এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে আগেই বরখাস্ত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। মাহিন্দা রাজাপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে সেই শূন্য পদ পূরণ করেছিলেন তিনি। এবার প্রেসিডেন্টের দেয়া রাজাপাকসের প্রধানমন্ত্রী পদও বাতিল করল পার্লামেন্ট। ‘দুই প্রধানমন্ত্রী’ দ্বন্দ্বে সাংবিধানিক টানাপোড়েনের দীর্ঘ ২০ দিনের মাথায় বুধবার পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারালেন রাজাপাকসে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ১২২ এমপির ভোটে এ প্রস্তাব পাস হওয়ায় দ্বীপরাষ্ট্রটি কার্যত প্রধানমন্ত্রী শূন্য হয়ে পড়ল। তবে পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতা মেনে নেয়নি রাজাপাকসের দল।

সংবিধানের ধারা মাড়িয়ে ২৬ অক্টোবর বিক্রমাসিংহেকে সরিয়ে রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসান সিরিসেনা। বিতর্কিত এ সিদ্ধান্তে ভারত মহাসাগরের এ দ্বীপরাষ্ট্রে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়। সিরিসেনা পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে ৫ জানুয়ারি আগাম নির্বাচনের ডাক দিলে সংকট আরও ঘনীভূত হয়। রাজনৈতিক দলগুলো সুপ্রিমকোর্টে সিরিসেনার সিদ্ধান্তের বৈধতার চ্যালেঞ্জ জানায়। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ আদালত প্রেসিডেন্টের ডিক্রিতে স্থগিতাদেশ দিয়ে পার্লামেন্ট চালুর ঘোষণা দেয়।

সুপ্রিমকোর্টের আদেশের পর বুধবার সকাল ১০টায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে পার্লামেন্ট অধিবেশন বসে। পার্লামেন্ট চত্বরের আশপাশে প্রায় এক হাজার সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এছাড়া প্রস্তুত ছিল দাঙ্গা পুলিশও। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ ১২২ সংসদ সদস্য রাজাপাকসের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থন দিয়েছেন। স্পিকার কারু জয়সুরিয়া রুল জারি করে বলেন, ‘রাজাপাকসের পরাজয় হয়েছে। পার্লামেন্টে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন।’ পরে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত করেন স্পিকার।

এএফপি জানায়, এ ফলাফলের মানে এই নয় যে বিক্রমাসিংহে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রধানমন্ত্রী পদে পুনর্বহাল হলেন। এর মাধ্যমে সাংবিধানিক শক্তি প্রদর্শনে তিনি জয়ী হয়েছেন। বল এখন প্রেসিডেন্টের কোর্টে। সাংবিধানিক বলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে। পার্লামেন্টে ভোটাভুটির এ সিদ্ধান্তের নথি প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার কাছে পাঠিয়েছেন স্পিকার। তিনি সংবিধান অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানিয়েছেন। ভোটাভুটিকে কেন্দ্র করে পার্লামেন্টে হট্টগোল শুরু হয়। এরই মধ্যে রাজাপাকসে ও তার এমপি পুত্র নামাল রাজাপাকসে পার্লামেন্টের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। এর অল্প কিছু পরেই ভোটের আহ্বান জানান স্পিকার। রাজাপাকসের দলের এমপিরা পার্লামেন্টের ধাতব প্রতীক আঁকড়ে ধরে ভোটাভুটিতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। রাজাপাকসের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্রমাসিংহে সমর্থিত এমপিরাও স্লোগান শুরু করেন। স্পিকার এ অবস্থার মধ্যে ভোট চালিয়ে যান। ওই সময় রাজাপাকসের কয়েকজন মন্ত্রী ভোট বয়কট করেন। তাদের অভিযোগ, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি ভোটের আয়োজন করে স্পিকার পার্লামেন্টের শিষ্টাচার লঙ্ঘন করেছেন। স্পিকারের এ রুল প্রত্যাখ্যান করেছে রাজাপাকসের দল। তার মন্ত্রিসভার আবাসনমন্ত্রী উইমাল ইরাওয়ানসা বলেন, ‘পার্লামেন্টে এ ভোটাভুটি ছিল অবৈধ। ফলে এখনও দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন রাজাপাকসে।’ সাবেক মন্ত্রী ও রাজাপাকসে সমর্থক দিনেস গুনাবর্ধনে বলেন, ‘আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে এ ভোটাভুটি করা সম্পূর্ণ অবৈধ।’

এর আগের দিন সিরিসেনার পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে সুপ্রিমকোর্ট। আগামী ৫ জানুয়ারি সিরিসেনার ডাকা আগাম ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আদেশ দেয় আদালত। মঙ্গলবার প্রধান বিচারক নালিন পেরেরার নেতৃত্বাধীন বিচারক প্রিয়ান্থা জয়াবর্ধনা ও প্রসন্ন জয়াবর্ধনের তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেয়। আগামী ৪, ৫ ও ৬ ডিসেম্বর এ বিষয়ে বিতর্কের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। আগামী ৯ নভেম্বর পার্লামেন্ট ভেঙে দেন সিরিসেনা। তার এ ঘোষণার বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের বৈধতার চ্যালেঞ্জ করে বহিষ্কৃত প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহের দলসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো মোট ১৩টি পিটিশন দাখিল করে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version