এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রথমদিনের সংলাপে বেশ কিছু বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। আমি তো মনে করি না এখানে ব্যর্থতার কিছু আছে। শুরুটা ভালো হয়েছে। তাদের ৭ দফার ৩টি বিষয়ে আমাদের কোনো বাধা, আপত্তি থাকবে না। জাতীয় স্বার্থে তারা যদি চায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দরজা খোলা আছে, তারা চাইলে আবারও যে কোনো সময় সংলাপ করা সম্ভব। তবে দীর্ঘদিনের গ্যাপ, লং ডিস্টেন্স রাতারাতি ম্যাজিকেল ট্রান্সফরমেশন সম্ভব না, ক্লোজ করাও সম্ভব না। সংলাপ ৮ নভেম্বর পর্যন্ত হবে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মামলা রয়েছে, ফৌজদারি অপরাধ ছাড়া শুধু রাজনৈতিক কারণে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, আমার কাছে তাদের তালিকা পাঠাতে বলেছি। তালিকা অনুযায়ী সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে।

শুক্রবার সকালে মুন্সীগঞ্জে শ্রীনগরে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় সার্ভিস-১ এ পদ্মা সেতু ভিজিটর সেন্টার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ প্রস্তাবে সাড়া দেয়ার কথা প্রথমে আমাদের দলের লোকজন ভাবতে পারিনি। আমাদের মধ্যে ভিন্ন মত ছিল বিএনপির ব্যাপারে, থাকাটাও খুব স্বাভাবিক। তারপরও আমরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আমাদের সবার আস্থা রয়েছে নেত্রীর ওপর। তিনি যা করবেন, জাতীয় স্বার্থে করবেন। তিনি নিজের ওপর অপমান, তার জীবনের ওপর হামলার বিষয়গুলো ভুলে গিয়ে জাতীয় স্বার্থকে, গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

সেতুমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম একজন প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপে বসলেন। এটি বাংলাদেশে নজিরবিহীন ঘটনা।

সংলাপের প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কেউ কেউ ২/৩ বার বক্তব্য রেখেছেন, তবে ভালো আলোচনা হয়েছে। দূরত্বটা বহুদিনের টানাপোড়নের ক্ষেত্রে ২১ আগস্ট, ১৫ আগস্ট আছেই। ২১ আগস্ট বিএনপি আমলে নৃশংস ঘটনা ঘটে, বেগম আইভি রহমানসহ ২২টি প্রাণ ঝরে গেছে। তারপরও আমরা সমঝোতা করেছি।

আমরা জানি, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের যারা পুরস্কৃত করেছেন এবং যারা তাদের পঞ্চম সংশোধনী করে হত্যাকারীদের বিচার হবে না- এই রকম বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছিল সংবিধানে। তারপরও আমরা পলিটিক্স করি, একটি ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকা আবশ্যক। পদ্মা সেতুর মূল অংশের ৭১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ৯ হাজার ৩০০ বর্গফুটের ভিজিটরস সেন্টারের মাল্টিপারপাস হলের আসন সংখ্যা ১২০। ইনডোর ও আউটডোর ক্যাফের ক্যাপাসিটি ১০০। এছাড়া একটি ভিআইপি কক্ষ ও একটি সভাকক্ষ রয়েছে।

সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬০ ভাগ। সেতুর পিলারের নকশা নিয়ে যে সমস্যা ছিল, বৃহস্পতিবার তা দূর হয়ে গেছে। ভিজিটরস সেন্টার সম্পর্কে তিনি বলেন, পৃথিবীর সব বড় প্রকল্পে একটি ভিজিটরস সেন্টার থাকে। কারণ বড় প্রকল্পে অনেক দর্শনার্থী আসে। এখান থেকে ভিজিটররা অনেক কিছু জানতে পারবে এবং নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারবে।

সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মূল সেতুর ২৬২টি পাইলের মধ্যে ১৮২টি পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। মূল সেতুর দুই প্রান্তের দুটি ট্রান্সিশন পিয়ারের ৩২টি পিয়ারের সব পাইল শেষ হয়েছে।

মূল সেতুর ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ১২টি পিয়ারের কাজ শেষ হয়েছে এবং ২১টির কাজ চলছে। মাওয়া সাইটে মোট ১৭টি ট্রাস এসেছে, যার মধ্যে পাঁচটি স্থায়ীভাবে ও একটি অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের ৩৫৬টি ভায়াডাক্টের সব পাইল বসানো হয়েছে।

জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টের ৪৭টি পিয়ারের ১৮টি শেষ হয়েছে এবং ২৯টির কাজ চলমান। মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টের ৪১টি পিয়ারের মধ্যে ছয়টি শেষ হয়েছে এবং ৩৫টির কাজ চলছে। নদী শাসনের মোট ৪৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। মোট ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে তিন কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

অন্যদিকে সংযোগ সড়কের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। মন্ত্রীর এ সফরে আরও উপস্থিত ছিলেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব আনোয়ারুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version