এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ফের কারাগারে নেয়া হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে পুলিশের একটি কালো এসইউভি গাড়িতে করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে তাকে পুরান ঢাকায় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্থাপিত আদালতে হাজির করা হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। নাইকো মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি হয় সেখানে। শুনানি চলাকালে খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনার নামেও এ মামলা ছিল। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আদালতে হাজির করার দাবি জানান।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শাহবাগে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল এবং নাজিমুদ্দিন রোডে কারাগার এলাকায় নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা। খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা যথেষ্ট স্থিতিশীল রয়েছে। এদিকে বিএসএমএমইউ’র অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. নকুল কুমার দত্ত জানান, খালেদা জিয়ার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, চিকিৎসকদের ছাড়পত্র ছাড়াই খালেদাকে জোর করে কারাগারে নেয়া হয়েছে। এদিকে, আদালতকক্ষ থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় খালেদা জিয়া মিনিট খানেক বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কথা বলেন। একটি সূত্রে জানা গেছে, এসময় নির্বাচন, আন্দোলন এবং সংলাপ প্রসঙ্গে তাদের মধ্যে বার্তা মিনিময় হয়। খালেদা জিয়া ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

আদালতে খালেদার দেড় ঘণ্টা : নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৪ই নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। ঢাকার নবম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. মাহমুদুল কবির গতকাল আংশিক শুনানি নিয়ে এ দিন ধার্য করেন। বৃহস্পতিবার নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল। এ মামলায় খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে হাজির করা হয়। শুনানির একপর্যায়ে আদালতের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) নামেও তো এই মামলা ছিল। আমি যদি আদালতে আসতে পারি, তাহলে তাকেও এখানে হাজির করা উচিত। একজনকে রক্ষা করবেন আরেকজনকে বলি দেবেন এটা তো হয় না।’ বিচারক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মামলার অংশ নন। কাজেই তাকে এখানে আনার প্রশ্ন উঠছে না।’ গতকাল বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের খালেদা জিয়াকে কারাগারের ওই আদালতের এজলাসে আনা হয়। দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত প্রায় ১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট হুইল চেয়ারে বসে আদালতের কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়া। শুনানির একপর্যায়ে আদালতের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ। বসে থাকতে পারছি না।’ পরে তার আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৪ই নভেম্বর (বুধবার) পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন আদালতের বিচারক। খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া শুনানি করেন। এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে ৩০ মিনিট সাক্ষাৎ করতে আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবী ও মির্জা ফখরুল। তবে, আদালতের বিচারক এ আবেদনে সাড়া না দিয়ে জেল কোড অনুযায়ী সাক্ষাৎ করতে বলেন। এদিকে নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারকাজ পরিত্যক্ত কারাগারের ভেতরে অস্থায়ী এজলাসে চালানোর বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অবহিত করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। আর মেডিকেল বোর্ডের ছাড়পত্র ছাড়াই খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়েছে অভিযোগ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতালের চিকিৎসা শেষ না করেই আবারো কারাগারে পাঠিয়েছে। অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়া আদালতে যে দাবি করেছেন সেটি সঠিক নয়। আগের সরকার যে মেমোরেন্ডাম অব আন্ডার স্ট্যান্ডিং করেছিল পরে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া তেমনটা করেননি বলে তার বিরুদ্ধে এই মামলা হয়েছে। দুই মামলার প্রেক্ষাপট ভিন্ন।

বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে হুইল চেয়ারে করে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়। হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি পরিহিত খালেদা জিয়ার ঊর্ধ্বাঙ্গ পর্যন্ত একটি সাদা চাদরে ঢাকা ছিল। হুইল চেয়ারে একটি সাদা রঙের বালিশে ঠেস দিয়ে বসেছিলেন তিনি। পায়ে ছিল ঘিয়ে রঙের ফোমের জুতো। দেড় ঘণ্টার বেশি সময় আদালতে অবস্থান করা খালেদা জিয়া কিছুক্ষণ পর পর কাঁপছিলেন। বেশিরভাগ সময় ছিলেন চোখ বুজে। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও গৃহকর্মী ফাতেমা একটু পর পর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও কোনো সমস্যা আছে কি-না তার খোঁজ নিচ্ছিলেন। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে শুনানি মুলতবি ও চালিয়ে যাওয়া নিয়ে মওদুদ আহমদ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল একাধিকবার তর্কে জড়ান।

এ মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে গতকাল আত্মপক্ষ সমর্থন করে আংশিক বক্তব্য দেন। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বিচারকের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এই মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধাীন রয়েছে। ইতিমধ্যে মামলার ১১ জন আসামির মধ্যে ৯ জনের চার্জ শুনানি শেষ হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া ও মওদুদ আহমদের চার্জ শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই মামলা বকশীবাজারের আদালতে চলছিল। আজকেই প্রথম এই মামলাটি এই আদালতে আনা হয়েছে। দু’জনের শুনানি শেষ করে আপনি (বিচারক) পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য রাখতে পারেন। আর এই মামলার কোনো বিষয় নিয়ে উচ্চ আদালতের কোনো স্থগিতাদেশ নেই।’

এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লা মিয়া বলেন, ‘এই আদালতে যে এই মামলার বিচারকাজ চলবে সে বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে আমরা গেজেটের কপি পেয়েছি। এর আগ পর্যন্ত আমরা অবহিত ছিলাম না। ওই সময় আমার চেম্বারের দরজায় এটি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও আমরা এসেছি। আর এই আদালতের পরিবেশ আপনি (বিচারক) দেখতেই পাচ্ছেন। কোন কারণে এই মামলার বিচারকাজ এখানে আনা হলো তা বোধগম্য নয়।’ এক পর্যায়ে শুনানি মুলতবির আর্জি জানান তিনি।

এ সময় মওদুদ আহমদ এই মামলার একটি বিষয় উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে উল্লেখ করে শুনানি মুলতবির আর্জি জানান।

এ সময় মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘মওদুদ আহমদ দীর্ঘদিন ধরে আমাদের অপেক্ষায় রেখেছেন। চার্জ শুনানি বাধাগ্রস্ত করার জন্য তিনি এ মামলার সকল বিষয় চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোন আদেশ আনতে পারেননি। শুনানি শুরুর জন্য আমি আবেদন করছি।’

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমি আজ প্রথম এই আদালতে এলাম। আদালতের পরিবেশ দেখে আমি হতবাক হয়েছি। আপনাকেও (বিচারক) এই পরিবেশে দেখে আমার খারাপ লাগছে।’

বিচারক বলেন, ‘এটিতো আরেকটি বিষয়। আপনি পিপি’র বক্তব্যের জবাব দিন।’

মওদুদ বলেন, ‘শুনানি করার মতো যথেষ্ট নথিপত্র আমার কাছে নেই। আমি তা পাইনি। যদি কাগজপত্র না আসে তাহলে কিসের ওপর ভিত্তি করে আমি শুনানি করবো?’

বিচারক বলেন, ‘আপনি এর আগের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন কোনো স্থগিতাদেশ আনতে পারেননি। আপনার শুনানি মুলতবি করার আবেদন না-মঞ্জুর করা হলো। আপনি চার্জ শুনানি শুরু করুন। আপনি যত তাড়াতাড়ি শুরু করবেন বেগম খালেদা জিয়া তত তাড়াতাড়ি যেতে পারবেন।’

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘খালেদা জিয়া কি পরিমাণ অসুস্থ অবস্থায় এখানে বসে আছেন আপনি তা দেখতেই পাচ্ছেন। তাকে হাসপাতাল থেকে এখানে আনা হয়েছে। হাসপাতালে যথেষ্ট ট্রিটমেন্ট তিনি পাননি। আমরা রাজনৈতিকভাবে এর প্রতিবাদ করবো।’ এক পর্যায়ে তিনি এজাহার ও অভিযোগপত্র থেকে বক্তব্য পড়ে শোনান। শুনানিকালে বিচারকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মামলায় বলা হয়েছে আমার মতামত ছিল। আমার একটি ল ফার্ম রয়েছে। সেখানে ৫ জন আইনজীবী রয়েছেন। তাদের মধ্যে মতামত হতেই পারে। কিন্তু এই মতামত তো ক্রিমিনাল অফেন্সের মধ্যে পড়ে না।’ তিনি বলেন, ‘সব বিবেচনা করে আপনি (বিচারক) যদি মনে করেন আমাকে ডিসচার্জ করবেন তাহলে করতে পারেন। আমি তো এখানে আসামি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু আইন আমাকে কিছু অধিকার দিয়েছে।’

শুনানির একপর্যায়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) নামেও তো এই মামলা ছিল। ওনারা শুরু করেছিলেন আমি অনুমোদন দিয়েছিলাম। আমি তো শুধু এর আগের ধারাবাহিকতা রক্ষা রেখেছি। তাই আদালতে যদি আমি আসি, তাহলে তাকেও এখানে হাজির করা উচিত। তিনিও এসে শুনুন।’ আদালতের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘একজনকে রক্ষা করবেন, আরেকজনকে বলি দেবেন, এটি তো হতে পারে না।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘তখন যদি অনুমোদন না দিতাম তাহলে এখন হয়তো বলা হতো কেন অনুমোদন দিলাম না।’

এ সময় আদালতের বিচারক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মামলার অংশ নন। কাজেই তাকে এখানে হাজির করার কোনো প্রশ্ন উঠছে না।’

হুইল চেয়ারে বসা খালেদা জিয়াকে দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে কিছুটা অস্বস্তি ও বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। আদালতের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ। বসে থাকতে পারছি না।’ এ সময় মওদুদ আহমদ শুনানি মুলতবির আর্জি জানালে তাতে আপত্তি জানান দুদকের আইনজীবী। এ নিয়ে মোশাররফ হোসেন কাজল ও মওদুদ আহমদ তর্কে জড়ান।

দুদক আইনজীবী মওদুদ আহমদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে শুনানি করছেন না। মামলার বিচারকাজকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছেন।’

জবাবে মওদুদ আহমদ বলেন, প্রত্যেকেরই অসুবিধা থাকতে পারে। আপনারও থাকতে পারে।

দুদক আইনজীবী আদালতের উদ্দেশে বলেন, ‘তিনি (মওদুদ আহমদ) শুনানি করতে অপারগ হলে আমরা ধরে নেব তিনি বক্তব্য দিতে চান না। আপনি বলেন আপনি অসুস্থ। কিন্তু দেখা যায় আপনি প্রেস কনফারেন্স করছেন।’ একপর্যায়ে বিচারক বুধবার (১৪ই নভেম্বর) পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে এজলাস ত্যাগ করেন। এর পরপরই খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

অসুস্থ খালেদা চিকিৎসকদের অনুমতি ছাড়াই কারাগারে- মির্জা ফখরুল : এদিকে সরকার প্রতিহিংসামূলকভাবে অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে চিকিৎসকদের অনুমতি ছাড়াই কারাগারে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল। গতকাল পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের বিশেষ আদালতে নাইকো মামলার শুনানি শেষে কারাফটকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়পত্র দেননি। অসুস্থ অবস্থায় তাকে কোনোমতেই কারাগারে নিয়ে যাওয়া ঠিক না। সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তাকে এই আদালতে নিয়ে এসেছে, কারগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা এই অমানবিক আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা খালেদা জিয়ার অবিলম্বে মুক্তি ও তার সুচিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি।’ এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যারা চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন তারা ছাড়পত্র দিয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। শুনেছি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে কাউকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অন্যায় ও অনিয়মতান্ত্রিক কাজ। নিয়ম হচ্ছে, যারা চিকিৎসা করেছেন তারা বলবেন, হুয়েদার সী ফিট ওর নট। তারা বলেছেন, এখনো চিকিৎসাধীন আছেন। তাকে এখনই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া সঠিক নয়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাকে দেখে আমরাও বুঝেছি তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। হুইল চেয়ারেও ঠিকমতো বসতে পারছেন না। তাকে জোর করে আদালতে বসিয়ে রেখে কষ্ট দেয়া হয়েছে। এটা অমানবিক।’ এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়নি তাকে।

হাইকোর্টকে অবহিত করলেন খালেদার আইনজীবীরা
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শেষ না করেই তাকে কারাগারে নেয়া হয়েছে অভিযোগ করে বিষয়টি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চকে অবহিত করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। গতকাল দুপুরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও প্যানেলের সদস্য ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এ বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করলে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট নিষ্পত্তি হয়ে গেছে উল্লেখ করে নতুন করে লিখিত আবেদন করতে বলেন। আদালত আইনজীবীদের বলেন, নিষ্পত্তি হওয়া বিষয় নতুন করে উন্মুক্ত করার সুযোগ বা অবকাশ নেই। আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালন হয়নি মনে করলে আদালত অবমাননার আবেদন দাখিলের সুযোগ রয়েছে। নতুন কোনো কার্যকারণ তৈরি হয়েছে মনে করলে নতুন করে আবেদন করতে হবে বলে জানান আদালত। গত ৪ঠা অক্টোবর এক আদেশে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে জরুরি ভিত্তিতে ভর্তি করে ৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সমন্বয়ে তাকে চিকিৎসা দেয়া নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের এই বেঞ্চ। ৬ই অক্টোবর খালেদাকে ওই হাসপাতালের কেবিন ব্লকে ভর্তি করা হয়।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শেষ না করেই তাকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেয়া হয়েছে অভিযোগ করে বিষয়টিকে দুঃখজনক ও আদালতের আদেশের প্রতি অবজ্ঞা বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল আদালতের নির্দেশে। তাই আদালতকে অন্তত জানানো উচিত ছিল। আমরা মনে করি এভাবে না জানানো বিচার বিভাগকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version