এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : শ্রীলংকার সবখানেই সাংবিধানিক আইন লঙ্ঘনের রীতি চলছে। অবৈধ এ পথ প্রথম দেখিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। সাংবিধানিক ক্ষমতার বাইরে গিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করেন। এবার প্রেসিডেন্টকে টপকিয়ে পার্লামেন্ট অধিবেশনের ডাক দিলেন স্পিকার কারু জয়সুরিয়া। শ্রীলংকার রাজনৈতিক সংকট নিরসনে তিনিও সাংবিধানিক নীতি লঙ্ঘন করলেন। শুক্রবার বিক্রমাসিংহেপন্থি ১১৮ এমপি বৈঠক করেছেন। পার্লামেন্টে জরুরি অধিবেশন ডেকে দেশের ‘দুই প্রধানমন্ত্রী’ সংকট দ্রুত নিরসন করতে চান তারা। ওই বৈঠকেই ৭ নভেম্বর পার্লামেন্ট চালুর ঘোষণা দিলেন জয়সুরিয়া। খবর এএফপির।

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে শ্রীলংকায় রাজনৈতিক সংকট চলছে। ২০১৫ সালে সংশোধিত সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্তে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাতিল করা হলেও পুরনো আইনের চর্চা করেন সিরিসেনা। বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করে মাহিন্দা রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসান। পরে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত পার্লামেন্ট অধিবেশনও স্থগিত করেন তিনি। সিরিসেনার এ অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানায় বিশ্বের বহু দেশ। আন্তর্জাতিক চাপে অধিবেশন চালুর পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন সিরিসেনা।

দেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে পার্লামেন্টের ২২৫ সদস্যের মধ্যে ১১৮ জন শুক্রবার এক জরুরি বৈঠকে বসেন। তারা সবাই পার্লামেন্টে জরুরি অধিবেশনের মাধ্যমে বিক্রমাসিংহে আস্থা প্রমাণের সুযোগ দেয়ার পক্ষে। বিশ্লেষকরা বলছেন, একই ছাদের নিচে এসে এ বৈঠকে এটাই স্পষ্ট হচ্ছে যে, সিরিসেনার নিয়োগ দেয়া প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসেকে ভোট দেবেন না এসব এমপি। সংসদ সদস্যদের এ বৈঠকের পরপরই পার্লামেন্ট অধিবেশনের ডাক দেন স্পিকার। জয়সুরিয়ার মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপিদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্পিকার। তিনি তাদের ৭ নভেম্বর পার্লামেন্ট চালুর প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন।’ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিক্রমাসিংহের দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টিসহ (ইউএনপি) ইলানকাই তামিল আরাসু কাচ্ছাই, জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা ও শ্রীলংকা মুসলিম কংগ্রেস পার্টির এমপিরা।

ইউএনপি এমপিকে ২৮ লাখ ডলার ও মন্ত্রী পদের প্রস্তাব : বিক্রমাসিংহের দল ইউএনপির এমপি রাঙ্গে বান্দারাকে দল ত্যাগ করতে ২৮ লাখ ডলার ও মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব করেছিল সিরিসেনা ও রাজাপাকসের দল। বিষয়টি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের বান্দারা বলেন, আমাকে দলে ভেড়াতে রাজাপাকসে শিবিরের সাবেক এক মন্ত্রী একটি ফোন রেকর্ডিং পাঠিয়েছিলেন। ওই দালাল আমাকে ২৮ লাখ ডলার ও আইনমন্ত্রী পদের লোভ দেখিয়েছিল। বিক্রমাসিংহের আরেকজন সমর্থন ডেপুটি মন্ত্রী রঞ্জন রামানায়েক বলছেন, সিরিসেনা-রাজাপাকসে শিবিরে লোক ভারি করতে চীন অর্থ ঢালছে। এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে বেইজিং। মুসলিম কংগ্রেস পার্টির সাতজন এমপি জানান, তারাও সিরিসেনা-রাজাপাকসের অর্থ প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। মুসলিম কংগ্রেসের নেতা রউফ হাকিম বলেন, পাইকারি ও খুচরা দরে এমপি কিনতে ব্যাপারী ও দালাল নিযুক্ত করেছেন তারা।

নৌবাহিনী প্রধানকে গ্রেফতারের নির্দেশ আদালতের

শ্রীলংকার নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল রবীন্দ্র বিজেগুনারত্নেকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। তামিল যুদ্ধে ১১ মানুষকে হত্যা ও অপহরণের অভিযোগে শুক্রবার তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয় কলম্বোর আদালত। আদালতের এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিজেগুনারত্নেকে ৯ নভেম্বরের মধ্যে গ্রেফতারে পুলিশকে আদেশ দিয়েছে আদালত। যদি পুলিশ এটি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়, তবে পুলিশের বিরুদ্ধে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ কলম্বো ফোর্টের ম্যাজিস্টেট রাঙ্গা দিসানায়াকা এ রায় দেন।

শ্রীলংকায় রনিল বিক্রমাসিংহে ও মাহিন্দা রাজাপাকসের মধ্যে সাংবিধানিক দ্বন্দ্বের মধ্যে বিজেগুনারত্নেকে গ্রেফতারের এ নির্দেশ দিল আদালত। ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা থাকাকালে তামিল বিদ্রোহীদের ওপর বর্বর আক্রমণ চালান রাজাপাকসে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও রয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে ১১ মানুষকে হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন বিজেগুনারত্নে। ২০০৯ সালের তামিল যুদ্ধে ৪০ হাজার নিহত হন বলে জানায় জাতিসংঘ।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version