এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : চিকিৎসা না দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো সরকারের ভয়ঙ্কর চক্রান্ত বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। তার চিকিৎসার জন্য আদালতের নির্দেশনা ও মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশকে লঙ্ঘন করে সরকার দেশনেত্রীকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে পাঠিয়েছে। অথচ তার চিকিৎসা শুরুই হয়নি, কেবল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। আর সেই মুহূর্তে তাকে কারাগারে ফেরত পাঠানো শুধু মনুষ্যত্বহীন কাজই নয়, এটি সরকারের ভয়ঙ্কর চক্রান্ত। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভাকে কেন্দ্র করে গত ৩ দিনে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ২২০০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। গতকাল নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য ও অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার ডাক্তার ও তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য সৈয়দ আতিকুল হকের অধীনে তিনি চিকিৎসাধীন।

ডা. আতিকুল হক এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে ছুটির ছাড়পত্র দেননি। মেডিকেল বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. জলিলুর রহমান বর্তমানে দেশের বাইরে। এমতাবস্থায় সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খালেদা জিয়ার ছাড়পত্র দিতে বাধ্য করতে চাপ সৃষ্টি করেছে।

চিকিৎসা না দিয়ে কারাগারে প্রেরণ দেশনেত্রীর জীবনকে বিপন্ন করার অথবা শারীরিকভাবে চিরতরে পঙ্গু করার চক্রান্ত সরকারের কুৎসা সঞ্চারিত মনের বিকার। বিএনপি চেয়ারপারসন সুস্থ হোক, এটি বিদ্বেষপ্রবণ সরকার কখনো চায় না। রাজনীতি থেকে তাকে দূরে রাখতে লাগামছাড়া ক্রোধে এই অবৈধ শাসকগোষ্ঠী এখন তার জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এটি শেখ হাসিনার হিংস্র আচরণেরই চরম বহিঃপ্রকাশ। অহংকার, উন্মত্ততা, হিংসা ও দখলকৃত ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার নির্লজ্জ লড়াই চালাতেই বিচার বুদ্ধি হারিয়ে সরকার খালেদা জিয়ার জীবনকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকারের সৌজন্যবোধ ও হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে বলেই দেশের বিপুল জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার ওপর চালানো হচ্ছে অমানবিক নিপীড়ন। রিজভী বলেন, সরকারের পাতানো পথে বিরোধী দলকে নির্বাচন করতে বাধ্য করানোর জন্যই সরকার দেশনেত্রীকে নিয়ে নিষ্ঠুর প্রতিশোধের খেলায় মেতে উঠেছে। তার চিকিৎসা পাওয়ার অধিকারকেও কেড়ে নিয়েছে সরকার। চিকিৎসা শেষ না করেই পিজি হাসপাতাল থেকে দেশনেত্রীকে কারাগারে পাঠানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দেশনেত্রীর চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএসএমএমইউতে ভর্তি রাখতে হবে। না হয়, জনগণ আর বসে থাকবে না। দেশনেত্রীকে বিপর্যস্ত করার যেকোনো ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে এবার মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে হলেও প্রতিরোধ করবে।

রিজভী আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে সংলাপকালে কথা দিয়েছিলেন- নতুন মামলা দেয়া হবে না, গ্রেপ্তার করা হবে না এবং প্রকৃত রাজবন্দিদের মুক্তির ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের কোনো বিশ্বাস মেলেনি। বুধবারের সংলাপে প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টের বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আমিও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত তিনদিন ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের চিরুনি অভিযান চালিয়ে ছেঁকে ধরা হয়েছে তার জন্য। জেলা-মহানগরের সভাপতি থেকে শুরু করে সাবেক এমপি কেউই সরকারের গ্রেপ্তার অভিযান থেকে রেহাই পাননি।

এমনকি সমাবেশে আসা ও যাওয়ার পথে হাজারের অধিক নেতাকর্মী ও সাধারণ সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করার পর প্রথমে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে এই কথা বলে দর কষাকষি করা হয়েছে। অনেক নেতাকর্মীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েও ছাড়া হয়নি। এমন কি ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের বড় বড় গ্রুপ করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তল্লাশি ও পুলিশি হানাতে হাজার হাজার নেতাকর্মী ঘরবাড়ি ও এলাকা ছাড়া হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। রিজভী প্রশ্ন রাখেন, সংলাপ কি তাহলে চূড়ান্ত আক্রমণের পূর্বে কিছুটা সময়ক্ষেপণ। তা না হলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করার অঙ্গীকার করার পরও এত তাণ্ডব, এত পাইকারি গ্রেপ্তার! সরকার কি তাহলে প্রতারণা ফাঁদ তৈরি করেছে? প্রধানমন্ত্রী অতীতের মতো বলেন একটা, কিন্তু কাজ করেন অন্যটা।

এসময় সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হামলা-মামলার তথ্য তুলে ধরে রিজভী বলেন, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁয় পুলিশের পক্ষ থেকে বাস মালিক সমিতিকে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। কেউ যেন রাজশাহীতে ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় যোগ দিতে যাওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের গাড়িভাড়া না দেয়। ইতিমধ্যে বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত বাস ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ৬ই নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভাকে কেন্দ্র করে জনসভার আগের দিন ও জনসভার দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধীদলীয় আট শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা সোহেল রানাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পরও এখনো স্বীকার করছে না। আমি তাকে অবিলম্বে জনসমক্ষে হাজির করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version