এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে সৌদি আরবের প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। বিশ্ব নাড়িয়ে দেয়া এ হত্যাকাণ্ডের আগে থেকেই ইয়েমেনে সৌদির নৃশংস আগ্রাসন, সেখানকার বেসামরিক হত্যা, নিজ দেশে ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর কঠোর দমন-পীড়ন এবং নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মুখে ছিলেন। ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় তার এসব কর্মকাণ্ডে তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা করে আসছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এবার খাসোগি হত্যা নিয়ে সৌদি যুবরাজের কাছে ১০টি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এ বিষয়ে সৌদি যুবরাজকে জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বুধবার সংস্থার ওয়েবসাইটে ১০টি প্রশ্ন সংবলিত এক বিবৃতিতে প্রকাশ করা হয়। সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের উপ-পরিচালক মাইকেল পেজ বলেন, ‘খাসোগির এই নির্মম হত্যাকাণ্ড আসলে ভুল করে চালানো বা হওয়া কোনো মিশন নয়। এটা বহুদিন ধরে চলতে থাকা সৌদির মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতারই অংশ। দেশটি মনে করে, সৌদি যুবরাজ ও অন্য কর্মকর্তারা আইনের ঊর্ধ্বে।’ তিনি বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এই সুযোগেই সৌদি আরবকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।’

ইস্যুটি নিয়েই এইচআরডব্লিউর প্রথম প্রশ্ন, ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট কেন অবৈধভাবে হামলা চালিয়েই যাচ্ছে এবং বেসামরিক হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বেসামরিকদের সুরক্ষা দিতে কেন ব্যর্থ হচ্ছে?

দ্বিতীয় প্রশ্ন, সৌদি আরবের নারী অধিকারকর্মীদের প্রসঙ্গে। ২০১৮ সালের মে মাস থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন নারী অধিকারকর্মীকে গ্রেফতার করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এই নিয়ে সংস্থাটির প্রশ্ন, নারী অধিকারকর্মীদের কেন আটক করেছে সৌদি আরব এবং তাদের কবে মুক্তি দেয়া হবে?

এইচআরডব্লিউর তৃতীয় জিজ্ঞাসা, বিদেশে অবস্থান করা মানবাধিকারকর্মীদের কেন টার্গেট করছে সৌদি আরব? মোহাম্মদ বিন সালমানকে সৌদি যুবরাজ ঘোষণা করার পর থেকেই দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে দেশটিতে শুরু হয় ধরপাকড়। এইচআরডব্লিউর চতুর্থ প্রশ্ন, কেন ৩০০ এরও বেশি প্রিন্স, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তাদের আটক করেছে সৌদি আরব?

পঞ্চম প্রশ্ন, সৌদি নারীদের দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য কেন পুরুষ আত্মীয় সঙ্গে থাকতে হবে? সৌদি আরবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলেও অনেক সময় সরকারের রোষানলে পড়তে হয় আন্দোলনকারীদের। কখনও কখনও কারাদণ্ড দেন আদালত। ষষ্ঠ প্রশ্ন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কারণে কেন রাইফ বাদাউই, ওয়ালিদ আবু আল-খায়ের, মোহাম্মদ আল-কাহতানিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে? ৭ম প্রশ্ন, কোনোরকম অভিযোগ ও মামলা ছাড়া সন্দেহভাজন কাউকে মাসের পার মাস, এমনকি বছরের পর বছর আটক রাখা হয় কেন? অষ্টম প্রশ্নে সৌদি সরকারের সমালোচনাকারীদের ওপর দমন-পীড়নের কথা তুলে আনা হয়েছে। বাদশা সালমান কিংবা যুবরাজ মোহাম্মদের সমালোচনা করাকে সন্ত্রাসমূলক অপরাধ বিবেচনা করা হয় কেন?

মৃত্যুদণ্ড ইস্যু নিয়ে যুবরাজের প্রতি নবম প্রশ্ন, সৌদি আরব এমন অপরাধে কেন মৃত্যুদণ্ড দেয় যা আন্তর্জাতিক আইনে গুরুতর অপরাধ নয়? শেষ প্রশ্নে দেশটিতে ধর্মীয় আচার পালনে বৈষম্য ও নিপীড়নের বিষয়টি তুলে আনা হয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন সৌদি আরব অন্য ধর্ম পালনে সহযোগিতা করে না এবং শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর এত বৈষম্য কেন?

অস্তিত্ব রক্ষায় যুবরাজকেই চায় রাজপরিবার : খাসোগি হত্যাকাণ্ডে যে যাই বলুক, যতই চাপ আসুক যুবরাজ মোহাম্মদকে সরানো হবে না। কারণ উত্তরাধিকার সূত্রে রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী তিনিই। ক্ষমতা থেকে তাকে সরিয়ে দিলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে রাজপরিবার। আর নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই যুবরাজকে তাদের প্রয়োজন। রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে বুধবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এ সব কথা বলা হয়েছে। খাসোগি হত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে শাসনকার্যে আগের চেয়ে আরও তৎপর হয়েছেন বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। যুবরাজের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বাদশাহসহ রাজপরিবারের মধ্যে একটা ভীতি কাজ করছে। গুঞ্জন চলছে, যুবরাজকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে। তার জায়গায় আসতে পারেন বাদশাহর ভাই প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজ। বুধবার লন্ডন থেকে তার দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে সেই গুঞ্জন আরও জোরদার হয়েছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version