এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জয়পুরহাট শহরের আরামনগর এলাকায় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগে একই পরিবারের ৮ জন মারা গেছেন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে রাতেই ৩ জন এবং ঢাকা নেয়ার পথে বাকি ৫ জনের মৃত্যু হয়। বুধবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন- আরামনগর এলাকার দুলাল হোসেন ও তার স্ত্রী মোমেনা বেগম, তার ছেলে মুমিন হোসেন, স্ত্রী পরিনা, মেয়ে বৃষ্টি, হাসি, খুশি ও ছেলে নুর। এদের মধ্যে রাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মোমেনা, ছেলে মোমিন এবং মোমিনের মেয়ে বৃষ্টি। বাকিরা ঢাকায় যাওয়ার পথে মারা যান। এদের মধ্যে বৃষ্টি জেএসসি পরীক্ষার্থী আর হাসি, খুশি সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
নিহত দুলালের ছোট ভাই জাকির হোসেন ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো বিষয় নয়।

খবর পেয়ে তিনি বাড়িতে ছুটে আসেন এবং সেখানে তিনজনের লাশ দেখে মর্মাহত হন। পরে হাসপাতালে ভাই ও নাতনিদের দেখতে যান। পরিবারের সকলের মৃত্যুতে তিনি ছাড়া ওই পরিবারের আর কেউ নেই বলে জানান।
স্থানীয় অনেক উদ্ধারকারী ঘটনাস্থলে গিয়ে চেষ্টা করেও তাদের বাঁচাতে পারেনি। এদের একজন জানান, বাড়ির ভেতর থেকে আগুনের লেলিহান শিখা বাইরে আসছিল। আগুনের কারণে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাদের অভিযোগ ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে এলে এত ক্ষতি হতো না।

জয়পুরহাট ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম জানান, রাত ৯.৪০ মিনিটের সময় আরামনগরে দুলাল হোসেনের বাড়িতে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন তার আগেই স্থানীয়রা ৫ জনকে উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করায়। এ সময় ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে ৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তাদের ধারণা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে।
পুলিশ সুপার রশিদুল হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে খোঁজখবর নেয়। তিনি জানান, এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়কে প্রধান করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩ দিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা কোথাও কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো নয়। তিনি এলাকাবাসীকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেন।

এদিকে আগুন লাগা বাড়িতে সরজমিনে দেখা গেছে, বাড়িতে দুটি কোরআন শরীফ ছাড়া অবশিষ্ট কোনো কিছু বাকি নেই পোড়ার। বাড়িটি সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে।
ঘটনার পর এলাকায় শোক নেমে আসে। রাত থেকেই হাজার হাজার উৎসুক দর্শক সেখানে ভিড় করতে থাকে। বৃহস্পতিবার জোহরের পর স্থানীয় শহীদ জিয়া কলেজ মাঠে তাদের জানাজা শেষে সরকারি কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি নেয়া হয়।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version