এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : মা যেমন বুক আগলে শত্রুর হাত থেকে তার শিশুকে বাঁচায়, ঠিক তেমনিভাবে সৌদি যুবরাজকে বাঁচাল যুক্তরাষ্ট্র। খ্যাতনামা সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যা কেলেঙ্কারি সত্ত্বেও তার কিছুই করতে পারল না বিশ্ব সম্প্রদায়। আগের মতোই সীমাহীন দাপট নিয়ে অসীম ক্ষমতায় বহাল রয়েছেন। ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে খাসোগির হত্যার পর এক মাস হয়ে গেল। যতই দিন গেছে, ততই স্পষ্ট হয়েছে এর পেছনে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের হাত রয়েছে। এই অভিযোগে যুবরাজকে বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক চাপও ছিল যথেষ্ট। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। গোটা দুনিয়া একদিকে হয়েও এতটুকু দুর্বল করতে পারছে না সৌদি রাজপরিবারকে। ঢাল হয়ে তাকে রক্ষা করে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাসোগি হত্যাকাণ্ডে স্পষ্টত দায়মুক্তি পেয়ে গেছেন যুবরাজ। এটা একদিকে যেমন সৌদির রাজতান্ত্রিক শাসনের ক্ষমতা কাঠামোর প্রকৃতির কারণে। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের কারণেও। নিজ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ইয়েমেন আগ্রাসন এবং খাসোগির মতো সমালোচকদের প্রকাশ্যে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরও তেলবন্ধুর পাশেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারাই নিশ্চিত করছে, কোনো ঝড়-তুফানই ছুঁতে পারবে না তাকে।
এদিকে বয়সের কারণে রাজকার্যে কিছুটা উদাসীনতা দেখালেও খাসোগি হত্যার বিতর্কের মধ্যে ফের তৎপর হয়েছেন বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। ছেলের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে উদ্বেগ থাকলেও ক্ষমতায় তাকেই চান বাদশাহ। সেজন্য সব রকম কৌশলই কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। খাসোগির বিতর্কের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে কয়েক বিলিয়ন ডলার দিয়েছেন বলে চাউর হয়েছে। ফলে এটা এখন নিশ্চিত যে, উত্তরাধিকার হিসেবে যুবরাজই সিংহাসনে বসবেন। সে ক্ষেত্রে আগামী অর্ধশতাব্দী তিনিই শাসন করবেন সৌদি আরব।
খাসোগি হত্যা নিয়ে সৌদি শাসনের পটপরিবর্তনের এমন গুজব সমালোচনার মধ্যেই সামনে এসেছে আরেক নতুন তথ্য। গত ৯ অক্টোবর, হত্যার এক সপ্তাহ পরই হোয়াইট হাউসে ফোন করেন যুবরাজ। ফোনকলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বলেন, ‘খাসোগি মারাত্মক ইসলামপন্থী ছিলেন।’ তখনও পর্যন্ত খাসোগিকে হত্যার কথা সৌদি আরবের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়নি। সৌদি প্রিন্সের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের ফোনালাপের বিষয়টি প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট এবং নিউইয়র্ক টাইমস। এ থেকে স্পষ্ট যে, হত্যার পেছনে বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল যুবরাজের। তবে ফোনের খবর ফাঁস হওয়ার পর সৌদি আরবের পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। খবরে বলা হয়, সেদিন ট্রাম্পের জামাতা জেরার্ড কুশনার এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের সঙ্গে কথা বলেন যুবরাজ। তাদের তিনি বলেন, ‘খাসোগি একটি ইসলামপন্থী সংস্থা মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য।’ এর মাধ্যমে তিনি আসলে তাকে হত্যার যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। তবে খাসোগির পরিবার জানিয়েছে, খাসোগি কখনও মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তারা জানিয়েছেন, খাসোগি নিজে গত কয়েক বছর ধরে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন। খাসোগি কোনোভাবে সৌদি আরবের জন্য ক্ষতিকর কিছু করেননি। এভাবে তাকে দোষারোপ করা হাস্যকর।
খাসোগি হত্যার জেরে সৌদি আরবের ওপর অবরোধ আরোপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় নেবে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার এক রেডিও সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি বলেন, খাসোগি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ হাতে পাওয়ার পরই সৌদি আরবের ওপর অবরোধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর এজন্য আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যাবে।
পম্পেও বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব পরিষ্কারভাবেই বলেছেন খাসোগি হত্যায় অবশ্যই পদক্ষেপ নেবে ওয়াশিংটন। তিনি তার প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন হত্যার সঙ্গে কোনো ব্যক্তি জড়িত থাকলেও তার ওপর অবরোধ আরোপের বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হয়।