তাদেরকে আশ্বস্ত করছি।’ জুবাইর বলেন, খাসোগির দেহ কোথায়? সৌদি আরব তা জানে না। এ ঘটনায় প্রিন্স মোহাম্মদও দায়ী নন বলে জানান জুবাইর।

এদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান রোববার জোর দিয়ে বলেন, যেভাবেই হোক, তিনি খাসোগির ব্যাপারে নগ্নসত্য প্রকাশ করবেন। ইস্তাম্বুলে এক সমাবেশে তিনি বলেন, আমরা সুবিচার খুঁজছি। খাসোগি হত্যায় যেনতেন পদক্ষেপ নয়, ঘটনার আগাগোড়া প্রকাশে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেয়া হবে। এএফপি বলছে, এদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এরদোগান। দুই নেতা একমত পোষণ করেছেন যে সবদিক থেকে খাসোগি হত্যার বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে হবে। মঙ্গলবার এ নিয়ে পার্লামেন্টে এরদোগানের বিবৃতি দেয়ার কথা রয়েছে।

১৫০০ কোটি ডলারের অস্ত্রচুক্তি বাতিল করছে কানাডা : খাসোগি হত্যার ঘটনায় সৌদি আরবে কয়েকশ’ কোটি ডলারের অস্ত্র রফতানি চুক্তি বাতিল করার কথা ভাবছে কানাডা। রোববার টিভিতে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জোর দিয়ে বলেন, কানাডা ‘সবসময় মানবাধিকার রক্ষা করে চলে। এমনকি সৌদি আরবের ক্ষেত্রেও তারা এটা করবে।’ মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে পারে এমন দেশের কাছে সামরিক অস্ত্র ও যন্ত্র বিক্রির বিষয়ে কানাডার নীতিমালায় বিধিনিষেধ রয়েছে। গত বছর রিয়াদের কাছে দেড় হাজার কোটি ডলার মূল্যের সাঁজোয়া যান বিক্রি চুক্তি করেছিল কানাডা। এর আগে সৌদির কাছে অস্ত্র বিক্রি বাতিল করে জার্মানি।

তুরস্কের পুলিশি নিরাপত্তায় খাসোগির বাগদত্তা : খাসোগিকে হত্যার পর এবার তার বাগদত্তা হ্যাতিস সেঙ্গিজের (৩৬) জীবন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাকেও হত্যা করা হতে পারে এ আশঙ্কায় তাকে ২৪ ঘণ্টার পুলিশি নিরাপত্তা দিচ্ছে তুরস্ক সরকার। খাসোগির নিখোঁজের ঘটনা সর্বপ্রথম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন হ্যাতিসই। তিনি তুরস্কের নাগরিক। খুব শিগগিরই খাসোগির সঙ্গে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। নিহত হওয়ার দিন হ্যাতিসকে বাইরে রেখেই কনস্যুলেটে ঢোকেন খাসোগি। ইস্তাম্বুল গভর্নরের অফিস থেকে এক নির্দেশনায় পিএইচডির ছাত্রী হ্যাতিসকে নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ নির্দেশের পরই ইস্তাম্বুল পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তার নিরাপত্তা জোরদার করেছে। হ্যাতিসকে বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে সেদিন ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করেন।

খাসোগির ছেলেকে ফোন সৌদি বাদশাহ ও যুবরাজের : সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। রোববার রাতে খাসোগির বড় ছেলে সালাহ খাসোগিকে ফোন করে সমবেদনা জানান যুবরাজ মোহাম্মদ। এর আগে বিবৃতিতে সমবেদনা জানান বাদশাহ সালমান। সমবেদনার জন্য সৌদি বাদশাহ ও যুবরাজকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সালাহ। সোমবার এ খবর দিয়েছে সৌদির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ। প্রায় দুই সপ্তাহ পর শুক্রবার প্রথমবারের মতো সৌদি কনস্যুলেটে খাসোগি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে সৌদি রাজপরিবার। এর দু’দিন পর রোববার খাসোগির বড় ছেলে সালাহকে ফোন করেন যুবরাজ মোহাম্মদ। ফোনে সালাহ ও তার পরিবারের প্রতি সান্ত্বনা জানান তিনি। বাদশাহ ও যুবরাজের সমবেদনা জানানোর খবর ফলাও করে প্রচার করছে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদের ছবি সংবলিত ব্যানার প্রকাশ করা হয়েছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version