এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসকে বরখাস্ত করা নিয়ে তোলপাড় চলছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে। বুধবার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তাকে বরখাস্ত করেন। কিন্তু কেন? তা নিয়েই আলোচনা-সমালোচনা। বিরোধী দল ডেমোক্রেট নেতারা তীব্র ভাষায় ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। দলটির সিনেট নেতা চাক শুমার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট আসলে এর মধ্যদিয়ে কিছু লুকানোর চেষ্টা করছেন। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেট নেতা ন্যান্সি পেলোসি রাশিয়া কানেকশন নিয়ে স্পেশ্যাল কাউন্সেলর রবার্ট মুয়েলারের তদন্তকে ছোট করা ও তার ইতি টানার জন্য এটা হলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আরেকটি ভয়াবহ পদক্ষেপ। সমালোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

তিনি পদত্যাগ করার পর বুধবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইট করেছেন। তাতে ট্রাম্প বলেছেন, আপনার কাজের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস। আপনার শুভ কামনা করি। এ ছাড়া ট্রাম্প ঘোষণা দেন তিনি জেফ সেশনসের পদে অস্থায়ীভিত্তিতে বসাবেন তার চিফ অব স্টাফ ম্যাথিউ হুইটেকারকে। এই হুইটেকার রাশিয়া কানেকশন ইস্যুতে তদন্তের কড়া সমালোচক, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে যায়। প্রেসিডেন্টের নির্দেশ পাওয়ার পর জেফ সেশনস তার পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ডিয়ার মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আপনার অনুরোধে আমি পদত্যাগপত্র জমা দিলাম। তবে এই চিঠিতে কোনো তারিখের উল্লেখ নেই। জেফ সেশনস ওই পত্রে আরো উল্লেখ করেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল থাকাকালে আমি আইনের শাসন পুনঃস্থাপিত করেছি এবং তা সমুন্নত রেখেছি। এটাই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া সেশনস ওই চিঠিতে প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান। হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তার মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ জন কেলি বুধবার ডেকে নেন জেফ সেশনসকে। তারপর মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ট্রাম্প।
কেন সেশনসকে বরখাস্ত করা হলো
২০১৭ সালের মার্চ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে। তা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন জেফ সেশনস। তিনি আলাবামা থেকে নির্বাচিত সাবেক সিনেটর। ওই তদন্ত থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে আনার পর বারবার প্রেসিডেন্টের সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছেন জেফ সেশনস। অন্যদিকে আইন মন্ত্রণালয় রাশিয়া কানেকশন নিয়ে তদন্তে নিয়োগ দিয়েছে স্পেশ্যাল কাউন্সেলর রবার্ট মুয়েলারকে। আইন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত তদন্তে এ পর্যন্ত ট্রাম্পের বেশ কিছু সহযোগীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ বেরিয়ে এসেছে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, (রাশিয়া তদন্ত থেকে) নিজেকে সরিয়ে নেয়া জেফ সেশনের জন্য কখনোই উচিত হয়নি। যদি তিনি এভাবে নিজেকে সরিয়ে নেবেন এবং তা আমাকে আগে জানাতেন তাহলে তার ওই পদে আমি অন্য কাউকে বসাতাম। নির্বাচনের আগে রাশিয়ান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছিলেন জেফ সেশনস। এমন অভিযোগ আনে ডেমোক্রেটরা। এমন অভিযোগের পর সিনেটে শুনানি হয়। সেই শুনানিতে তিনি রাশিয়া কানেকশন নিয়ে তদন্ত থেকে নিজেকে স্বেচ্ছায় সরিয়ে নেন। পরে জেফ সেশনস বলেছেন, রাশিয়ান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ওই বৈঠকের কথা তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন। তাই তাকে বারবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘অত্যন্ত দুর্বল’ এবং মর্যাদাহানিকর বলে আখ্যায়িত করেন। তাকে সরিয়ে দেয়ায় এখন ট্রাম্প চাইলেই মুয়েলারকে অপসারণ করতে পারবেন। ২০১৭ সালের মে মাসে মুয়েলারকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্তের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে ট্রাম্প কী রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে চলমান তদন্ত বন্ধ করে দিতে চাইছেন?

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version