এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়ায় সব দলকে স্বাগত জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন- অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করাই সরকারের লক্ষ্য। জনগণ যাদের ভোট দেবে তারাই বিজয়ী হবে।

রোববার বিকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এদিকে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, ১৪ দল জোটবদ্ধভাবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার বুধবার।

রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্র্ডের সভায় প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই মিলে নির্বাচন করব। জনগণ যাকে চাইবে তাকে ভোট দেবে- সেটাই আমরা করব। সবাই যেহেতু নির্বাচন করবে সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ ও স্বাগত জানাচ্ছি।

বৈঠকে ১ থেকে ৭ নভেম্বর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ৭০টি রাজনৈতিক দলের ২৩৪ নেতা সংলাপে অংশ নিয়েছেন, যা ২০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলেছে। তিনি বলেন, নির্বাচনটা কিভাবে করব এবং নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সে আলোচনা হয়েছে। অনেকে অনেক দাবি-দাওয়া করেছিলেন। বেশ কিছু আমরা মেনে নেই। তাছাড়া নির্বাচনটা যেন অংশগ্রহণমূলক হতে পারে, সবাই যেন নির্বাচন করার সুযোগ পায় সেদিকে আমরা দৃষ্টি রাখব, সে কথা আমরা দিয়েছি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। তার দল সব সময় চায় উন্নয়নের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকুক।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম আগ্রহী সবাইকে দেয়া হলেও প্রার্থী নির্ধারণে ‘উপযুক্ত ব্যক্তি’কে বাছাইয়ের চেষ্টা থাকবে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সময় ৩০০ আসনেই নিজেদের প্রার্থী ঠিক করা হলেও পরে জোট প্রার্থীদের জন্য আসন ছেড়ে দেয়া হয়। দলীয় প্রার্থী ঠিক করতে পরে আরও সভা হবে বলে জানান তিনি।

শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে উপিস্থত ছিলেন- দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, রশিদুল আলম ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। অসুস্থতার জন্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও ড. আলাউদ্দীন সভায় উপস্থিত হতে পারেননি। এছাড়া কাজী জাফরুল্লাহ বিদেশে রয়েছেন।

নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে ১৪ দল : এদিকে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে ১৪ দল জোটবদ্ধভাবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে। সেখানে জোট শরিকদের বাইরেও কিছু দলের নাম রয়েছে। জাতীয় পার্টি মহাজোটগত নির্বাচন করলে ও আসন ভাগাভাগি হলেও তারা নিজেদের প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে ভোটে যাবে। এছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন করলে তাদের সঙ্গেও অ্যালায়েন্স হতে পারে। যুক্তফ্রন্ট যুক্ত হলে মহাজোটের কলেবর বাড়বে। এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে বৈঠকও হচ্ছে। কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার সময় সীমা শেষ হচ্ছে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায়। বুধবার বেলা ১১টায় দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সংসদীয় বোর্ড এ সাক্ষাৎকার নেবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ মহাজোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, মেরুকরণের পালা এখনও শেষ হয়নি। মেরুকরণের পালা শেষ হলেই আমরা অ্যালায়েন্সের পালায় যেতে পারি। সেটা ভেতরে ভেতরে আমাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। আমরা এক মুহূর্তের জন্যেও থেমে নেই। এ পর্যন্ত ৭০-৭৫টি দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সবাই জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে- তবে জোটবদ্ধভাবে সবাই তো আর নৌকা প্রতীকে করবে না। ১৪ দল নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে। তবে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আমাদের একটা অ্যালায়েন্স হতে পারে। সেটা হলে তারা তাদের নিজেদের প্রতীকেই নির্বাচন করবে।

আসন বণ্টন নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিষ্কার কথা জোটকে বলে দেয়া হয়েছে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ও উইনেবল প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। কারণ আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে হবে। তাদেরকে বা বিএনপিকে দল হিসেবে দুর্বল ভাবার সুযোগ নেই। ইলেকশন করব জেতার জন্য। প্রার্থী যারা উইনেবল এমন সম্ভাব্যদের নিয়েই আমরা জোটের প্রার্থী ঘোষণা করব। আমরা প্রত্যেকটি আসনে সার্ভে করেছি। বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা ও পেশাজীবীদের নিয়ে একাধিক টিম করা হয়েছে। তারাই সার্ভে করেছে। সেসব রিপোর্ট এখন দেখা হচ্ছে। এসব দেখে যাদের বিজয়ী হয়ে আসার ক্ষমতা আছে, তাদেরকেই মনোনয়ন দেয়া হবে।

এ সময় দলের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version