এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। নির্বাচনী মাঠে নামছেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। অরাজনৈতিক এ সংগঠনে ছায়ায় থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রধান দুই জোটের হয়ে নির্বাচনে লড়তে চান। আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দল নিয়ে ২০১০ সালের মার্চ মাসের গঠিত হয় হেফাজত ইসলাম।

এর মধ্যে ৭টি দল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। দলগুলো হচ্ছে- ইসলামী ঐক্যজোট, নেজামে ইসলাম পার্টি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, খেলাফতে আন্দোলন, খেলাফতে মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস ও খেলাফত ইসলামী। এসব দলের বেশিরভাগ শীর্ষ হেফাজতের নেতৃত্বে রয়েছেন। তবে, কওমি মাদরাসাভিত্তিক এ সংগঠন হেফাজত শুরু থেকেই দাবি করছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাদের রাজনৈতিক অভিলাষও নেই।

কওমির সনদকে স্বীকৃতির শোকরানা মাহফিলে সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসে হেফাজত আমির আহমদ শফী বলেন, রাজনীতির সঙ্গে হেফাজতের সংশ্লিষ্টতা নেই।

ঈমান, আকিদা, দ্বীন রক্ষাই হেফাজতের কাজ। তবে হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রায় সবাই কোনো না কোনো ধর্মভিত্তিক দলের প্রধান। এরমধ্যে খেলাফতে ইসলামী ও নেজামে ইসলাম পার্টি ইসলামী ঐক্যজোটের শরিক দল। ইসলামী ঐক্যজোট ১৭ বছর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে ছিল। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের বিএনপির জোট ছাড়ে তারা। এরপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রকাশ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন হলেও প্রকাশ্যে কেউ বলতে নারাজ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে ২৭৮ জন প্রার্থীর তালিকা করেছে ইসলামী ঐক্যজোট। তবে শেষ পর্যন্ত ১০০টি আসনে প্রার্থী দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। রোববার থেকে ইসলামি ঐক্যজোটের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী নরসিংদী-৩ ও ঢাকা-৫ আসনে, মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ চট্টগ্রাম-৭ আসনে, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আলতাফ হোসাইন কুমিল্লা-১ আসনে প্রার্থী হবেন।

দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, আমরা স্বতন্ত্রভাবেই নির্বাচন করবো। কোনো জোটে যাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। নির্বাচনী পরিবেশ আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করছি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলটির মূল দাবি ২-৩টি আসন। দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হাসানাত আমিনীর জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, মহাসচিব মুফতি মুহম্মদ ফয়জুল্লাহর জন্য চট্টগ্রাম-৭ আসন, দলের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আলতাফ হোসাইন কুমিল্লা-১। এসব আসনে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন তারা। আজ বেলা ১২টায় লালবাগে দলীয় কার্যালয়ে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। মুফতি ফয়জুল্লাহ হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব এবং প্রয়াত ফজলুল হক আমিনীর ছেলে হাসানাত হেফাজতের ঢাকা মহানগরের ভাইস চেয়ারম্যান। ২০১৩ সালের ৫ই মে শাপলা চত্বরে ঘটনার মামলায় আসামি তারা। আগামী নির্বাচনে এসব নেতা আওয়ামী লীগের সমর্থন চান বলে চাউর রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ থেকে তারা কোনো সিগন্যাল পাননি।

২০০১ সালে ব্রাক্ষণবাড়িয়া-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে এমপি হওয়া মুফতি আমিনীর ছেলে আগামীতে এ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মাধ্যমে। বিভিন্ন সভায় তিনি বলছেন, কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির ব্যাপারে বিএনপি ও জামায়াত কেউ কথা রাখেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বীকৃতি দিয়ে সেই কথা রেখেছেন। যারা আলেম উলামার পক্ষে তাদের সঙ্গে আমরা থাকতে চাই।

অন্যদিকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং খেলাফত মজলিস এখনো বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের শরিক। এরমধ্যে খেলাফত আজ থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করছে। অন্যদিকে সম্প্রতি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ভেঙে গেছে। এরশাদ সরকারের প্রতিমন্ত্রী মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের নেতৃত্বাধীন অংশটি ২০ দল ছেড়ে যেতে পারে বলে জানা গেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জোটের মনোনয়নে এমপি হওয়া মুফতি ওয়াক্কাস গত রোববারের শোকরানা মাহফিলের ১৫ সদস্যের প্রস্তুতি কমিটিতে ছিলেন। আসন্ন নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের জোট থেকে নির্বাচন করতে চান বলে গুঞ্জন রয়েছে। জমিয়তের যে অংশটি বিএনপির জোট থেকে নির্বাচন করতে চায়, সেই অংশের হেফাজত নেতারা শোকরানা মাহফিলের বক্তব্যের সমালোচনায় মুখর।

হেফাজতে নায়েবে আমির ও জমিয়তের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, শোকরানা মাহফিলে শাপলা চত্বরের হৃদয়গ্রাহী ঘটনা নিয়ে সত্যের পরিপন্থি বক্তব্য এসেছে। যা দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত। আলেম সমাজ, হেফাজত কর্মী ও তাওহিদী জনতাকে আঘাত করেছে এসব বক্তব্য। জমিয়তের একজন সহ-সভাপতি যিনি হেফাজতেরও নায়েবে আমির। তিনি বলেছেন, মামলা থেকে বাঁচতেই সংগঠনটির নেতারা সরকারের দিকে ভিড়েছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাদের অনেকই এখন এমপি হতে নৌকায় চড়তে চান। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও ইসলামী ঐক্যজোটের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি মাঈনুদ্দিন রুহি বলেন, হেফাজতে রাজনৈতিক দল নয়। হেফাজতের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তারা করবেন দলের ব্যানারে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে।

হেফাজত সম্পৃক্ত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিয়েছে। দলটির মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব। তিনি গত রোববারের শোকরানা মাহফিল পরিচালনা করেন। মাহফুজুল হকসহ খেলাফতের ১২ নেতা নির্বাচন করতে এরশাদের জোট থেকে নির্বাচন করতে চান। জাপা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি ভোটে অংশ নিলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করবে তারা। খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব এবং হেফাজতের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন জানিয়েছেন, তাদের জোট জাপার সঙ্গে। জাপা যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে তাহলে এমনিতেই ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন হচ্ছে তাদের।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version