এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ভাড়া করা বিশেষ বিমানে ৪০ অবৈধ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে জার্মানি। ওই বিমানে তাদের সঙ্গে থাকবে পুলিশ-চিকিৎসক আর দোভাষী। আগামী ২৯শে নভেম্বর জার্মানির বিশেষ বিমানটি ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরানো সংক্রান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সই হওয়া চুক্তির আওতায় ফিরছেন তারা। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, জার্মানিতে বৈধ হওয়ার চেষ্টায় দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে প্রত্যাখ্যাত ওই ৪০ বাংলাদেশি স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার সুযোগ নেন নি। ফলে জার্মান সরকার তাদের অনেকটা জোর করেই দেশে পৌঁছে দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে তাদের হস্তান্তর করেই বিশেষ ওই ফিরতি ফ্লাইটে জার্মান পুলিশের কর্মকর্তা, চিকিৎসক এবং দোভাষীরা ঢাকা ছেড়ে যাবেন। সুত্র : মানবজমিন।
কূটনৈতিক সূত্র এ-ও বলছে, স্বেচ্ছায় ফিরতে রাজি না হওয়া ওই অবৈধ বাংলাদেশিরা ইইউ’র সঙ্গে সই হওয়া চুক্তির আওতায় কোনো সুবিধা পাবেন না।
প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিউর এসওপিতে বৈধতার আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়া বাংলাদেশিরা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরলে পুনর্বাসনের আওতায় মোটা অঙ্কের অর্থ পাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। আইওএম’র মাধ্যমে অনেকেই এ সুবিধা পেয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অবশ্য জার্মানি থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছেন। এক কর্মকর্তা বলেন, জার্মানিতে ৫০০’র মতো অনিয়মিত বা অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের ফেরানোর বিষয়ে ২০১৫ সাল থেকে আলোচনা চলছে। জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ লাখ অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছেন। সেই তুলনায় জার্মানিতে সংখ্যা অল্পই। তবে জার্মান সরকার এ পর্যন্ত অর্ধেকের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করেছে। এরই মধ্যে তাদের ট্রাভেল ডকুমেন্টও ইস্যু করেছে বার্লিনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। গত বছরের নভেম্বরে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ ও ইইউ’র মধ্যে এসওপি বা চুক্তি সই হওয়ার পর থেকে দুই ধাপে গত ডিসেম্বরে ৩৬ জন এবং এপ্রিলে ৩১ জনকে দেশে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তৃতীয় টিমে এরা ফিরছেন। আরো প্রায় ১০০ জন অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন বলেও জানান এক কর্মকর্তা। অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, অনেকে স্বেচ্ছায় ফিরছেন।
তবে সেই সংখ্যা খুব বেশি নয়। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের এক ঘোষণায় জার্মান সরকার সব অনিবন্ধিত অভিবাসীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগী হয়। যারা বৈধতা পাওয়ার আইনি লড়াইয়ের শেষ ধাপ অতিক্রম করেছেন ওই অবৈধদের ফেরাতে জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ায় এবং চাপ তৈরি করে। গেল বছরে এতটাই চাপ তৈরি করে ইইউ, তারা রীতিমতো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে এ সংক্রান্ত আইনি কাঠামো ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস বা এসওপি’র সইয়ে সময়সীমা বেঁধে দেয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরানোর চুক্তি না করলে ইউরোপ ভ্রমণে ওই সব দেশের অন্যদের ভিসা কঠোর করার হুঁশিয়ারিও দেয়। বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের দাবি কোনো চাপে নয়, বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বার্থেই বিশ্বের কোথাও আন-ডকুমেন্টেড বা বৈধ ডকুমেন্টবিহীন কোনো নাগরিককে রাখতে চায় না। হয় তারা বৈধ হবে না হয় যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নাগরিকত্ব যাচাই করে ফেরত নিয়ে আসার বিষয়ে ঢাকা অঙ্গীকারবদ্ধ।