এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ব্রেক্সিট চুক্তির খসড়া নিয়ে মন্ত্রিসভার সমর্থন পেয়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। এখন ইইউর শীর্ষ সম্মেলন ডেকে চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষা। কিন্তু রয়ে গেছে নানা অনিশ্চয়তা। ইতিমধ্যে বৃটেনজুড়ে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক। পদত্যাগ করেছেন বৃটেনের প্রভাবশালী ৪ মন্ত্রী। ধারণা করা হচ্ছে, এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। ব্রেক্সিটমন্ত্রী ডমিনিক রাব জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বেরিয়ে আসা নিয়ে খসড়া চুক্তিতে বিবেক সায় দিচ্ছে না বলেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। জুলাইতে সাবেক ব্রেক্সিটমন্ত্রী ডেভিড ডেভিসও প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের ব্রেক্সিট পরিকল্পনার প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন।
এরপরই এ পদে নিয়ে আসা হয় ডমিনিক রাবকে। এর আগে তিনি বৃটেনের গৃহায়ণ ও স্থানীয় সরকারবিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। পদত্যাগ করা অন্য মন্ত্রীরা হচ্ছেন, ইস্থার ম্যাকভি, সুয়েল্লা ব্রেভারম্যান ও শৈলেশ বড়া। এছাড়া পদত্যাগ করেছেন, কনজারভেটিভ পার্টির এমপি রনিল জয়বর্দেনা ও এনি ম্যারি। এনি ম্যারি বলেছেন, এখন এটি তেরেসা মের নেতৃত্বের সময় নয়। পদত্যাগের ধাক্কায় তেরেসা মের সরকার টালমাটাল পরিস্থিতিতে পড়ল।
শৈলেশ বড়া ছিলেন বৃটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ড বিষয়ক মন্ত্রী। ব্রেক্সিট ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী যে চুক্তি করছেন তাতে হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি। শৈলেশ জানিয়েছেন, এ চুক্তির আওতায় বৃটেনের অর্ধেকটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে থাকবে। আবার অর্ধেকটা থাকবে বাইরে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটায় পদত্যাগ করেন শৈলেশ বড়া। প্রধানমন্ত্রী তেরেসাকে উদ্দেশ্য করে তার মন্তব্য, তিনি অনির্দিষ্টকাল বৃটেনের পায়ে শেকল পরাতে চাইছেন। ২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন শৈলেশ বড়া। সমালোচনায় নেমেছেন লেবার পার্টি নেতারাও। লেবার নেতা স্যার কেইর স্টারমার বলেছেন, এখন এটি সপষ্ট যে প্রধানমন্ত্রীর তার মন্ত্রিসভার সমর্থনও নেই।
এদিকে কনজারভেটিভ নেতা জ্যাকব রেস-মগ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের ওপরে অনাস্থা জানিয়ে ১৯২২ কমিটির কাছে চিঠি দিয়েছেন। অনেকেই একে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তেরেসা মের বিদায় ঘণ্টা হিসেবে দেখছেন। ১৯২২ কমিটির বর্তমান প্রধান হচ্ছেন ব্রাডি। তার ক্ষমতা রয়েছে থেরেসা মের বিরুদ্ধে একটি অনাস্থা ভোটের আয়োজন করার। তবে এজন্য এমপিদের শতকরা ১৫ ভাগকে (৪৮ জনকে) তার কাছে চিঠি লিখে অনাস্থা ভোটের জন্য আবেদন করতে হবে। তাহলে তেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন কি না তা নির্ধারণে ভোটের আয়োজন করা হবে। অনাস্থা ভোটেও যদি প্রধানমন্ত্রী জয়ী হতে না পারেন তাহলে তাকে এ পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে এবং পুনরায় নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। জ্যাকব রেস-মগ পার্লামেন্টের বাইরে অবস্থানরত সাংবাদিকদের বলেছেন, এ চুক্তির খসড়াটি একটি ব্যর্থতা এবং ব্রেক্সিটের জন্য হুমকিসরূপ। তিনি বলেন, আপনি একটি বিষয় শুরু করেন আর কেউ আপনাকে অনুসরণ না করে তাহলে সেটি খুব ভালো বিষয় নয়। যদি ৪৮টি চিঠি না যায় তাহলে এটি আমার জন্য খুব সুখকর হবে না। সরকারের উচিত ব্রাসেলসে গিয়ে ইইউকে জানানো যে, বৃটেন কোনো চুক্তি ছাড়াই বেরিয়ে আসবে এবং ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের নিয়ম মেনেই বাণিজ্য করবে। সাবেক ব্রেক্সিট মন্ত্রী ও সিনিয়র কনজারভেটিভ ব্যাকবেঞ্চার স্টিভ বেকার বলেছেন, আমরা ব্রেক্সিটের নীতি নির্ধারণের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি, কখনো প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তনের চেষ্টা করিনি। কিন্তু এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমাদের একজন নতুন নেতা দরকার।
উল্লেখ্য, ব্রেক্সিট চুক্তির খসড়াতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের মার্চেই ইইউ ছাড়বে বৃটেন। এ চুক্তিতে বিচ্ছেদের বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ৩৯ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক নিষ্পত্তির কথাও। এ ছাড়া ব্রেক্সিটের পর বৃটেন যখন ইইউ থেকে বেরিয়ে যাবে তখন দেশটির নাগরিকদের অধিকার সম্পর্কে নানা প্রতিশ্রুতি এতে যুক্ত করা হয়েছে। ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ৫৮৫ পাতার এই চুক্তির খসড়ার আসল কথা হলো তথাকথিত ‘ব্যাকস্টপ’ সংক্রান্ত বোঝাপড়া। ২০১৯ সালের ২৯শে মার্চ ইইউ থেকে বিচ্ছেদের পর আচমকা অচলাবস্থা এড়াতে ২১ মাস পর্যন্ত এক অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থার প্রস্তাব আগেই রাখা হয়েছিল। এই সময়কালে বৃটেন ইইউ-র সদস্য দেশ ইইউ-র শুল্ক এলাকার মধ্যে থাকতে পারবে। এভাবে উত্তর আয়ারল্যান্ড সীমান্তে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। যেকোনো সদস্য দেশের মতো বৃটেন বেশ কিছু দায়িত্ব পালন করবে।
এর আগে মে জানিয়েছিলেন, বুধবার রাতে বেক্সিট নিয়ে ৫ ঘণ্টার উত্তপ্ত বিতর্কের পর ব্রেক্সিট ইস্যুতে মন্ত্রিপরিষদের সমর্থন পেয়েছেন তিনি। তবে বেশ কয়েকজন কনজারভেটিভ ব্যাকবেঞ্চারদের উদ্দেশ্যে তেরেসা মের উপর অনাস্থা ভোট আয়োজনের আহবান জানান। চুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে তেরেসা মে বলেন, তার মাথা থেকে হৃদয় পর্যন্ত বলছে এই চুক্তিটি সঠিক আছে। তবে তিনি যদি এ পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতেই থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে কয়েক দিনের মধ্যে অনাস্থা ভোট ডাকার হুমকি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থিরা। আর এমনি এক সময়ে তেরেসা মে প্রথম তার মন্ত্রিপরিষদে ঝাঁকুনি খেলেন। মন্ত্রীদের পদত্যাগে ভীষণ চাপের মুখে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তাকে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বৃটিশরা এর চেয়ে ভালো কিছুর দাবিদার।