এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আলোচনায় বসার পাশাপাশি আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একদিকে আলোচনা করবে, আরেকদিকে আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া এটা কী ধরনের সংলাপ, সেটা আমাদের কাছে বোধগম্য না। জানি না, দেশবাসী, জাতি এটা কীভাবে নেবে। গতকাল জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠুভাবে আগামী সংসদ নির্বাচন করার লক্ষ্যেই সরকার সংলাপে বসেছে- এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আর যেন জ্বালাও-পোড়াও না হয়। দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক। দেশের মানুষ তাদের পছন্দমতো সরকার বেছে নিক। এ লক্ষ্যেই সংলাপে বসেছি আমরা। সংলাপে বেশির ভাগ সময়ই তারা কথা বলেছে।

প্রায় দুই ঘণ্টা তারা কথা বলেছে। শেষে আমরা কথা বলেছি। কিন্তু আলোচনার মধ্যেই তারা এখন আন্দোলনের কর্মসূচির কথা বলেছে। জাতীয় ঐক্যজোটের বিভিন্ন দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের দাবি তারা জানিয়েছেন। আমাদের যেটা মানা সম্ভব আমরা বলেছি সেটা করবো। তারা জানিয়েছে, রাজবন্দিদের মুক্তি চায়। আমরা বলেছি, রাজবন্দিদের তালিকা দিন। তাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো খুনের মামলা না থাকে, যদি কোনো ক্রিমিনাল অফেন্স তারা না করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। রাজনৈতিক কারণে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বা আর কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি’র তৈরি লোকজনই খালেদা ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

তাদের আপনজনরাই মামলা করেছে। তাদের বানানো প্রেসিডেন্ট ইয়াজ উদ্দিন, তাদেরই বানানো সেনাপ্রধান মইন উদ্দীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফখরুদ্দীনরাই এ মামলা করেছেন। এরা সবাই ছিলেন বিএনপি’রই তৈরি। তারা ক্ষমতায় বসে মামলা দিয়েছে। তাদের (বিএনপি) উপদেষ্টা মইনুল হোসেনই মামলাটা তৈরি করে দিয়েছেন। এসব মামলায় ক্ষমতাসীন সরকারের কোনো দুরভিসন্ধি থাকলে একটা মামলা শেষ করতে ১০ বছর সময় লাগার কথা না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ বছর ধরে মামলা চলার পরে রায় হয়েছে, সেই মামলায় সাজা হয়েছে। স্বাধীন বিচার বিভাগ খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে- এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার, ইউপি নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে যা নিয়ে কোনো কথা হয়নি। এই নির্বাচন কমিশন দেশে অনেক সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছে। কাজেই এই কমিশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কথা না। তারা প্রতিটি নির্বাচন স্বচ্ছতার সঙ্গে করেছে। আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। খুনিদের বিচার না করে তাদেরকে পুরস্কৃত করেছে বিএনপি- এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের বিজয়ের চিহ্নকে মুছে ফেলতে যারা কাজ করেছে, তাদেরকে পুনর্বাসন করেছে বিএনপি। তারা জাতির পিতাকে খুন করেছে, জেলে বন্দি নেতাদেরকে খুন করেছে। আইনের তোয়াক্কা না করে খুনিদেরকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।

খুন করার যোগ্যতাবলে তাদেরকে চাকরি দেয়ার পাশাপাশি পদোন্নতিও দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ও ৩রা নভেম্বরের খুনিদের বিচার করার লক্ষ্য ছিল। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে কাজ করেছি, তাদের বিচার করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে অনেক বাধার সম্মুখিন হয়েছি। তবে লক্ষ্য সুদৃঢ় ছিল বলে শত বাধা অতিক্রম করে আমরা বিচার করতে পেরেছি। এজন্য অনেককে নির্যাতিত হতে হয়েছে। আমরা সৃষ্টি করি, ওরা (বিএনপি-জামায়াত) ধ্বংস করে- এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের তাণ্ডব থেকে ছোট্ট শিশুও রক্ষা পায়নি। মানুষ পোড়ানোর পাশাপাশি বাড়িঘর জ্বালানোসহ নানা তাণ্ডব চালিয়েছে দেশজুড়ে। এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আনন্দ করেছে। এটাই তাদের রাজনীতি। এইভাবে তারা দেশকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version