এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসরিন খন্দকার।
বৃহস্পতিবার রাত ১১ টায় নাসরিন খন্দকার ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগে তার ফেসবুকে আইডিতে এই অভিযোগ তুলেন। তিনি লিখেন, ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। তার মা পূর্ব-পরিচয়ের সূত্রে তৎকালীন বিভাগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকে দেখভালের দায়িত্ব দিলে তিনি তার প্রতি অতি আগ্রহ দেখাতেন। ক্লাসে সবাই বিষয়টা খেয়াল করে। তাছাড়া টিউটোরিয়ালে সর্বোচ্চ নম্বরসহ তার প্রতি অতি আগ্রহের কারণে বিভাগের সহপাঠীরা হাসাহাসি করতো। একদিন টিউটোরিয়াল পরীক্ষার খাতায় স্বাক্ষর করার সময় অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের অযাচিত নৈকট্যের কারণে তিনি পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হন বলেও লিখেন।

অন্য আরেকদিন বিভাগে গিয়ে ক্লাস না হওয়ায় তিনি বিভাগের বাইরে বসে থাকলে তাকে সভাপতি পিয়ন দিয়ে ডেকে নিয়ে যান এবং বলেন তিনি শিক্ষার্র্থী হিসেবে সম্ভাবনাময়ী এবং তার অনুপস্থিতির জন্য সভাপতি খুবই উদ্বিগ্ন। শুধু মেধাই না, নাসরিন খন্দকারের আরও অনেক কিছু আছে যা দিয়ে তিনি অনেকদূর যেতে পারে যদি মোস্তাফিজুর রহমান তাকে সাহায্য করে। পরে তার প্রস্তাবের উত্তর জানাতে বলেন বলেও লিখেন।

নাসরিন খন্দকার আরও লিখেন পরের বছর তিনি নৃ-বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হলে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বিভাগ থেকে ছাড়পত্র দিচ্ছিলেন না।

দশদিন সময়ের মধ্যে ভর্তি হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তাকে অনেকদিন ঘুরানোর পর সভাপতি কোনো ছাড়পত্র দেননি। পরে ডিন ও প্রক্টর হয়ে তৎকালীন ভিসি’র বিশেষ স্বাক্ষরে বিভাগ পরিবর্তন করে নৃ-বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন নাসরিন খন্দকার। তিনি তার জীবনের এই ঘটনাকে পুরুষালী জগতে নারীমাংসের মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের ছোট্ট একটা ‘ওপেন-সিক্রেট’ গল্প বলে উল্লেখ করেন।
অভিযোগের ব্যাপারে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নাসরিন খন্দকার নামে আমি কাউকে চিনি না। এতদিন কোথায় ছিল! ২২ বছর পর এসে লিখেছে বেয়াদব মেয়ে। আই ডোন্ট কেয়ার। এসব সামনে আমার পদোন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উপন্যাস লিখছে।’

‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ আন্দোলনের অন্যতম নেতা নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন, ‘মি টু আন্দোলন আসলে প্রমাণ করে বিদ্যমান আইন নারীর জন্য সহায়ক নয়। আইন পুরুষতান্ত্রিক হয়ে উঠায় নারী আর আইনের প্রতি ভরসা পাচ্ছেন না তাই নারী তার বহুবছরের জমানো ক্ষোভ, হতাশা লেখার সুযোগ পেয়ে আজ লিখছে।’ জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, এসব অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত। একজন শিক্ষার্থী বিভাগ পরিবর্তন করতে চাইলে তাকে বিভাগ পরিবর্তনের অনুমতি দেয়া হয় । কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তি সেটা করেননি।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version