এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ইসরাইলের পারমাণবিক কর্মসূচি আরো বিস্তৃত করার জন্য লিকেম-মোসাদ ১৯৬৮ সালে একটি অপারেশন পরিচালনা করে। এর নাম দেয়া হয় অপারেশন প্ল্যামবেট। ওই সময় অ্যান্টিওয়ার্প থেকে জেনোয়া যাচ্ছিল জার্মানির মালবাহী জাহাজ ‘শিয়ার্সবার্গ এ’। এতে ছিল ইউরেনিয়ামযুক্ত ২০০ টন ইয়েলো-কেক। তা ইসরাইলের একটি জাহাজে স্থানান্তর হওয়ার পর নিখোঁজ হয়ে যায় ওই জাহাজটি।
১৯৭২ সালে জার্মানির মিউনিখে একটি গণহত্যার ঘটনা ঘটে। এতে ইসরাইলের অলিম্পিক দলের ১১ সদস্য নিহত হয়েছিলেন। এর জবাবে মোসাদ একটি অভিযান পরিচালনা করে।
এর নাম দেয়া হয় অপারেশন র্যাথ অব গড। যা অপারেশন ‘বেয়োনেট’ নামেও পরিচিত। এ অপারেশনের উদ্দেশ্য ছিল মিউনিখ গণহত্যায় জড়িতদের হত্যা করা। মূল টার্গেট ছিল ফিলিস্তিনের সশস্ত্র উগ্রপন্থি গ্রুপ ‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের’ সদস্যরা এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের অপারেটিভরা। এ অপারেশন অনুমোদন দিয়েছিলেন ১৯৭২ সালের শরতে তখনকার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মায়ার। ওই অপারেশন কমপক্ষে ২০ বছর অব্যাহত ছিল বলে মনে করা হয়। টিভিতে প্রচারিত ছবি ‘সোর্ড অব গিডিয়ন’ (১৯৮৬) এবং হলিউড পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গের ২০০৫ সালের ছবি ‘মিউনিখ’-এ এই অপারেশন তুলে ধরা হয়েছে। এই অপারেশনের সময়ে পাঠানো হতো লেটার বোমা বা চিঠি বোমা। অর্থাৎ চিঠির মাধ্যমে বোমা পাঠানো হতো। তবে এসব হামলার কোনোটাই খুব ভয়াবহ ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল না কাউকে হত্যা করা। এমনই এক ঘটনা ঘটে নাৎসী যুদ্ধাপরাধী অ্যালোইস ব্রুনারের ক্ষেত্রে। তিনি ছিলেন পলাতক। তার হাতে পড়ে মোসাদের এমনই একটি লেটার বোমা। সেই চিঠি অ্যালোইস ব্রুনারের হাতে পড়ে ১৯৮০ সালে। তিনি যখন তা হাতে নেন তখন তা থেকে তার ডান হাতের চারটি আঙ্গুলই নষ্ট হয়ে যায়।
ফিলিস্তিনের লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের পপুলার ফ্রন্টের ফিলিস্তিনি এক নেতা ছিলেন ওয়াদি হাদাদ। তিনি আবু হানি নামেও পরিচিত ছিলেন। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে তিনি বেশকিছু বেসামরিক বিমান ছিনতাই করেন ১৯৬০-এর দশক ও ১৯৭০-এর দশকে। এটা সংগঠিত করার বিষয়ে তাকে দায়ী করা হয়। তাকে হত্যার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় বিষযুক্ত চকোলেট। ১৯৭৮ সালের ২৮শে মার্চ
তিনি মারা যান লিউকেমিয়া বা রক্তের ক্যানসারে। ২০০৬ সালে ‘স্ট্রাইকিং ব্যাক’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন আহারন ক্লেইন। এতে তিনি দাবি করেন, ড. ওয়াদি হাদাদকে হত্যা করেছে মোসাদ। তারা তার কাছে পাঠিয়েছিল বেলজিয়ান চকোলেট। এতে ছিল বিষের প্রলেপ দেয়া, যা খুব ধীরগতিতে কাজ করে। ফলে এই বিষক্রিয়া সহজে শনাক্ত করার মতো নয়। ফলে কয়েক মাস পড়ে মারা যান হাদাদ। ক্লেইন তার বইয়ে বলেছেন, এ জন্যই হাদাদ মারা যেতে সময় লেগেছে কয়েক মাস।
এক পর্যায়ে মোসাদ আবিষ্কার করে যে, জার্মান নাগরিক স্টিভেন স্মাইরেককে দলে ভিড়িয়েছে যোদ্ধা গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এরপর স্টিভেন স্মাইরেক সফর করছিলেন ইসরাইলে। এ অবস্থায় তার ওপর কড়া নজর রাখে মোসাদ, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, জার্মান ইন্টারনাল সিকিউরিটি এজেন্সি ‘বুন্দেসামট ফার ভারফাসুঙ্গশটজ’ (বিএফভি) ও ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেত। মোসাদের পরিচালিত এই অপারেশনে স্টিভেন স্মাইরেকের ওপর টানা পাখির দৃষ্টি রাখা হয়। তিনি ইসরাইলে অবতরণ করার পর পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ আছে, জার্মানির শিল্প-কারখানায়ও গোয়েন্দাবৃত্তি বা গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়েছে মোসাদ। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে বিএফভি’র প্রধান তার বিভাগের প্রধানদের কাছে একটি রিপোর্ট পাঠান সতর্ক করে। এতে বলা হয়, জার্মানির কম্পিউটার বিষয়ক সর্বশেষ গোপনীয়তা চুরির ক্ষেত্রে প্রধান হুমকি হিসেবে রয়েছে মোসাদ।