এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের বিষয়ে আগামী ৪ নভেম্বর রোববার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা। নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার বিকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এসব কথা বলেন। এর আগে সাক্ষাতে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের প্রত্যাশা করে রাষ্ট্রপতি ইসিকে যে কোনো বিতর্ক এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন- এ তথ্য জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন।

সিইসি সাংবাদিকদের আরও বলেন, চলমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার সংলাপের ওপর কমিশন অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করার বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের কপি পেয়েছেন। কমিশন সভায় আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ৩১ অক্টোবর থেকে নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে নির্বাচনের ইসির সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে অবহিত করা হয়। এবারও সিইসির নেতৃত্বে পুরো কমিশন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি তুলে ধরে।

সিইসির নেতৃত্বে চার কমিশনার ও ইসি সচিব বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। সাড়ে ৪টার পর তারা বেরিয়ে আসেন। বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি কেএম নুরুল হুদা বলেন, সাক্ষাতে তফসিল নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ৪ নভেম্বর কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন কমিশন সভায় তফসিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তিনি জানান, ৩ নভেম্বরেও কমিশন সভা আছে; তবে তার ইস্যু অন্য। তফসিল নিয়ে সভা হবে ৪ নভেম্বর।

নির্বাচনে ভোট গ্রহণের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে- এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, এটা এখনও ঠিক হয়নি। তফসিল চূড়ান্ত না হলে ভোটের তারিখ ঠিক হবে কিভাবে? রাষ্ট্রপতিকে ২৭ ডিসেম্বর সম্ভাব্য তারিখ জানানো হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে সিইসি বলেন, না, এটা সঠিক নয়। রাষ্ট্রপতি এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসাও করেননি।

রাজনৈতিক জোট ও দলের মধ্যে চলমান সংলাপের শেষ দেখে তফসিল দেয়ার সম্ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, এ বিষয়ে কমিশন এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। চলমান সংলাপের ওপর কমিশন অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল জানিয়ে তিনি বলেন, তফসিলের বিষয়ে ৪ নভেম্বরের কমিশন সভার আগে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ৪ নভেম্বর তফসিল নিয়ে সিদ্ধান্ত হলেও ঘোষণা হবে- যেদিন আমি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেব, সেদিন। ডিসেম্বরে ভোট গ্রহণ হবে কিনা- এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, এটা বলতে পারি না। আমরা এখনও বসিনি।

সংলাপের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন নিয়ে কমিশনের নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, না, সংবিধানে যেভাবে আছে সেভাবেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হবে। সংলাপ তফসিলে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, না, আমি মনে করি না। রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে কিছু বলার নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সব দল নির্বাচনে অংশ নেয়ার মতো আস্থার পরিবেশ কমিশন তৈরি করতে পারছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, কমিশনের আস্থা রয়েছে, সব দল ভোটে অংশ নেবে। তবে সব দল ইসির ওপর আস্থা রাখতে পারছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে উচ্চ আদালতের আদেশ সম্পর্কে কমিশনের অবস্থান জানতে চাইলে সিইসি বলেন, আদালতের আদেশ পাওয়া গেছে, পাশাপাশি রিট আবেদনকারীর আবেদনও পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় রয়েছে। নথি উত্থাপন করা হয়েছে। কমিশন সভায় আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে সিইসি জানান, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিতে রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে হবে, নাকি পিছিয়ে যেতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এটা এখনই বলার সুযোগ নেই। যদিও ইসি নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। খসড়া মনে মনে আছে। তবে মিটিং হলে ফাইনাল হবে।

এদিকে বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন যুগান্তরকে জানান, বৈঠকে নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা হয়েছে। সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোট কেন্দ্রভিত্তিক ছবিসহ ও ছবিছাড়া ভোটার তালিকা তৈরিসহ অন্যান্য প্রস্তুতির বিষয়ে জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়- সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে আন্তরিক প্রয়াস অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন।

এ সময় নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে যে কোনো বিতর্ক এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ প্রযুক্তির ব্যাপকতার ফলে এর অপব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তাই প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কে ইসিকে সজাগ থাকার নির্দেশনাও দেন তিনি। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনের সার্বিক প্রচেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।

এদিকে ইসি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৩ ও ৪ নভেম্বর পরপর দু’দিন কমিশন সভা করবে ইসি। ৪ নভেম্বর তফসিলের সিদ্ধান্ত হলেও ওইদিন তা ঘোষণা না করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগামী সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে। আগামী ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বর অথবা ২৩ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেয় ওই সূত্র।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version