এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগে শাসক দলের পক্ষে কাজ করতে পারে এমন কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। একই ব্যাচের নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের সহায়তায় পুলিশ ও জনপ্রশাসনের দলবাজদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে এ ধরনের বেশকিছু জেলা প্রশাসক (ডিসি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড) এবং পুলিশ প্রশাসনে পুলিশ সুপার (এসপি), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের নামের তালিকা তৈরি হচ্ছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগামী সপ্তাহে এ সংক্রান্ত তালিকা নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেবে। একই সঙ্গে ভোটের সময় এদের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহারের জন্যও জোরালো দাবি জানাবেন জোটের নেতারা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, দলবাজদের পর পুলিশ এবং জনপ্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের তালিকা করবে ঐক্যফ্রন্ট। এসব দলবাজ, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কীভাবে নামে-বেনামে আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তথ্য-উপাত্তসহ তার বিবরণ থাকবে।

কে কোথায় কীভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এবং বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন এসব কিছুই থাকবে তালিকায়। নামগুলো ইসিকে দেয়ার পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীকেও অবহিত করবে ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনে তারা যাতে সরকারি দলের হয়ে কাজ করতে না পারেন সে জন্য জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চাপে রাখতে সামাজিকভাবে বয়কটের জন্যও সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানাবেন জোটের নেতারা।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন মঙ্গলবার বলেন, ‘বর্তমান সরকার যে কোনো মূল্যে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। এ লক্ষ্যে পুলিশ, জনপ্রশাসনসহ মাঠপর্যায়ের সর্বত্র দলীয় লোক বসিয়ে রেখেছে।

এরা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে। দেশবাসী মনে করে, দলীয় কর্মকর্তাদের দিয়ে নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দলবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের তালিকা নির্বাচন কমিশনকে দেব। যাতে কমিশন এসব কর্মকর্তাকে নির্বাচনের বাইরে রাখে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এর পরের ধাপে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরও একটি তালিকা তৈরি করব।’

এ প্রসঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের অপর নেতা গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ডিসি, এডিসি, ইউএনও, এসপি, এএসপি, ওসি এরাই মূলত নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা দলনিরপেক্ষ না হলে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা দলবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছি। দ্রুত এদের তালিকা ইসিকে দেব। তারা ব্যবস্থা না নিলে দেশবাসীকে বিষয়টি অবহিত করব। দেশবাসী যাতে দুর্নীতিবাজ-দলবাজ কর্মকর্তাদের সামাজিকভাবে বর্জন করে সে আহ্বান জানাব।’

সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উচ্চপর্যায়ের টিম মাঠ প্রশাসনে কর্মরত দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরির কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ টিমের এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের সময় ডিসিরা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন।

প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারসহ নানান দায়িত্বে থাকেন। পুলিশ কর্মকর্তারাও থাকেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভোট করার ক্ষেত্রে মূলত এদের ভূমিকাই মুখ্য।

তিনি বলেন, বর্তমানে এসব পদে কর্মরতদের অধিকাংশই দলবাজ হওয়ায় তারা একটি দলের হয়ে ভূমিকা পালন করতে পারে। যা নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। এ ধরনের কাজ বন্ধে তারা দলবাজদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

ওই কমিটির আরেক সদস্য বলেন, অসৎ (দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ) কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করা খুব বেশি কঠিন নয়। তিনি বলেন, প্রত্যেকেরই একটা নিজস্ব ব্যাচ রয়েছে। এই ব্যাচের কর্মকর্তারা পরস্পরকে চেনেন-জানেন। কে কি ছিলেন, কোথা থেকে কে এসেছেন, কে কোন দলের বা কোন রাজনৈতিক দল সমর্থন করেন তা তারা মোটামুটি জানেন। এমনকি প্রত্যেকের অতীত, অতীতের আর্থিক অবস্থা, বর্তমান আর্থিক অবস্থা, রাজনৈতিক ভূমিকা, পরিবারের অবস্থা সবকিছুই পরস্পরের জানা। এখানে লুকোছাপার কিছু নেই। ব্যাচভিত্তিক নির্দলীয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই দলবাজ ও দুর্নীতিবাজদের নাম সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের মেয়াদে পুলিশ এবং জনপ্রশাসনে কয়েক দফা নিয়োগ ও পদোন্নতি হয়েছে। রদবদলের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পদায়ন হয়েছে মাঠপর্যায়ে। একইভাবে জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদেও পদায়ন হয়েছে। বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করছে, নির্বাচনের আগে এসব পদে পছন্দের এবং অনুগত কর্মকর্তাদের বসানো হয়েছে। কাজেই অবিলম্বে এদের মাঠ প্রশাসন থেকে প্রত্যাহারের দাবি করছেন দলগুলোর নেতারা।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত একযোগে দেশের ৩০০ আসনে ভোট হবে। প্রায় ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের জন্য ৪০ হাজার ভোট কেন্দ্র চিহ্নিতের কাজ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। এ অবস্থায় অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নিরপেক্ষ প্রশাসনের দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার মঙ্গলবার বলেন, নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনের উচিত যে কোনো মূল্যে প্রশাসনের কর্তাকর্তাদের নিরপেক্ষ আচরণ নিশ্চিত করা। অন্যথায় জনমতের প্রতিফলন ভোটের ফলাফলে নাও পড়তে পারে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version