এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় ইন্ধনের অভিযোগে ইসি সচিব ও ডিএমপি কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ৫টি চিঠি ইসিতে দিয়ে আসেন। বিএনপি মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এসব চিঠিতে পৃথক কয়েকটি অভিযোগ ও দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে নয়াপল্টনের ঘটনায় ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি করা হয়েছে। গত ১৪ই নভেম্বর দলীয় মনোনয়ন বিতরণের সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়।

এ ঘটনার জন্য নির্বাচন কমিশন ও পুলিশকে দায়ী করেছে বিএনপি। নেতাকর্মীদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে মর্মে কয়েক দফা ইসিতে অভিযোগও দেয়া হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার ইসি জানিয়েছে, নয়াপল্টনে ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। সেখানে তদন্ত কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করবে না কমিশন। মঙ্গলবার বিএনপি’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন কমিশন তড়িঘড়ি করে ৮ই নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পরের দিন থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাস্তা বন্ধ করে যানজট সৃষ্টি করে মনোনয়নপত্র বিতরণ করে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মোটরসাইকেল, গাড়ি, পিকআপসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ধানমণ্ডি যায় এবং রাস্তাঘাট বন্ধ করে মনোনয়ন সংগ্রহ করে। এছাড়া নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়।

এ সময় পুলিশ তৎপরতা না দেখিয়ে বিএনপি মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় বিএনপি’র কার্যালয়ের সামনে স্বতঃফূর্ত জনগণের ঢল দেখে নির্বাচন কমিশন সচিব ও ডিএমপি কমিশনারের গায়ে জ্বালা ধরে। কমিশন নড়ে চড়ে বসে। কথিত আচরণ বিধির খড়গ নেমে আসে বিএনপি’র উপর। ইসি সচিব গণমাধ্যম আচরণ বিধি পালনের কঠোর হুমকি নিয়ে আচরণ বিধি লঙ্ঘন বলে চিহ্নিত করে। এটি একটি পক্ষপাতমূলক আচরণ। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ই নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি প্রতিপালনের নির্দেশনা নেতাকর্মী সমর্থকসহ জনগণের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের দেয়া বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক এবং ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামানের বক্তব্যে ঘটনা সংঘটনের স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দেয়া চিঠিতে কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, সংশ্লিষ্ট জোনের উপ-কমিশনার ও ইসি সচিবালয়ের একজন যুগ্ম সচিবের শাস্তি দাবি করা হয়েছে। ইসি সচিবের বিরুদ্ধে বিএনপি’র অভিযোগ নিয়ে হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, সচিব ইসি’র মুখপাত্র। ইসি সচিবের আলাদা সত্তা নেই। কমিশনই সব সিদ্ধান্ত নেয়। সচিব তা বাস্তবায়ন করে ও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সভার অভিযোগ : বিএনপি’র পক্ষ থেকে অপর এক চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, গত ১৩ই নভেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ঢাকায় ডেকে আনে কমিশন। ওইদিনই রিটার্নিং কর্মকর্তারা ফিরে যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাদের ডেকে নিয়ে ব্রিফিং করা হয়, যা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। চিঠিতে আরও বলা হয়, তফসিল ঘোষণার পর এ সকল রিটার্নিং কর্মকর্তা সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকা সত্ত্বেও কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাদের ডেকে পাঠানো হয়? এ ধরনের আচরণ একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিরাট অন্তরায়। রিটার্নিং অফিসারদের ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের টেলিফোন কললিস্ট যাচাই করে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঐদিনের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পরীক্ষা করেও বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত সম্ভব বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে সচিব বলেন, রিটার্নিং অফিসার যেহেতু ইসি’র অধীন। সুতরাং তাদেরকে যাতে অন্য কোনোভাবে ডেকে সভা না করা হয়- এগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে কনসার্ন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেবো।

ড্রোন উড়িয়ে নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ
এক চিঠিতে বিএনপি জানিয়েছে, দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র বিতরণ সময়ে ড্রোন উড়িয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করা হয়েছে। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন থেকে বিএনপিকে দূরে সরিয়ে রাখতে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী এবং প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, গত ১৫ই নভেম্বর বিএনপি’র মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদান কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় কার্যালয় সংলগ্ন আকাশে ড্রোন উড়তে দেখা যায়। বাংলাদেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যতীত জনসাধারণের ড্রোন উড়ানো নিষিদ্ধ। বিষয়টি আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর গোচরীভূত থাকার কথা। নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করার জন্যই এ ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা সুপরিকল্পিতভাবে ঘটানো হচ্ছে বলে দাবি করেছে দলটি।

প্রশাসনে রদবদলের দাবি : বিএনপি’র চিঠিতে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বদলির কথা জানিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসি, জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পুলিশ সদর দপ্তরের মাঠ প্রশাসনে বদলি করতে হবে। বদলির ক্ষেত্রে ব্যাচের সিনিয়রিটি ও মেধাক্রম অনুসরণ করতে হবে। সকল বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার করতে হবে। সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বর্তমান কর্মস্থল জেলার বাইরে বদলি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত এবং মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী বা সমমানদের পিএস বা এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে তাদের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট পদে পদায়ন করা যাবে না। সকল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। পদোন্নতিবঞ্চিত সকল যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে হবে। এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ঢালাওভাবে রদবদল প্রস্তাব ইসি গ্রহণ করবে না।

অভিযোগ সুনির্দিষ্ট হতে হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিএনপি’র অভিযোগ প্রসঙ্গে সচিব আরও বলেন, মঙ্গলবার কমিশন একটি নির্দেশনা দিয়েছে। সবগুলো বিষয় মিলে সরকারকে একটা পত্র দেবো। সিদ্ধান্ত হয়েছে এমন- ভবিষ্যতে যাতে পত্রপত্রিকায় বা যেসব অভিযোগ আসছে তা যেন আর না করা হয়। তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রশাসন ইসি’র অধীনে থাকায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়ার কথা জানান তিনি।
উল্লেখ্য, আগামী ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৮ নভেম্বর। বাছাই ২রা ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ই ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১০ ডিসেম্বর, এদিন থেকেই প্রার্থীরা প্রচার কাজ চালাতে পারবেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version