এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে নেমেছেন দেশের বিভিন্ন সেক্টরের (খাত) দেড় শতাধিক তারকা ব্যক্তিত্ব। তাদের মধ্যে আছেন- অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও ব্যবসায়ী নেতাসহ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তারকা।

মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সবাই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দল থেকে ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এদের বেশিরভাগেরই প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি একরকম নিশ্চিত। কারণ সংশ্লিষ্ট দলের ‘সবুজ সংকেত’ পেয়েই তারা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে আরও জানা গেছে, মূলধারার রাজনীতির অনেক নেতা নানা অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় এ মুহূর্তে ভাবমূর্তি সংকটে আছেন। আগে এমপি (সংসদ সদস্য) হলেও এখন জয়ী হয়ে আসা তাদের জন্য খুবই কঠিন।

আর এবার সব দলের অংশগ্রহণে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচন বিভিন্ন কারণে প্রতিযোগিতামূলক হবে- এমনটি আশা করছেন দল-মত নির্বিশেষ সবাই। এ জন্য জয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থীর খোঁজে নেমেছে দলগুলো।

কোনো কোনো আসনে এমন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে, যারা রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন কিন্তু দলের আদর্শকে ধারণ করেন। পাশাপাশি নিজস্ব কর্মদক্ষতার কারণে সবার কাছে রয়েছে তাদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তি।

এমন ব্যক্তিদের মনোনয়ন দিলে তারা দলের প্রতীক ও নিজস্ব জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারবেন বলে আশা করছে দলগুলো। বিভিন্ন সেক্টরের এসব তারকার মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে এমপি হয়েছেন। তারাও আবার ভোটে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন।

দলগুলোর এমন সিদ্ধান্তে বেশ চাপের মুখে আছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের বিতর্কিত নেতারা। তাদের বিরুদ্ধে জমি দখল, টেন্ডার ও চাঁদাবাজি, খুনোখুনি, দলীয় আদর্শের বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত সুবিধা নেয়াসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। মনোনয়ন পাবেন না- এমন তথ্য জানতে পেরে ইতিমধ্যেই তারা দলে নীতিনির্ধারকদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। চালাচ্ছেন নানা মাধ্যমে তদবির।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জনপ্রিয় তারকারা রাজনীতির মাঠে এলে সুস্থ রাজনীতির একটা সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তবে তারকাদের এই সংখ্যা যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। অন্যথায় ভবিষ্যতে মূলধারার রাজনীতিবিদদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার আশঙ্কা থাকবে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, তারকা প্রার্থী আমাদের দলে আগেও ছিল, এবার হয়তো আরও কয়েকজন আসবেন। এটি এমন কিছু নয় যে, সুপরিকল্পিত। এ ধরনের সংস্কৃতি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আছে। আমি মনে করি এটি একটি ভালো উদ্যোগ। যারা জনপ্রিয় তারকা তারা নির্বাচনে জয়ী হয়ে এলে জাতীয় সংসদ আরও উজ্জ্বল হবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, কোনো কারণে যদি বড় দলের কোনো প্রার্থী অজনপ্রিয় হয়ে যান, তখন এই তারকা প্রার্থীরা সাধারণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হন। কারণ তাদের দল-মত নির্বিশেষে সবার কাছে একটা সাধারণ গ্রহণযোগ্যতা থাকে।

তবে দীর্ঘদিন যারা রাজনীতি করেন, দলের প্রতি আস্থাশীল ও ত্যাগী- তাদের যদি তারকাদের স্থান দিতে গিয়ে হঠাৎ করে বঞ্চিত করা হয়, তাহলে মূলধারার রাজনীতিবিদরা কষ্ট পাবেন। তখন দেখা যাবে শুধু রাজনীতি করার লক্ষ্যে যাদের আনা হবে, সেই বিষয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই খেয়াল রাখতে হবে, সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত নয়, তাদের সংখ্যা যেন অতিমাত্রায় না হয়।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, সংসদীয় পদ্ধতির যে ইতিহাস তাতে গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করছেন। ব্যবসায়ীরা আসে ভালো, কিন্তু তারা তো আসে বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে।

তারা রাজনীতি করার মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থটা বেশি দেখেন। এদের অনেকেরই তৃণমূলের সঙ্গে তেমন কোনো যোগাযোগ নেই। পয়সা-কড়ি আছে, তারা নির্বাচনে অতিরিক্ত মাত্রায় তা ব্যয় করেন। এই ব্যয়ের সীমাবদ্ধতা আছে।

তারা নির্বাচন কমিশনে যে হিসাব দাখিল করেন, সেটা কমিশন প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে না। ফলে অর্থ খরচ করে রাতারাতি এমপিও হয়ে যান। তবে কিছু শিক্ষিত ও ভালো ব্যবসায়ী আছেন, তারা হয়তো জনগণের সেবা করতে আসেন। তবে এ সংখ্যা খুবই কম।

আর অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আমলারা এলে খারাপ কিছু দেখছি না। তারা তো শিক্ষিত। সংসদে যদি নির্বাচিত হয়ে আসেন, তাহলে লেখাপড়া জানা মানুষ আসবে। পার্শ্ববর্তী ভারতসহ নেপাল, ভুটানের এমপিদের গুণগত মান খুবই উন্নত। সুতরাং বিভিন্ন খাতের তারকারা এলে এক অর্থে খারাপ হয় না।

কারণ বিভিন্ন দলের কোনো কোনো সংসদ সদস্য নানা অপকর্ম করে নিজেদের ভাবমূর্তি নিজেরাই ক্ষুণ্ণ করেছেন। তাদের দুর্বলতার সুযোগেই স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জনপ্রিয় ব্যক্তিদের প্রার্থী করতে বাধ্য হচ্ছে দলগুলো। যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা সংসদ সদস্য হয়ে এলে সংসদে গঠনমূলক আলোচনা হবে। যদিও এটি মূলধারার বিতর্কিত রাজনীতিবিদদের জন্য এক ধরনের ‘অশনিসংকেত’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিভিন্ন সেক্টরের জনপ্রিয় তারকারা জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী হচ্ছেন, এটা সুসংবাদ। তবে এটি যেন ঢালাওভাবে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনীতি কি শুধু জনপ্রিয়তার ব্যাপার- তা তো নয়, রাজনীতি করতে গেলে জীবনের শুরু থেকেই তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে আসা উচিত। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সেই ব্যাপারটি তো ঘটছে না। ধীরে ধীরে তাদের জায়গা দখল করে নিচ্ছেন সাবেক আমলা, বড় ব্যবসায়ীসহ জনপ্রিয় তারকারা।

আমার কাছে মনে হচ্ছে, এ প্রবণতা রাজনীতির জন্য অনেকটা আত্মঘাতী। রাজনীতি যে একটি সারা জীবনের প্রক্রিয়া সেটা কিন্তু এখানে অনুপস্থিত থাকছে। এর কারণটি আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিজেই বলেছেন, এখন ‘রাজনীতি হচ্ছে গরিবের ভাবি’। তবে ব্যতিক্রমও আছে।

যেমন মাশরাফি ও ড. প্রাণ গোপাল দত্ত। তারা নিজ নিজ এলাকার জনগণের সেবা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন। এ ধরনের ব্যক্তিত্ব এলে ভালো কথা। প্রসঙ্গত, সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের রাজনীতিতে আসা নিয়ে ৬ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের বড় পদে চাকরি শেষে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার প্রবণতার কঠোর সমালোচনা করেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমাদের গ্রামে প্রবাদ আছে গরিবের বউ নাকি সবারই ভাউজ (ভাবি)। রাজনীতিও হয়ে গেছে গরিবের বউয়ের মতো। যে কেউ যে কোনো সময় ঢুকে পড়তে পারে, বাধা নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, বাংলাদেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা। তাই সংসদ নির্বাচনে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, সেই দলই সরকার গঠন করে। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যেসব নেতার জয়ের সম্ভাবনা থাকে, তাদেরই প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয় দলগুলো।

কিন্তু কোনো কারণে যদি সংশ্লিষ্ট নেতার ভাবমূর্তি সংকট থাকে, সে ক্ষেত্রে জয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিকল্প হিসেবে উজ্জ্বল ভাবমূর্তির জনপ্রিয় কোনো অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়ে থাকে দলগুলো। এতে আমি খারাপ কিছু দেখছি না।

এ সংস্কৃতি পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশেই রয়েছে। কিন্তু দলের প্রতি নিবেদিত, ত্যাগী এবং এলাকায় জনপ্রিয়তা রয়েছে- এমন নেতাকে বাদ দিয়ে দলের বাইরে থেকে প্রার্থী আনা মোটেই ঠিক হবে না। এতে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বা হতাশা দেখা দিতে পারে।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রাজনীতিবিদরা যদি সততার সঙ্গে কাজ করেন এবং জনবিচ্ছিন্ন না হন, তাহলে অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে এনে প্রার্থী করার প্রয়োজন ছিল না। তবে রাজনীতির নেতৃত্ব সব সময় মূলধারার রাজনীতিবিদদের কাছেই থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অবসরপ্রাপ্ত আমলা : আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে নৌকা প্রতীকে যাদের নির্বাচনে দেখা যেতে পারে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং সাবেক সচিব নূর মোহাম্মদ কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন চাঁদপুর-১ (কচুয়া) এবং সিলেট-১ (সদর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক আমলা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

যদিও অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, এবার তিনি নির্বাচন করবেন না। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে চান অর্থমন্ত্রীর ভাই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি একেএ মোমেন। এ ছাড়া একই আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন চান সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইনও।

এ ছাড়া হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট ও মাধবপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে আরও আছেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক দুই উপাচার্য- চিকিৎসক প্রাণ গোপাল দত্ত কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) ও কামরুল হাসান খান টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল), সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব ও বর্তমানে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন ফরিদপুর-১ (আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী), বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বর্তমান সদস্য অধ্যাপক এম শাহ নওয়াজ আলী রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ), সাবেক সচিব মো. রশিদুল আলম কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা), দিনাজপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, রংপুর-৫ আসনের বর্তমান এমপি এইচএন আশিকুর রহমান, সুনামগঞ্জ-৩ আসনের বর্তমান এমপি ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের বর্তমান এমপি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, চাঁদপুর-৫ আসনের বর্তমান এমপি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম এবং কুমিল্লা-১ আসনের বর্তমান এমপি মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া।

এ ছাড়া বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন- সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এসএম আবদুল হালিম জামালপুর-২ (ইসলামপুর), সাবেক আইজিপি এমএ কাইয়ুম জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশিগঞ্জ), সাবেক সচিব হায়দার আলী শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী), লে. কর্নেল (অব.) আবদুল লতিফ নওগাঁ-৫ (সদর), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাসিরউদ্দিন আহমেদ ফেনী-৩, সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া), সাবেক সচিব আবু হেনা রাজশাহী-৪ (বাগমারা), সাবেক সচিব খান মোহাম্মদ ইব্রাহীম হোসেন সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) এবং মেজর (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুন সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী)। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরও আছেন- মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী ঢাকা-১৭ (গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট) এবং সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান এএফএম সোলায়মান চৌধুরী কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ)।

আর যেসব সাবেক কর্মকর্তা জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নের প্রত্যাশা করছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এনএম নিয়াজ উদ্দিন মিয়া গাজীপুর-২ (সদর ও টঙ্গী) এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ফেনী-৩।

ব্যবসায়ী নেতা : ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং তৈরি পোশাক খাত ব্যবসায়ীদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক অনেক নেতা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- এফবিসিসিআইয়ের সাবেক দুই সভাপতি সালমান এফ রহমান (ঢাকা-১) ও ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন (কুমিল্লা-৩) নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে আগ্রহী। সংগঠনটির আরেক সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু (ফেনী-৩) বিএনপি থেকে নির্বাচন করার কথা।

এ ছাড়া এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান সদস্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে অভিনেত্রী শমী কায়সার (ফেনী-৩), কাজী ইরতেজা হাসান (ঢাকা-১৭), আবু নাসের (টাঙ্গাইল), দিলীপ কুমার আগারওয়ালা (চুয়াডাঙ্গা-১), আনোয়ার সাদাত সরকার (গাজীপুর), রেজাউল করিম (জামালপুর-৫), তাবারুকুল তোসাদ্দেক হোসেন খান (মানিকগঞ্জ-৩), খায়রুল হুদা (সুনামগঞ্জ-১) ও মাসুদ পারভেজ খান (কুমিল্লা-৬)।

এ ছাড়া বর্তমান পরিচালকদের মধ্যে বিএনপি থেকে ভোটে অংশ নিতে চান আবু মোতালেব (ঢাকা-৭)। আর সংগঠনটির সাবেক পরিচালকদের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে মো. হেলাল উদ্দিন (নরসিংদী-৪), আমিনুল হক শামীম (ময়মনসিংহ সদর-৪) এবং বিএনপি থেকে আবদুল ওয়াহেদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩) আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী।

এ ছাড়া তৈরি পোশাক রফতানি খাতের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি ও বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচন করার কথা আছে। পাশাপাশি গত সেপ্টেম্বরে উপনির্বাচনে খুলনা-৪ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরকারি দলের সংসদ সদস্য হয়েছেন তৈরি পোশাক রফতানি খাতের মালিকদের আরেক সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও ফুটবল তারকা আবদুস সালাম মুর্শেদী।

এবারও তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী। সালাম মুর্শেদী যুগান্তরকে বলেন, ‘ব্যবসায়ী ও ক্রীড়াঙ্গনের নেতা হিসেবে অনেক দিন ধরে জনগণকে সেবা দিয়ে আসছি। ফুটবল ফেডারেশনে ১২ বছর এবং বিজিএমইএ’র নেতা হিসেবে ২০ বছর ধরে কাজ করছি।

বিজিএমইএ’র সদস্য সংখ্যা প্রায় চার হাজার, যাদের কারখানায় ৫০ লাখের ওপর শ্রমিক আছেন। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাঁচ কোটি লোক এ সেক্টরের সঙ্গে জড়িত। আমি যদি এ সংস্থাকে সেবা দিতে পারি, তাহলে জনগণকে সেবা দিতে পারব না কেন?

আমি নিজে একজন শ্রমিকবান্ধব মানুষ। উপনির্বাচনে এমপি হওয়ার পর টানা দু’মাস আমার এলাকায় তৃণমূলে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তাই অন্য সেক্টর থেকে এলেও আশা করছি জনগণকে আমার সাধ্যমতো সেবা দিতে পারব।

সাংস্কৃতিক অঙ্গন : সংস্কৃতি জগতের যেসব তারকা আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সরকারি দল থেকে মনোনয়ন দৌড়ে আছেন, তাদের মধ্যে আছেন- চলচ্চিত্র নায়িকা সারাহ বেগম কবরী। তিনি ঢাকা-১৭ থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহী।

এর আগে তিনি ২০০৮ সালে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী ও বিশিষ্ট অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এবারও তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী।

কণ্ঠশিল্পী মমতাজ মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি মনোনীত হন। তিনি ২০১৪ সালে একই আসনে সরাসরি ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। এবারও তিনি নৌকার প্রার্থী হতে আগ্রহী।

এ ছাড়া তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম টাঙ্গাইল-৬ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। তিনি ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক গাজীপুর-৫ আসন থেকে প্রার্থী হতে আগ্রহী। সরকারি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরও আছেন- অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী ও খলচরিত্র অভিনেতা মনোয়ার হাসান ডিপজল।

এ ছাড়া বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন জনপ্রিয় তিন কণ্ঠশিল্পী- বেবী নাজনীন, কনকচাঁপা ও মনির খান এবং অভিনেতা হেলাল খানসহ অনেকে। আর জাতীয় পার্টি থেকে চিত্রনায়ক সোহেল রানা নির্বাচন করতে আগ্রহী।

ক্রীড়াঙ্গন : বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা আওয়ামী লীগ থেকে নড়াইল-২ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া বাংলাদেশ ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আরিফ খান জয় নেত্রকোনা-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে পরে ক্রীড়া উপমন্ত্রী হয়েছেন।

তিনিও এবার নির্বাচন করতে আগ্রহী। সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয় দ্বিতীয়বারের মতো মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে এবং মানিকগঞ্জ-২ থেকে ফুটবল তারকা দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, টাঙ্গাইল-৬ থেকে ফুটবল তারকা খুরশিদ আলম বাবুল সরকারি দলের টিকিটে নির্বাচন করতে চান।

আর জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক ঢাকা-১৪ ও ১৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বিএনপি থেকে দুটি মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে ফুটবল থেকে অবসর নেই। ২০১৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেই।

তারপর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। আমি বা আমার মতো যারা অন্য সেক্টর থেকে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা অবশ্যই সুস্থ চিন্তাভাবনা নিয়ে রাজনীতি করতে এসেছেন। সুতরাং আমরা জনগণকে প্রকৃত সেবা দিতে পারব বলে আশা করছি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ক্রীড়া সংগঠক মনোনয়ন দৌড়ে আছেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version