এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগি খুনের ঘটনায় সৌদি আরবের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ বেড়েছে। আর রাজপরিবারে বেড়েছে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) ‘শত্রু’। ক্রাউন প্রিন্সকে রাজসিংহাসনে বসানোর বিরোধিতায় সরব সৌদি রাজপরিবারের সদস্যরা। রাজপুত্র ও যুবরাজের জ্ঞাতি ভাইদের অনেকেই সিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রশ্নে এমবিএসকে চান না। বিন সালমানের বাদশাহ হওয়ার প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। তবে ৮২ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান বেঁচে থাকা অবস্থায় এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ তারা নেবেন না। রাজপ্রাসাদ সংশ্লিষ্ট ঘনিষ্ঠ তিনটি সূত্রের বরাতে মঙ্গলবার এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স।

পশ্চিমা বিশ্বে ‘এমবিএস’ নামে পরিচিত ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ। শুধু বাদশাহ’র সমর্থনেই নিজের আসনে এখনও বহাল তবিয়তে প্রভাব খাটিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বাদশাহর প্রিয়পুত্র হওয়ায় তাকে সরিয়ে দেয়ার দাবি উঠলেও সালমান তাতে কান দেবেন না বলেই অনুমান করা হচ্ছে। রাজপরিবারের সদস্যরা এখন বাদশার মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই ৭৬ বছর বয়সী প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজকে সিংহাসনে বসাতে আগ্রহী। বাদশাহ হলে এমবিএসের এ চাচা রাজপরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থা এবং কিছু পশ্চিমা দেশেরও সমর্থন পাবেন বলে সৌদি একটি সূত্র জানিয়েছে।

আড়াই মাস বিদেশে কাটিয়ে প্রিন্স আহমেদ গত মাসে রিয়াদে ফিরেছেন। সৌদির বর্তমান নেতৃত্বের বহু বিষয়ে সমালোচনা করেছেন বাদশাহ সালমানের এ ছোট ভাই। ২০১৭ সালে উত্তরাধিকার নির্ধারণ কমিটির যে তিন সদস্য এমবিএসকে ক্রাউন প্রিন্স বানানোর বিরোধিতা করেছিলেন, আহমেদ তাদের একজন ছিলেন বলেও দুটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সৌদি বংশে কয়েকশ’ প্রিন্স আছে। ইউরোপীয় রাজপরিবারের মতো এখানে রাজার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার জ্যেষ্ঠপুত্র সিংহাসনের উত্তরাধিকার হতে পারেন না। রাজপরিবারের ঐতিহ্য অনুযায়ী, বাদশা এবং পরিবারের বিভিন্ন শাখার জ্যেষ্ঠ সদস্যরা মিলে তাদের দৃষ্টিতে সিংহাসনের জন্য সবচেয়ে বেশি যোগ্য ব্যক্তিকেই উত্তরাধিকার হিসেবে মনোনীত করেন। তবে ওই মনোনয়নই শেষ কথা নয়। বাদশাহর মৃত্যু কিংবা রাজকার্য পরিচালনায় অক্ষম হলে ৩৪ সদস্যের কাউন্সিলই নতুন বাদশাহ ঠিক করবে। আগে থেকে ঠিক করে রাখা উত্তরাধিকারের বাদশাহ হতে হলেও কাউন্সিলের সম্মতি লাগবে। এমবিএসের বিরোধী রাজপুত্ররা এখন বাদশাহর মৃত্যুর অপেক্ষায় আছেন। সোমবার রিয়াদে বাদশাহ তার ছেলের পক্ষ নিয়ে ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে সৌদি সরকারি কৌঁসুলির প্রশংসা ছাড়া খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরাসরি কিছু বলেননি সালমান।

প্রায় চার দশক সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন আহমেদ। বাদশাহর দায়িত্ব পেলে এমবিএসের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারে কোনো রকম বদল আনবেন না বলেও আস্থাশীল সূত্রগুলো।

পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রিয়াদের সামরিক চুক্তিগুলো বহাল রাখার পাশাপাশি তিনি রাজপরিবারের মধ্যে একতাও ফিরিয়ে আনবেন বলে মত তাদের। প্রিন্স আহমেদকে পরবর্তী বাদশাহ বানালে যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে সমর্থন দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।

সৌদির ওপর নিষেধাজ্ঞা আনছে ফ্রান্স ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভস লা দ্রিয়াঁ বলেন, তার দেশ খাসোগিকে হত্যার কারণে সৌদি আরবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। সোমবার ইউরোপ ওয়ান রেডিওকে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা যা জেনেছি তার ওপর ভিত্তি করে শিগগিরই সৌদিকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে।’ সৌদি সাংবাদিক হত্যার বিস্তারিত ঘটনা প্রকাশ করার প্রতি জোর দিয়ে লা দ্রিয়াঁ বলেন, ‘অপরাধীর মুখোশ অবশ্যই উন্মোচিত হতে হবে।’ ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি সৌদির ১৮ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version