এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপি পরিকল্পিতভাবে নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, বিএনপি বিনা উস্কানিতে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে নিজেদের বীরত্ব জাহির করল।

আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বুধবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা যা আশঙ্কা করেছিলাম, যে ষড়যন্ত্র নির্বাচন বানচালের, সেই ষড়যন্ত্রই কি তারা আবার শুরু করে দিল? আজকেই কি জাতিকে জানান দিলেন যে, আমরা ২০০১ সালে যা করেছি, ২০১৪ সালে যা করেছি, আবারও আমরা সেটাই করব। আজকের ঘটনায় তাদের উদ্দেশ্য- নির্বাচনে যাওয়া নয়, তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। তারা জনপ্রিয়, জননন্দিত শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে চায়। এটাই হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আজকে রাজনীতির মাঠ সরগরম করার চক্রান্ত হচ্ছে। আজ যে ঘটনাটি ঘটে গেল পল্টনে। আপনারা সাংবাদিকরা ছিলেন। আমাদের এখানে তাদের চেয়েও বেশি জমায়েত হয়েছিল। এমনও দেখছেন, মাশরাফি বিন মুর্তজাকে দেড় কিলোমিটার হেঁটে এই অফিসে আসতে হয়েছে। সেই তুলনায় এমনকি তাদের ভিড় বেশি হয়েছে? আজকে যারা ঐক্যফ্রন্টের নামে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, আজকে তারা স্বরূপে উন্মোচিত হয়েছেন পল্টনে পুলিশের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে। পুলিশের গাড়িতে হামলা করে পুলিশের গাড়ি পুড়িয়েছেন। পুলিশ সেখানে নীরব দর্শক ছিল।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, মিথ্যাচারেই আপনাদের রাজনীতি। আপনি আবারও মিথ্যাচার করলেন। পুলিশ কেন সরিয়ে দেবে? সেখানে ভিডিও ফুটেজ আছে। সম্পূর্ণ নীরব দর্শক ছিল পুলিশ, সাংবাদিকরা ছিল। আপনি আবারও মিথ্যাচার করলেন। বিএনপির সেই পুরনো নিয়মে, সেই ভাঙা রেকর্ড আজকেও আপনি বাজাতে গেলেন। এত মিথ্যার বেসাতি কেন করলেন?

নয়াপল্টনের ঘটনা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে সাক্ষাৎকারের অনানুষ্ঠানিক যে আয়োজন সেখানে আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর এই সংবাদ শুনেছেন। তিনি বলে দিয়েছেন ধৈর্য ধরতে হবে। তিনি ধৈর্য ধরতে বলেছেন। আক্রমণের পাল্টা আক্রমণ পুলিশ করেনি, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় পরবর্তী সময়ে কি ব্যবস্থা নেয়া হয় তা দেখতে আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনের দিকে তাকিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, নির্বাচনের আইন অনুযায়ী আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ যারা সংশ্লিষ্ট আছেন তারা কিন্তু নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত। নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেয়, আমরা সেদিকে দৃষ্টি রাখছি। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য কী, আমরা জানতে চাই।

সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা পরিষ্কার একটা কথা বলতে চাই, ইলেকশন হবে। যত ষড়যন্ত্র হোক, যত চক্রান্তই হোক, যত নাশকতাই করুক। এই নির্বাচন জনগণের অনেক প্রত্যাশার। জনগণ নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এই নির্বাচনকে বানচাল করতে গেলে, এই নির্বাচনকে বানচালের চক্রান্ত, নাশকতা, সহিংসতা যদি ঘটে। বাংলাদেশের জনগণই সেই অপশক্তিকে প্রতিরোধ করবে।

বিএনপি নির্বাচন চায় না দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, কানাডার আদালত যাদের সন্ত্রাসী দল বলে চিহ্নিত করেছে, তারা আজকে আবারও প্রমাণ করল এই দল সন্ত্রাসী দল। এই দল নাশকতার দল। এই দল বোমা-সন্ত্রাসের দল। এই দল নির্বাচন চায় না। এই দল দেশে নৈরাজ্য-অরাজকতা সৃষ্টি করে নির্বাচিত শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে চায়। এখন আমরা বুঝলাম, তারা ইলেকশনে এসেছে ইলেকশন বানচাল করার একটা খেলা হিসেবে। এখানে মনে হয় তাদের একটা নীলনকশা আছে। সেটা তারা বাস্তবায়ন করতে চায়, আজকে টেস্ট কেস তারা দেখাল। আমরাও এই টেস্ট কেস দেখলাম। কি করতে হবে। জবাব কিভাবে দিতে হবে। আমরা আইন অনুযায়ী নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তুত হব।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের দলের প্রার্থী তালিকা ১৮-১৯ তারিখের (নভেম্বর) মধ্যে চূড়ান্ত হতে পারে। এটা আমাদের পার্টিরটা। এরপর আমাদের শরিকরা আছে। তাদের তালিকাও আমরা পেয়েছি। ১৪ দলেরটা তাদের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম জমা দিয়েছেন। যুক্তফ্রন্টও আজকালের মধ্যে জানিয়ে দেবে। জাতীয় পার্টির তালিকা আমরা আগেই পেয়েছি। এখন দেখছি কোন কোন আসনে যোগ্য প্রার্থী আছেন, যারা গ্রহণযোগ্য, বিজয়ী হওয়ার মতো। এ বিষয়গুলো নিয়ে আবারও ১৪ দল, জাতীয় পার্টি ও যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের জন্য ৭০-এর বেশি আসনে ছাড় দেয়া হবে না। আমি আগেও বলেছি, ৬৫-৭০। এখনও বলছি, ৭০-এর বেশি নয়।

দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা জেলা, উপজেলা বা মেয়র পদে আছেন তারা তো কিছু পেয়েছেন। এখন কেউ এমপি হতে চাইলে তাদের ওই পদ খালি করতে হবে। নির্বাচনের আগে আমরা ওই ঝুঁকিটা কেন নেব? তাছাড়া আমাদের দলের অনেক নেতাকর্মী আছেন যাদের অনেক ত্যাগ, অনেক সংগ্রাম আছে। আমরা তাদের প্রোভাইড করব।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, আবদুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একেএম এনামুল হক শামীম, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version