এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলা গড়ে তোলার জন্য ড. কামাল হোসেন ছাড়া আর কেউ নেই। একমাত্র ড. কামালই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবেন।

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে রোববার আনুষ্ঠানিক যোগদান শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব বলেন।

দুপুরে ড. কামাল হোসেনের মতিঝিল চেম্বারে যোগদান পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। হবিগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের (গণফোরাম) মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে জোটের শীর্ষ নেতা ড. কামালের হাতে তিনি তার মনোনয়ন ফরম তুলে দেন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফোরামের পক্ষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে তিনি লড়বেন। এ সময় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

যোগদান শেষে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, সারা দেশের মানুষ এই মুহূর্তে ড. কামাল হোসেনের দিকনির্দেশনা গ্রহণ করেছে। তার নেতৃত্ব মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার বাবার আদর্শ থেকে আমি সরিনি। বাবার আদর্শ থেকে আওয়ামী লীগ অনেক দূরে সরে যাওয়ায় গণফোরামে যোগ দিয়েছি। দেশের জন্য কাজ করতে চাই। তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ড. রেজা আরও বলেন, দেশের ভবিষ্যতের জন্য ড. কামাল হোসেন যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, তা আমাদের সবার অনুসরণ করা দরকার। অনেক জায়গায় আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি। শিক্ষা, অর্থনীতি ও আইনের শাসনের ক্ষেত্রে আমরা পথ হারিয়েছি। তিনি বলেন, দেশ থেকে আইনের শাসন অনেকটা চলে যাচ্ছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। এটা আমার কাছে, আমাদের কাছে আপত্তিকর মনে হয়। এটা আমি গ্রহণ করতে পারছি না। ড. কামাল হোসেনও পারছেন না। দেশের মানুষও না।

তিনি বলেন, আমি এ দেশের নাগরিক। আমার অন্য কোনো দেশে থাকার ইচ্ছা নেই। আমি বাংলাদেশে থাকব এবং আপনাদের সঙ্গে থাকব। আমি একটা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমি যে বাংলাদেশ চাই, তা ড. কামাল হোসেন ছাড়া আর কারও পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ছিল, ওই স্বপ্নে ফেরত দেয়ার মতো ড. কামাল হোসেন ছাড়া আর কেউ নেই।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া প্রসঙ্গে ড. রেজা বলেন, আওয়ামী লীগ একটা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে আসতে সবাইকে রাজি করিয়েছে, এতে আমরা সবাই খুব খুশি। দেশের মানুষ মনে করে, নির্বাচন হবে এবং নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে। আমরাও এমন ধরনের নির্বাচন দেখতে চাই।

তিনি বলেন, শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন কোনো দেশে হয় না- এটা ঠিক। তবে আমাদের টার্গেট হবে নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু করা। এ লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে পারব কি না, আমেরিকা পৌঁছেছে কি না সন্দেহ আছে। কিন্তু আমাদের টার্গেট ১০০ পার্সেন্ট পূরণ করা।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আপনাদের (সাংবাদিক) ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা ব্যর্থ হলে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। মিডিয়ার ওপর আমি সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব দিই। জানি আপনাদের ওপর অনেক হুমকি আছে, অনেক ধরনের নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে এটা ভুলে যাবেন না, একাত্তরেও অনেক শক্তিশালী একটা ফোর্স আমাদের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ছিল, কিন্তু আমরা তাদের মোকাবেলা করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য এখন আমাদের একটা সংগ্রাম করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে অনেক কিছু হতে পারে। জনগণের স্পিরিট যখন উঠে আসে, তখন সেটা রোধ করার মতো ক্ষমতা কারও থাকে না। ইয়াহিয়া খানের ছিল না, এখনও এই ধরনের ক্ষমতা কারও আছে বলে আমার মনে হয় না।

ড. রেজা বলেন, আমার বাবার হত্যার বিচার নিয়ে কারও সঙ্গে আপস করব না। সে যে দলেরই হোক না কেন? আমার দলের হোক বা অন্য দলের হোক। আই ডোন্ট কেয়ার। আমি চাই আসল মদদদাতা ও খুনিদের চিহ্নিত করা হোক এবং তাদের শাস্তি দেয়া হোক।

তিনি বলেন, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বাবা নিহত হয়েছেন। এরপর দুই বছর বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। তারা কিছুই করতে পারেনি। দুই বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, তারাও কিছু করেনি। সাড়ে ৯ বছর ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তারাও একটা সুষ্ঠু তদন্ত করার মতো উদ্যোগ নেয়নি। কিন্তু কেন নেয়নি?

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচন করতে চান জানিয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, দেশের স্বার্থে কাজ করতে চাই। এজন্য ঐক্যফ্রন্টের হয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাবার আদর্শ থেকে একচুলও পিছু হটিনি। দেশের মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষায়, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় ড. কামাল হোসেন যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, আমি তাতে সাড়া দিয়েছি।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version