এশিয়ান বাংলা ডেস্ক: বিরোধী মতের ওপর সৌদি কর্তৃপক্ষের নির্মম ও নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের সর্বশেষ শিকার খ্যাতনামা সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি। কনসুলেটের মতো কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কল্যাণে দ্রুতই এটা বিশ্বের নজরে পড়েছে। এর প্রতিক্রিয়াও চোখে পড়ার মতো। কিন্তু সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও তার আমিরাতি দোসর মোহাম্মদ বিন জায়েদের বোমার আঘাতে ইয়েমেনে প্রতিদিন শতশত মানুষ ছিন্নভিন্ন হচ্ছে, তা একরকম আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। টানা চার বছর সৌদি জোটের অবিরাম হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দরিদ্রতম এ দেশটি। ক্ষুধা আর দুর্ভিক্ষের কবলে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ। ক্ষেপণাস্ত্র আর বোমার পাশাপাশি ক্ষুধাকেও অস্ত্র বানানো হচ্ছে। মূলত সৌদি ও আরব আমিরাত ইয়েমেনিদের না খাইয়ে মারার কৌশল গ্রহণ করেছে।

ইয়েমেনে সৌদিপন্থী সরকার বসাতে সহিংস হামলা অব্যাহত রেখেছে সৌদি ও আরব আমিরাত। ইয়েমেন ডাকা প্রজেক্টের মতে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৮ হাজার ৫০০ বার বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলায় প্রতিনিয়তই মারা যাচ্ছে নির্দোষ বেসামরিক মানুষ। এ পর্যন্ত ১০ হাজার নাগরিককে হত্যা করেছে সৌদি-আমিরাত। আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধের প্রতি বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে রিয়াদের যে পাশবিকতা চলমান রয়েছে, তার বড় দৃষ্টান্ত ইয়েমেন। চার বছর ধরে দেশটির প্রত্যেকটি শহর বোমার আঘাতে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে। বেছে বেছে হাসপাতাল, স্কুল, বাজারে বোমা হামলা চালাচ্ছে। বাজারের দোকান পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কয়লা হয়ে গেছে খাবারের মজুদ। উচ্চমূল্যের কারণে খাবার কিনতে পারছে মানুষ। অবরোধ করা হয়েছে রাস্তাঘাট ও বন্দর। ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা নিয়ে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না ত্রাণ সংস্থাগুলোকে। এককথায়, যুদ্ধ জয়ে ‘দুর্ভিক্ষ’ অস্ত্রের ঘায়েলে কঙ্কালসার হচ্ছে সাধারণ-নিরীহ মানুষ। ওষুধ নেই, চিকিৎসা নেই, একের পর এক মহামারী। যেখানে মৃত্যুই একমাত্র মুক্তি। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ইয়েমেনিরা।

বুধবার ইয়েমেন ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ৩৫টি এনজিও দ্রুত ইয়েমেনে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এনজিওগুলো বলছে, ইয়েমেনের প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ একেবারে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এনজিওগুলো এক বিবৃতিতে বলেছে, ১ কোটি ৪০ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। এর আগে কখনও এতটা জরুরি অবস্থা ছিল না। বিবৃতিতে যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি করানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আবেদন জানানো হয়। পাশাপাশি ইয়েমেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে তার সরবরাহ বন্ধ করারও দাবি জানিয়েছে এনজিওগুলো।

ইয়েমেনের হুদাইদাহ বন্দর দিয়ে যাতে জরুরি ত্রাণ সরবরাহে বাধা দেয়া না হয়, এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার আহ্বান জানিয়েছে। ইয়েমেনের চলমান সংকটকে মনুষ্যসৃষ্ট বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনজিওগুলো। তারা বলছে, জরুরি পণ্য সরবরাহে বাধা দেয়ার কারণেই এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version