এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বারবার ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ষড়যন্ত্র করে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, জনগণের ঐক্যও কেউ রুখতে পারবে না। স্বাধীনতার ৪৭ বছরের ইতিহাসে বারবার গণতন্ত্রকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কেউ পারেনি, আর কেউ গণতন্ত্রকে হত্যা করতে পারবেও না।
শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, একাত্তরের স্মৃতি ধরে রেখে ভবিষ্যতের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। অনেক মূল্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও দেশকে এভাবে মূল্য দিতে হচ্ছে। বাঙালিকে কেউ পরাজিত করতে পারেনি, পারবেও না।
এ সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ার বিষয়ে সময় চান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। ড. কামাল হোসেনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘স্যার আমি একদিন সময় চেয়ে নিচ্ছি। আগামী ৫ নভেম্বর আমি আমার অভিমত আপনাদের জোটের নেতাদের সামনে জানিয়ে দেব। গত ৩১ অক্টোবর কাদের সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘আমি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে থাকব কিনা, সেটা ৩ নভেম্বর জানাব।’
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আমাকে যোগ দিতে বলেছেন। আমি যদি যোগ দেই, তাহলে মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করব। আর যদি আপনাদের সঙ্গে নাও থাকতে পারি, তাও জানিয়ে দেব। তবে, যেদিন প্রধানমন্ত্রী আপনাদের সঙ্গে সংলাপ করেছেন, আপনাদের বিজয় হয়ে গেছে। আমি যেখানেই থাকি না কেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের আগে মনে হয়েছিল আওয়ামী লীগ ২০ সিট পাবে। গত চার দিন ধরে আমরা দেখছি, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে ১৯ সিট পাবে। এর বেশি পেলে আমাকে সাজা দিয়েন।’
সভায় জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আমরা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব মাঠে নেমেছি। জয়লাভ করা ছাড়া ঘরে ফিরে যাব না। জনগণ যখন মাঠে নেমেছে, তখন আন্দোলনের ফসল ঘরে না তুলে ফিরে যাবে না। দাবি আদায়ে যা যা করা দরকার, তা করা হবে।’
আ স ম রব বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হলে, নিরপেক্ষ সরকার সৃষ্টি না হলে, তার জন্য নির্বাচন না হলে এর দায়দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর সরকারকে বহন করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনার সঙ্গে সংলাপ করে আসার পর আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আপনার সরকার যদি ফাঁসির আসামিকে বিদেশে পাঠাতে পারে, তাহলে কেন রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে পারবে না?
বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, দেশ ও জাতির সংকট নিরসনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট সফল হবে বলে আশা করি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধী জোট থেকে যারা সংলাপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা অতীতে বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামে সফল হয়েছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে জনতার পক্ষ নিয়ে বিজয়ী হওয়ার নজির স্থাপন করেছেন তারা।
গণভবনে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপ উপলক্ষে ডিনারের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার ‘ছোটলোকি’ করে এই ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, অদ্ভুত বিষয়, আমরা গণভবনে সংলাপ করছি, সেখানে কোনো সাংবাদিক ছিল না। কিন্তু খাওয়ার ছবি বের হল কী করে? কোনো ছবি বাইরে যাওয়ার কথা নয়। ফেসবুকে ছবি গেল কী করে?
বি. চৌধুরী এলেন না : এদিকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভায় বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক বি. চৌধুরী আসেননি। এ আলোচনা সভায় বি. চৌধুরীর যোগ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আসেননি। সভার একপর্যায়ে কাদের সিদ্দিকী জানান, বি. চৌধুরীর এই সভায় আসার কথা ছিল। গতকালও তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি তখনও বলেছিলেন আসবেন। কিন্তু আজ যখন তিনি শুনলেন যে এই সভায় ড. কামাল হোসেন থাকবেন, তখন তিনি না আসার সিদ্ধান্ত নেন। কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি বি, চৌধুরীর মঙ্গল কামনা করছি, তার দীর্ঘায়ু কামনা করি, তার শুভবুদ্ধির উদয় কামনা করছি।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নাসরিন সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান খোকা, ইকবাল সিদ্দিকী।