কাফি কামাল, এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তাকে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির প্রধান যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করছে বিএনপি। এছাড়া মহাজোট সরকারের আমলে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা, মামলা-মোকদ্দমা, গুম-কারাভোগসহ ত্যাগ-স্বীকার ও শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বস্ততাকে প্রাধান্য দিয়ে নির্ধারণ করা হচ্ছে প্রার্থীর স্কোর। তবে সামাজিকভাবে ও ভোটের মাঠে যাদের শক্ত অবস্থান রয়েছে এমন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিল থাকবে অন্য বিষয়গুলো।

এছাড়া বিশেষ পরিস্থিতিতে বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা নিজ নিজ এলাকায় বিরূপ পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে ভোটের মাঠে থাকতে পারবেন, ভোটারদের সঙ্গে থাকতে পারবেন বলে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে প্রতীয়মান হবে, তারাই অগ্রাধিকার পাবেন মনোনয়নে। প্রতিটি আসনে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে প্রার্থীদের আমলনামা। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলছেন তারেক রহমান।

অন্যদিকে ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজনীতিতে অবস্থান ও ভোট ব্যাংক বিবেচনা করেই ছাড় দেবে বিএনপি। দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নির্বাচন কমিশনে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন মনোনয়ন বোর্ড। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, আগামী ৮ই ডিসেম্বর দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। যিনি দলের চিঠি পাবেন তিনিই প্রার্থী হবেন, বাকিরা তাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবেন।

দলটির নীতিনির্ধারক ফোরাম সূত্রে জানা গেছে বিএনপির এমন নীতিগত অবস্থানের কথা।

সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে অন্তত ১০টি জরিপ চালিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এসব জরিপে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় দলের সাংগঠনিক অবস্থান, আন্দোলন সংগ্রামে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভূমিকা, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ও মামলা-মোকদ্দমাসহ সার্বিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিটি আসনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা বা সম্ভাব্য প্রার্থীদের তথ্য রয়েছে।

অন্যদিকে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার পর্বের আগেই তিনি একটি নির্দেশনা দিয়েছেন মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের। তাদের বলা হয়েছে, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মনোনয়ন চূড়ান্তকরণে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো যেন দ্রুত সংগ্রহ করে নেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাক্ষাৎকার পর্বে প্রতিটি আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সামনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিচ্ছেন। বলা হচ্ছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে মানুষের অধিকার আদায় ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের একটি অংশ। তাই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে সবাইকে দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে।

অন্যদিকে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও সিনিয়র নেতাদের প্রতি তিনি প্রার্থীদের ব্যাপারে সুপারিশ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্কের চেয়ে দলের বৃহত্তর স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের একচেটিয়া ক্ষমতা বজায় রাখার কৌশল নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তারা বলেছেন, যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও বেশ কয়েকটি জেলার দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ তাদের নিজস্ব অনুসারীদের মনোনয়ন দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। নানা উপায়ে নিজ জেলায় ভালো প্রার্থী বাছাইয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চাইছেন।

এ ছাড়া আন্দোলন-সংগ্রাম চলাকালে ও দলের দুঃসময়ে নিরাপদে বিদেশে অবস্থান করে নির্বাচনের সময়ে দেশে ফিরে মনোনয়ন আদায়ে নানামুখী লবিং-তদবির করছেন। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে শীর্ষ নেতৃত্বকে শক্ত অবস্থান নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এদিকে সাক্ষাৎকার পর্বে মনোনয়ন বোর্ড থেকে প্রত্যেক মনোনয়ন প্রার্থীকে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা জানানো হবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগে। দলের তরফে যিনি মনোনয়নের মূল চিঠি পাবেন তিনি ছাড়া বাকিরা সরে দাঁড়িয়ে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।

সাক্ষাৎকার দেয়া অন্তত ২০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী জানান, সাক্ষাৎকারের শুরুতেই দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্যরা বলছেন- কোন নেতার কী অবদান, বিগত ১২ বছর কে কী করছেন, সে খবর দলের কাছে আছে। এরপরই প্রার্থীর কাছে প্রশ্ন করা হয়, এই ১২ বছর প্রার্থী সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি দলের মাধ্যমে কী ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন? তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশে কীভাবে ছিলেন? নিজে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং মামলা কতটি? এরপর সাক্ষাৎকারে জানতে চাওয়া হয়, এলাকায় প্রার্থীর অবস্থান কতটা শক্তিশালী।

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোটের লড়াইয়ে থাকতে পারবে কি না? যেসব প্রার্থীর কর্মকাণ্ড, নিজ নিজ আসনে অবস্থা ভালো এবং মনোনয়ন পাওয়ার সব যোগ্যতা আছে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়- ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে কিনা? মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা জানান, মূলত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব কথা জানতে চেয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও নির্দেশ দেন তিনি।

বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ডের এক সদস্য জানান, জাতীয় রাজনীতির এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে এবার নির্বাচন করছে বিএনপি। ফলে এটি নিশ্চিত হওয়া দরকার প্রার্থী আগেই মাঠ ছেড়ে দেবেন নাকি শেষ পর্যন্ত বিরূপ পরিস্থিতিতেও থাকবেন। সূত্র জানায়, মাঠের রাজনীতি ও তৃণমূলে প্রার্থীর শক্ত অবস্থান, সাহস ও দৃঢ় মনোবলের বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দুইটি নামও উল্লেখ করেছেন। সিলেট ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনে দল মনোনীত দুই প্রার্থী যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন তা উদাহরণ হিসেবে সামনে আনেন তিনি।

দিনাজপুর-৪ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সাক্ষাৎকার দেয়া জেলা বিএনপি নেতা আবদুল হালিম বলেন, এই আসনে আমরা ৪ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। আমার কাছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানতে চেয়েছেন কেন দল আমাকে মনোনয়ন দেবে? মনোনয়ন দিলে আমার জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু? উত্তরে আমি বলেছি, দীর্ঘ ২৫ বছর আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আর এই আসনে অপর দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। আমার সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব নেই। তাই আমাকে মনোনয়ন দিলে ধানের শীষকে বিজয় উপহার দিতে পারবো।

পঞ্চগড়-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ফরহাদ হোসেন বলেন, আমার কাছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম জানতে চেয়েছেন কেন আমি নির্বাচন করতে চাই? অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে আমি কাজ করবো কিনা। এ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানতে চেয়েছেন, নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কেমন। ফরহাদ হোসেন বলেন, জবাবে আমি বলেছি- খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাইবো।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুর রহমান জাহিদ বলেন, আমার কাছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রশ্ন ছিল- আপনি তো এর আগেও নির্বাচন করেছেন। কিন্তু জয়লাভ করতে পারেননি। এখন কেন আবার নির্বাচন করতে চান? উত্তরে আমি বলেছি- আগে তিনবার ধানের শীষে নির্বাচন করেছি। এবার দলের সবাই আমার সঙ্গে থাকলে আমি জয়লাভ করতে পারবো। এই আসনের জন্য বিএনপি থেকে ১০ জন নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন জানিয়ে জাহিদ বলেন, পরে জানিয়ে দেয়া হবে কাকে দল নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে।

দিনাজপুর-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের আসনে যতগুলো প্রার্থী আছে সবাইকে একবার ডাকা হয়েছে। মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা সাক্ষাৎকারে প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন।

নাটোর-৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রদলের সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম টিটু বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রার্থীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি কথা বলছেন। কোনো রেকর্ড নয়। এ ছাড়া সাক্ষাৎকারের শুরুতে একটি দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখছেন তিনি।

দিনাজপুর-১ আসনের আরেক প্রার্থী মামুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, তাদের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছে- জয়ী হতে পারবেন কী না? দল থেকে যাকে নমিনেশন দেয়া হবে তার পক্ষে কাজ করবেন কী না? তিনি বলেন, এসব প্রশ্নের জবাবে আমি বলেছি- আমি এখন রানিং উপজেলা চেয়ারম্যান। প্রতিকূলতার মধ্যেও জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছি। আমাকে দল থেকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই আমি নির্বাচিত হবো বলে আশা রাখি।

এ ছাড়া দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার জন্যও প্রস্তুত আছি। এ আসনে ধানের শীষের টিকিট চান ৯ প্রার্থী। একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী বলেন, সমপ্রতি অনুষ্ঠিত বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা জানতে চেয়েছেন, ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত তিনি টিকে থাকতে পারবেন কি না। যুক্তি হিসেবে নেতারা বলছেন, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মধ্যে সিলেটে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক ও রাজশাহীর মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত ছিলেন। আরিফুল হক জয় পেয়েছেন আর বুলবুল একাই লড়াই করছেন। সেখানে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে সাহস নিয়ে রুখে দাঁড়াতে পারলে তিনিও জয় পেতেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী আরেক নেতা জানান, বোর্র্ড সদস্যরা বলেছেন- এখানে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে টিকে থাকতে হবে। ভোটের মাঠ ছেড়ে দেয়া যাবে না।

বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে প্রথমদিন দলের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সাক্ষাৎকার দেন দুই বিভাগের ১৮টি জেলার ৭২টি নির্বাচনী এলাকার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। দেশের সর্ব উত্তরের নির্বাচনী আসন পঞ্চগড়-১ আসন থেকে শুরু হয় এ সাক্ষাৎকার পর্ব। সকালে রংপুর ও বিকালে রাজশাহী বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ডে ছিলেন- দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যাারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

প্রতিটি নির্বাচনী আসনের মনোনয়ন প্রার্থীদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্দেশনা দেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রথম সাক্ষাৎকার দেন ওই আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ইউনুস আলী। এরপর পর্যায়ক্রমে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়া, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে সংশ্লিষ্ট মহানগর ও জেলার নির্বাচনী এলাকার দলের মহানগর ও জেলার বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় দিনে আজ সকাল ৯টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বরিশাল বিভাগ, দুপুর আড়াইটা থেকে খুলনা বিভাগ, আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগ ও দুপুর আড়াইটা থেকে কুমিল্লা ও সিলেট বিভাগের সাক্ষাৎকার পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। সবার শেষে বুধবার সকালে ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগ এবং দুপুরে ঢাকা বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।

আমার দলের সাক্ষাৎকার কিভাবে নেব এটা আমার সিদ্ধান্ত- ফখরুল : এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমার দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার কিভাবে নেব এটা আমার সিদ্ধান্ত। ভিডিও কনফারেন্সে নাকি সরাসরি সাক্ষাৎকার নেয়া হবে সেটা নিজেদের ব্যাপার। তারেক রহমান সাক্ষাৎকার নেয়ায় নির্বাচনী আচারণ বিধি ভঙ্গ হচ্ছে বলে ক্ষমতাসীনরা ইসিতে যে অভিযোগ করেছেন তার জবাবে সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।

মির্জা আলমগীর বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়ার মুক্তির অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছি। সেই জন্য প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতার কাজগুলো করছি। আজকে আমাদের দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু হয়েছে। আমরা মনে করছি না অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যে নির্বাচনের জন্য আমরা দীর্ঘকাল আন্দোলন সংগ্রাম করছি। সরকার একতরফা, একদলীয় নির্বাচন করার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ২০দল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ একটি ফলপ্রসূ ও অর্থবহ নির্বাচনের দাবি সব সময় তুলে ধরছে।

আমরা নিজেরাও সংলাপে গিয়েছি। কিন্তু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সমতলক্ষেত্র এখনো তৈরি হয়নি। সংসদ ভেঙে দেয়া হয়নি। বিটিভি, সংবাদ সংস্থা, বেসরকারি গণমাধ্যমগুলো সরকারের তথাকথিত উন্নয়নগুলো প্রচার করছে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখছে না। বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধ হয়নি। বারবার বলার পরও গ্রেপ্তার চলছে। এগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। আমরা চাই সুষ্ঠু অবস্থা তৈরি হোক।

দলগুলো যে অবস্থায় স্বস্তিবোধ করবে। এই জন্য মামলা মোকদ্দমা দায়ের বন্ধ করা হোক। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিটিভিকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। তথাকথিত উন্নয়ন প্রচার বন্ধ রাখতে হবে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরও সমান সুযোগ দিতে হবে। এই বিষয়গুলো ইসিকে জানানো হয়েছে। আরো অন্যান্য বিষয়গুলো জানানো হবে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কি নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে যেভাবে প্রস্তুতি দরকার সেভাবে প্রস্তুতি নিন। কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। সজাগ থাকতে হবে। একতরফা নির্বাচনের জন্য যেন কেউ কেন্দ্র দখলে নিতে না পারে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version