এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সারা দেশে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। দায়ের হচ্ছে নতুন নতুন মামলাও। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ধামরাইয়ে পাঁচশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয়েছে। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-

ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, ধামরাইয়ে বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও নাশকতা আইনে তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। গতকাল ধামরাই থানা পুলিশ বাদী হয়ে এসব মামলা করেন। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ধামরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন, ঢাকা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদসহ ৯১ জনের নাম উল্লেখসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মামলা করা হয়।

আর মামলায় পুলিশ ধামরাইয়ের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গতকাল পর্যন্ত বিএনপির ১২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। এরা হচ্ছে- সুতিপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফটো মিয়া, সানোড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফি উদ্দিন, উপজেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ফারুক হোসেন, পৌর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ নাঈম, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কালামপুর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম কন্ঠু, পৌর ছাত্রদল নেতা শাহীন মাহমুদ, আবু তাহের, আনোয়ার হোসেনসহ ১২ জন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, পুলিশি গ্রেপ্তারের ভয়ে চরম আতঙ্কে আছি। এ বিষয়ে ধামরাই থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, নাশকতার পরিকল্পনায় জড়িত থাকায় বিএনপির ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, বরগুনার বামনা উপজেলার তিন বিএনপি নেতাকে বৃহস্পতিবার রাতে আটক করেছে বামনা থানা পুলিশ। বিএনপি নেতারা হলেন- উপজেলা বিএনপির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো. খোকন মিয়া, যুবদল নেতা কলাগাছিয়ার মো. জামাল আকন ও কাটাখালী নিবাসী যুবদল নেতা মো. জামাল হোসেন। এদের প্রত্যেককে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা যায়।
বামনা থানার অফিসার ইনচার্জ জিএম শাহনেওয়াজ জানান ইতিপূর্বে সংগঠিত নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা যুবদলের সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মদ ঝাড়ু (৪৮)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ বিস্ফোরক ও নাশকতা ঘটানোর চেষ্টার অভিযোগে ১লা সেপ্টেম্বর দায়ের করা ১নং মামলায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার মতিগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে, গতকাল বিকাল ৩টায় মৌলভীবাজার জেলা যুবদলের সহসভাপতি কাজী আব্দুল গফুর (৪৬)কে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিরাইপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে জেলা বিএনপির সহসভাপতি বশিরুল আলম চাঁদসহ ২৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। জেলা পুলিশ কন্টোলরুম থেকে এ তথ্য জানানো হয়। আটকদের মধ্যে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি বশিরুল আলম চাঁদসহ মডেল থানায় দুইজন, মিরপুর থানায় চারজন, ভেড়ামারা থানায় তিনজন, খোকসা থানায় ছয়জন, দৌলতপুর থানায় পাঁচজন, কুমারখালী থানায় ১জন এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় চারজন। তারা সবাই বিভিন্ন নাশকতার মামলার আসামি বলে জানায় পুলিশ।

চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, নাশকতার অভিযোগে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বিএনপি ও জামায়াতের ছয় নেতাকর্মীকে আটক করেছে চান্দিনা থানা পুলিশ ও কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার চান্দিনা থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের পৃথক অভিযানে তাদের আটক করা হয়েছে। আটকরা হলেন- চান্দিনা উপজেলা বিএনপি সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যান (৬৫), রারিরচরের কাঠেরপুল এলাকার ইউনুছ মিয়ার ছেলে পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন (৩৫), উপজেলার হারং গ্রামের এলাহী বক্সের ছেলে পৌর বিএনপি সহসভাপতি সফিকুল ইসলাম (৫৫), শ্রীমন্তপুর গ্রামের মৃত আকমত আলীর ছেলে উপজেলা ছাত্রদল সহসাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম (২৯), একই গ্রামের জামায়াত সমর্থক ওসমান আলীর ছেলে সফিকুল ইসলাম (৪৫), বেলাশহর গ্রামের মৃত সুন্দর আলীর ছেলে ৪নং ওয়ার্ড বিএনপি সহসভাপতি ফরিদ উদ্দিন (৫০)। তাদের মধ্যে বুধবার রাতে কুমিল্লা রামঘাটলা এলাকা থেকে পৌর বিএনপি সহসভাপতি সফিকুল ইসলামকে আটক করে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ, একই রাতে শ্রীমন্তপুর স্কুল মাঠ থেকে মাজহারুল ইসলাম, সফিকুল ইসলাম, ফরিদ উদ্দিনকে আটক করে চান্দিনা থানা পুলিশ এবং বৃহস্পতিবার বিকালে চান্দিনা এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা রমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যান ও দেলোয়ার হোসেনকে আটক করে ডিবি পুলিশ।

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার শেরপুরে নাশকতার মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার পৌরশহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রাতভর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- শেরপুর পৌর যুবদলের সভাপতি ও শহরের শ্রীরামপুর পাড়ার মৃত গাজীউর রহমানের ছেলে মো. মঞ্জুরুল আলম বাপ্পী (৪৫), পোদ্দারপাড়া এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন (৩২), জগন্নাথ পাড়ার আব্দুস সাত্তারের ছেলে তাইফুর রহমান পাভেল (৩৮), একই এলাকার মোজাহার আলীর ছেলে মো. কাওসার (৩৮), টাউন কলোনীপাড়া এলাকার ফরিদুল ইসলামের ছেলে আল আমিন (২৮), আতাউর রহমানের ছেলে আশিকুর রহমান আশিক (৩০), উপজেলার হলদীবাড়ি গ্রামের বশির উদ্দিনের ছেলে বিএনপি নেতা ইয়াকুব আলী রাঙা (৫৬), গোসাইবাড়ী বটতলার ওমর আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম পাশা (৩৫), খামারকান্দি গ্রামের মোসলেম উদ্দীনের ছেলে ইয়াহিয়া (২৫), মির্জাপুর দক্ষিণ পাড়ার ইসাহাক আলীর ছেলে আব্দুল মুন্নাফ (২৬), ঘৌরদৌড় গ্রামের আব্দুল মালেক ফকিরের ছেলে আব্দুর রউফ বাচ্চু ফকির (৫০) ও জামায়াত নেতা শেরুয়া দহপাড়া এলাকার রইচ উদ্দিনের ছেলে সামছুল হক (৪৫), শাহনগর গ্রামের রোস্তম আলীর ছেলে শাহাদত হোসেন (৩৮)। শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) বুলবুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গেল ৫ই সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামস্থ বিএনপির আঞ্চলিক কার্যালয়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক করছিলেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে পুলিশ খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায়।

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, খুলনা বিএনপি দাবি করেছে নগরীজুড়ে পুলিশের গণগ্রেপ্তার অভিযানে নতুন করে গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আরো চার নেতাকর্মী। গ্রেপ্তাররা হলেন- আনিসুর রহমান, আবু হানিফ সুমন, শাহাজী কামাল টিপু ও মোজাম্মেল হোসেন। এ ছাড়া পুলিশের তল্লাশি অভিযান অব্যাহত থাকায় বিরোধী মতাদর্শের নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর এলাকার একটি বাড়িতে গোপন বৈঠক করার সময় জামায়াতের ৮ নেত্রীকে আটক করেছে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ। এসময় তাদের কাছ হতে জেহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ হতে জানানো হয়েছে। আটককৃতরা হল- ধাইনগর ইউনিয়নের মহিষপুর গ্রামের শিরিন আক্তার (৫০), রাহেলা বেগম (৪০), রজিনা বেগম (৩০), আজিজা বেগম (২৩),তাহেরা বেগম (৪৫), শুকতারা বেগম (৪২), সাকেরা বেগম (৪৫) ও নাজমা বেগম (২৫)। শিবগঞ্জ থানার ওসি শিকদার মো.মশিউর রহমান জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় মহিষপুর এলাকার একটি বাড়িতে নাশকতার উদ্দেশে জামায়াত নেত্রীরা জড়ো হয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিততে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version