এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জোটবদ্ধভাবে একাদশ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। রোববার বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের শরিক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, জনগণের প্রতি আস্থা আছে বলে আমরা ২০ দলীয় জোট প্রতিকূলতার মধ্যেও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেও নির্বাচনী সমঝোতা হবে ২০ দলের। নির্বাচনের তফসিল এক মাস পেছানোর দাবিও জানান তিনি।
অলি আহমদ বলেন, আমরা বিশ্বাস করি সরকারের দুর্নীতি, অনাচার, অত্যাচার এবং সর্বোপরি তিস্তার পানি আনতে না পারাসহ রাষ্ট্রীয় স্বার্থরক্ষায় সীমাহীন ব্যর্থতার প্রতিবাদ ব্যালটের মাধ্যমে দেয়ার জন্য জনগণকে সুযোগ দেয়া প্রয়োজন। আর সে কারণেই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব- যাতে করে জনগণ তাদের ক্ষোভ, বেদনা ও প্রতিবাদ প্রকাশের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ পায়।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া জামিনে মুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণে সরকার নতুন কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। অবিলম্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করারও দাবি জানান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে সাংবিধানিকভাবে প্রাপ্ত দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে পালন করবে। সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের হয়রানি করবে না এবং গায়েবি ও মিথ্যা মামলায় আটকদের মুক্তি দেবে। নতুন করে কাউকে গ্রেফতার কিংবা হয়রানি করবে না। বিশ্বব্যাপী প্রত্যাখ্যাত ইভিএম মেশিন ব্যবহার করবে না। নির্বাচনের ৭ দিন আগে থেকে এবং নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার ২ দিন পর পর্যন্ত সব নির্বাচনী এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করবে। এর সবকিছুই দেশের বর্তমান সংবিধানের আওতাতেই করা যায়। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনকে যেহেতু আমরা যুক্তিযুক্ত মনে করি, সেহেতু সেই দাবিতেও আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
অলি আহমদ বলেন, সবাই এসব দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করলেও বিনা ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী সরকার আমাদের দাবি পূরণে আন্তরিক ছিল না। সংলাপেও তা মানেনি। নতুন মামলা না দেয়া এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নামে দেয়া গায়েবি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট আশ্বাসের পর আরও বেশি করে মামলা দেয়া হয়েছে ও হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়া হয়নি। এমনকি ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতাদের নামে দেয়া গায়েবি ও মিথ্যা মামলায় হাইকোর্ট জামিন দেয়ার পর সরকারের আইনজীবীরা চেম্বার জজ আদালতে ও আপিল বিভাগে ওইসব মামলার জামিন বাতিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, অনুগত নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে দেশের সব বিরোধী দলের আবেদন ও যৌক্তিক পরামর্শ অগ্রাহ্য করে একতরফাভাবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। যাতে বিরোধী দলগুলো প্রস্তুতি ও প্রচারণার সময় কম পায়। কারণ সরকারি দল কয়েক মাস ধরে নির্বাচনী বিধিমালাকে অমান্য করে সরকারি ব্যয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে প্রকাশ্যে তাদের দলীয় প্রতীকে ভোট চেয়ে জনসভা করছেন। সারা দেশে নির্বাচনী প্রতীকসহ তাদের প্রচারণার পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন শোভা পেলেও নির্বাচন কমিশন এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা এখন গ্রহণ, এসব থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান তো দূরের কথা- বরং ‘নীরব দর্শক’র ভূমিকা পালন করেছে।
এলডিপি সভাপতি বলেন, আইন ও যুক্তিগ্রাহ্য কোনো প্রমাণ ছাড়াই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দ্রুত সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করার জন্য কারাগারে আদালত বসানো হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও চিকিৎসা সম্পন্ন হওয়ার আগেই দেশনেত্রীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হুইল চেয়ারে করে পুনরায় পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এটি অনৈতিক ও অমানবিক। ৩ বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং ৭৩ বছর বয়স্ক একজন অসুস্থ মানুষের প্রতি সরকারের এ ধরনের নিষ্ঠুর আচরণে দেশবাসী ক্ষুব্ধ ও হতবাক।
তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে শুধু দলীয় সরকারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা যথা ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার ও সব জেলার ডিসিদের রিটার্নিং অফিসার এবং আমাদের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী ২৭২টি আসনে ৫০৮ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসারের মধ্যে মাত্র ২৯ জন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছেন। এদের বেশির ভাগই থানা নির্বাচনী কর্মকর্তা। অর্থাৎ সব থানা, জেলা ও বিভাগে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা রয়েছেন এবং তারা অন্যান্য নির্বাচনে রিটানিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা সমমর্যাদার অন্যান্য কর্মকর্তারাও প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে দলীয় প্রভাবমুক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করবেন- এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে। জনগণের মনে এই প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, নির্বাচন কমিশন তাদের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিলেন কেন? এর বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা এবং এর ফলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সরকারি প্রভাব বাড়বে কিনা- তা নিয়ে জনগণের মনে প্রশ্ন রয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছে সুস্পষ্ট ও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দাবি করছি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ২৩ ডিসেম্বর। এর একদিন পরই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন ২৫ ডিসেম্বর। এর কয়েকদিন আগে থেকেই এই ধর্মের অনুসারীরা উৎসব পালনে ব্যস্ত থাকবে। দেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোর বেশির ভাগই এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নির্বাচনে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারবে না। নির্বাচনে কারচুপি করার কুচিন্তা না থাকলে এমন দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হতো না। আমরা এই কারণসহ অন্যান্য অনিবার্য কারণে নির্বাচনী তফসিল পরিবর্তন করে অনন্ত এক মাস নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবি করছি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক আবদুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের এমএ রকীব, খেলাফত মজলিসের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, এনডিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, পিপিবির রিটা রহমান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা ও বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডল।