এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং গণতন্ত্রকে আলাদা করা যায় না। গণতন্ত্র মানে খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া মানে গণতন্ত্র। আজকে তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে, তার সাজা বাড়ানো হয়েছে। এটা কিচ্ছু না। খালেদা জিয়াকে যখন এ সাজার কথা শুনানো হল- আপনার সাজা বাড়িয়ে দিয়েছে। উনি (খালেদা জিয়া) বললেন, ‘কত দিবে দিক, আমি কখনোই মাথা নত করব না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা কখনও মাথা নত করব না। আমরা আমাদের অধিকার, আন্দোলন ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আদায় করব। আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার, ১৯৭১ সালের যে চেতনা নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম সেই অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করবই করব। আসুন ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ সরকারকে পরাজিত করতে হবে।

রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণে বৃহস্পতিবার গণঅনশন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বাতিল ও তার মুক্তির দাবিতে সকাল ১০টা থেকে ৫ ঘণ্টা এ অনশন হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বিএনপি মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পানি পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান।

বিএনপি নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হন মহানগর নাট্যমঞ্চে। প্রখর রোদ উপেক্ষা করে মাদুরে বসে হাজারও নেতাকর্মী অনশনে অংশ নেন। নেতাকর্মীদের হাতে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের রায় বাতিলের দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। বেলা ৩টায় অনশন শেষ করে বিএনপি। এ অনশনে একাত্মতা প্রকাশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের নেতাদের মধ্যে ছিলেন- নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের মোশতাক আহমেদ, ২০ দলের শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এমএ রকীব, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণে এখন বিচার ব্যবস্থা চলছে। তার প্রমাণ গত দু’দিনে খালেদা জিয়ার মামলার রায়ে হয়ে গেছে। সরকার প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থাকেও তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশ স্বৈরতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয়েছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে ৭ দফা মানতে হবে। ৭ দফা বাস্তবায়ন না হলে আগামীতে এ দেশে সংসদ নির্বাচন হবে না। এ আওয়ামী লীগকে আপনারা চেনেন, আমাদের কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচন হবে না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, একদিকে সংলাপ ও অন্যদিকে ব্যাপকভাবে গ্রেফতার। একদিকে সংলাপ, অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে ১০ বছর। এগুলো আমাদের কাছে খুব ভালো আলামত বলে মনে হয় না।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে বলেন, খুব গরম ছিল- বিরোধী দল বলে কিছুই নেই, ওদের সঙ্গে কথা বলার দরকার নেই, সংলাপ হবে না। কিন্তু এখন সংলাপ ডাকতে হয়েছে। জনগণের চাপে, বন্ধুদের চাপে সংলাপ ডাকতে বাধ্য হয়েছে যখন, তখন খালেদা জিয়ার ওপর নির্যাতন করা শুরু হয়েছে। ইতিহাস বলে, এসব নির্যাতন করে, ৫ বছরের সাজা ১০ বছর করে কিছুই করা যাবে না। এসব টিকবে না। ৭ দিনের মধ্যে ধুলোয় সব উড়ে চলে যাবে। আমরা এ আন্দোলনটা করছি।

তিনি বলেন, যে ঐক্য হয়েছে, সেই ঐক্যকে আরও দৃঢ় করে, আরও বড় করে আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের জবাব দেব। আপনাদের বিজয় কামনা করি। সংলাপ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে জেলের মধ্যে খালেদা জিয়াকে রেখে নির্বাচন করবে, ওইসব ধান্ধাবাজি চলবে না।

সংলাপে নিষ্পত্তির আগে তফসিল ঘোষণা মেনে নেয়া হবে না বলেও জানান মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে যে আলোচনা শুরু হবে তা নিষ্পত্তির আগে কোনো তফসিল ঘোষণা করা যাবে না। যে দাবির মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি আছে, যে দাবির মধ্যে সব নেতাকর্মীর মুক্তি আছে, যে দাবির মধ্যে এরপর কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা যাবে না- সেই দাবির নিষ্পত্তি হবে। তারপরেই নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্ন আসবে।

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদের পরিচালনায় গণঅনশনে আরও বক্তব্য দেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, কেন্দ্রীয় নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, বরকতউল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, শামা ওবায়েদ, কামরুজ্জামান রতন, শিরিন সুলতানা, নুরে আরা সাফা, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, শামীমুর রহমান শামীম, নিলুফার চৌধুরী মনি, হারুনুর রশীদ, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, হুমায়ুন কবির খান, নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমুখ।

অঙ্গসংগঠনের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, সাদেক আহমেদ খান, কাজী আবুল বাশার, মোরতাজুল করীম বাদরু, নুরুল ইসলাম নয়ন, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ইয়াসিন আলী, তকদির হোসেন জসিম, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version