এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের ঘটনাকে ‘চক্রান্ত’ উল্লেখ করে এর মধ্য দিয়ে সরকার নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়ে দলটির নেতারা বলেছেন, এ ঘটনার জন্য দায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কয়েকজন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনের সচিব। তাদের প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনায় পুলিশ দিয়ে আকস্মিক এ আক্রমণ চালানো হয়েছে। বিএনপি নয়, সরকারই বিনা ভোটে অথবা ভোটবিহীন নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ তাদের।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা একটি চক্রান্ত। আমরা নির্বাচন করতে যাচ্ছি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে নমিনেশন নেয়ার জন্য তাদের লোকজন ভিড় করেছে, তখন কিছু করেনি। নির্বাচনী পরিবেশ নষ্টের জন্য উসকানি দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কালকে (মঙ্গলবার) হঠাৎ করে চিঠি দিল। এ চিঠি দিয়ে আজকে পুলিশের অ্যাকশন। প্রভোকেশন (উসকানি) করে নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে।
বুধবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএন?পি মহাস?চিব বলেন, নয়াপল্টনে যখন নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ মিছিল আসছিল সেখানে পুলিশ ঢুকে গিয়ে হঠাৎ করে বাধা দিতে শুরু করে। এরপরই টিয়ার গ্যাস ছোড়া হয়, সঙ্গে গুলি চালানো হয়ে। বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তারপরে হঠাৎ করেই পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগাল। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগাল কারা? তিনি বলেন, হেলমেট পরা কিছু মানুষ এসে ওই গাড়ির ওপরে আক্রমণ শুরু করল। অসমর্থিত খবরে আমরা জানতে পেরেছি, এ হেলমেট পরা লোকজন ছাত্রলীগের। আজকের এ হামলা সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত। পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
নয়াপল্টনে ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ ঘটনা ঘটানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, নির্বাচনের কর্মসূচিকে বানচাল করা, নির্বাচন বানচাল করা। এ আক্রমণ শুধু বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ নয়, এটা গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ। এটা সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের ওপর আক্রমণ।
তিনি বলেন, যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে, বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, যখন উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তখনই এ আক্রমণ। সেই আক্রমণটা সরাসরি সরকারের কাছ থেকে নির্বাচন কমিশনের যোগসাজশে এলো।
মির্জা ফখরুল বলেন, নয়াপল্টনের ঘটনার পর সন্ধ্যায় অফিস থেকে যারা বেরিয়েছেন তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের বগুড়ার সাবেক সংসদ সদস্য চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হেলালুজ্জামান লালু, গ্রাম সরকার সম্পাদক আনিস উজ্জামান খান বাবু এবং খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমির রেজা খানসহ কমপক্ষে ৬০-৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তি?নি বলেন, এটাকে আমরা হালকা করে দেখছি না। আমরা নির্বাচন কমিশনকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। পুলিশ প্রশাসনকে বলতে চাই, অবিলম্বে গ্রেফতাররকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় এ নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করব না। এর দায়-দায়িত্ব বর্তাবে সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ওপরে।
ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আজকে সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচন বানচাল করার জন্য এ প্লট তৈরি করেছে। আমার বক্তব্য, পুলিশ আক্রমণ করেছে এবং তাদের ছত্রছায়ায় গাড়িতে আগুন লাগিয়েছে হেলমেট বাহিনী। তিনি অভিযোগে বলেন, প্রধানমন্ত্রী গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ব্যক্তির সঙ্গে মিটিং করেছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠান গণভবন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর পদের অপব্যবহার করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন। আমরা দেখতে চাই, নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে কিনা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যা?রিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।
নয়াপল্টনের ওই ঘটনার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দু’দফা প্রেস ব্রিফিং করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো ও হামলাকারী ‘হেলমেটধারী’ কারা এমন প্রশ্ন করে রিজভী বলেন, আপনারা দেখেছেন গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আপনারা ইতিমধ্যে দেখেছেন ৪-৫ দিন আওয়ামী লীগ অফিসের আশপাশের রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিন সংঘর্ষ লেগেছে। এটির জের হিসেবে আদাবরে দু’জন মারাও গেছেন। এক্ষেত্রে সিইসি ও কমিশনাররা কোনো বিধি-নিষেধ জারি করলেন না, আইজিকে বললেন না নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। কিন্তু নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখে ওদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে- কী কাণ্ড, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেই এ অবস্থা। তাই সরকারের প্রতিভূ হয়ে সিইসির নেতৃত্বে কমিশনের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাই বিএনপি নেতাকর্মীদের রক্তাক্ত করা ও সহিংস ঘটনার জন্য দায়ী।
এ ঘটনায় ৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, এ ঘটনার জন্য দায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কতিপয় কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনের সচিব। তাদের প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনায় পুলিশ দিয়ে আকস্মিক এ আক্রমণ চালানো হয়েছে। এর আগে ঘটনার পরপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর গাত্রদাহ থেকেই এ হামলা চালানো হয়েছে। নয়াপল্টনে এত নেতাকর্মী কেন তা উনি সহ্য করতে পারছেন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করে বলেন, বিএনপির জোয়ার দেখে সরকার ভীত হয়ে পড়ছে। তাই নির্বাচন বানচালের অজুহাত খুঁজছে।
এর আগে সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী দাবি করেন, সরকারি অর্থ খরচ করে ক্ষমতাসীনরা নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। এটা বন্ধ করতে হবে। সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের এখনও গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে কাদের সিদ্দিকী : বুধবার রাতে বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয় পরিদর্শনে যান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
বিএনপির কার্যালয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে দিনের ঘটনাবলী নিয়ে তিনি কথা বলেন।
কার্যালয় ত্যাগের আগে কাদের সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, মিডিয়াতে সারা দিন পল্টন মোড়ে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ভিডিও দেখে যা বুঝেছি তা হচ্ছে, যারা এ হামলা করেছে তারা নির্দ্বিধায় করেছে। এটা সাধারণ মানুষের কাজ নয়। নিশ্চয়ই পুলিশের সঙ্গে সম্পর্ক আছে হামলাকারীদের। তা না হলে নির্দ্বিধায় গাড়িতে এমন হামলা, আগুন লাগাতে পারত না। তারা হয়তো পুলিশের সঙ্গেই এসেছে।