এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার ঘটনায় দেশটির পাঁচ কর্মকর্তা মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি। তবে ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতা নেই। বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের প্রধান আইনজীবীর দপ্তর থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। খাসোগির হত্যা নিয়ে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, চাপ ও প্রতিবাদের মুখে সৌদি থেকে এমন ঘোষণা আসল। প্রাথমিকভাবে ওই পাঁচ কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করা হয়নি।

সরকারি এক বিবৃতির বরাত দিয়ে সৌদির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, ওই অপরাধের আদেশ ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্ত পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। খাসোগি হত্যার সঙ্গে জড়িত সব মিলে ২১ জন হাজতে রয়েছেন।

টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়েছে, ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বুধবার তুরস্ক একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছে। আঙ্কারা এরই মধ্যে সাংবাদিক খাসোগি হত্যাকাণ্ডের মুহূর্তের অডিও রেকর্ডিং সৌদি আরবসহ যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের মিত্র দেশগুলোকে সরবরাহ করেছে।

ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য তুরস্ক বরাবরই সৌদি আরবকে দায়ী করে আসছে। এমন কি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ‘খাসোগি হত্যার আদেশ সৌদি সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এসেছে।’

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে গত ২ অক্টোবর ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার প্রয়োজনে ঢোকার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন সৌদির খ্যাতনামা সাংবাদিক খাসোগি। শুরু থেকে তুরস্ক দাবি করে আসছে, খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতর সৌদি চরেরা হত্যা করেছে। গত বছর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতা গ্রহণের পর রোষানলে পড়েন খাসোগি। তিনি দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে।

ওয়াশিংটন পোস্ট-এ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে একের পর এক কলাম লেখেন। অভিযোগ উঠেছে, যুবরাজের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ হত্যা সংঘটিত হয়েছে। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সৌদি আরব স্বীকার করে, খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে। তবে খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকার করলেও এতে রাজপরিবার জড়িত নয় বলে দাবি করছে সৌদি আরব। এখনো পর্যন্ত খাসোগির মৃতদেহের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। সৌদি আরবও এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি।

এর আগে বিবিসি জানায়, খাসোগির লাশ অ্যাসিডে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে—এর ফরেনসিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি সাবাহ’ এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই হত্যা করা হয়। হত্যার পর লাশ কেটে টুকরা টুকরা করা হয়। সেই টুকরাগুলো পাঁচটি স্যুটকেসে ভরে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া হয়। খাসোগির লাশের টুকরাগুলো স্যুটকেসে ভরে প্রথমে কনস্যুলেটের পাশের সৌদি কর্মকর্তাদের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। লাশ গায়েব করার দায়িত্বে ছিলেন ১৫ সদস্যের সৌদি কিলিং স্কোয়াডের অন্যতম তিন সদস্য মাহির মুতরিব, সালাহ তুবেগি ও তাহার আল হারবি।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version