এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিএনপির পক্ষ থেকে ৯২ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে কাল্পনিক ও বাস্তবতা বিবর্জিত বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। ক্ষমতাসীন এ জোটের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বিএনপির এমন কর্মকাণ্ড প্রশাসনকে মানসিকভাবে কোণঠাসা করে নিজেদের সুপ্ত এজেন্ডা বাস্তবায়নের অপকৌশল মাত্র। বিএনপির দাবি অনুযায়ী রদবদল হলে শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়বে। যার মধ্য দিয়ে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নিজেদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। বিএনপির দাবি অনুযায়ী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন আছে বলে ১৪ দল মনে করে না।

শুক্রবার সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে লিখিতভাবে এ দাবি জানায়। প্রতিনিধিদলে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, জাসদ নেতা নাদের চৌধুরী প্রমুখ। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ১৪ দলের নেতারা।

পরে সাংবাদিকদের দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ড. কামাল একজন প্রখ্যাত আইনজীবী। ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি প্রতি মুহূর্তে নির্বাচনী আচরণ পরিপন্থি বক্তব্য দিচ্ছে তার কোনো প্রতিবাদ করছেন না ড. কামাল। তার এমন আচরণ দ্বিচারিতা। বিএনপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। অন্যদিকে তাদের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। বিএনপির হিডেন এজেন্ডা কি- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ইসি ও প্রশাসনকে অস্থিতিশীল করতে চায়।

একই সঙ্গে নির্বাচনী পরিবেশও অস্থিতিশীল করছে। এরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আবার নির্বাচন বানচালেরও ষড়যন্ত্র করছে। প্রশাসনে রদবদল সম্পর্কে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া যেন কাউকে বদলি না করা হয় সেজন্য ইসিকে বলা হয়েছে। নির্বাচনকে নিজেদের পক্ষে নেয়ার জন্য মিডিয়ার মাধ্যমে বিএনপি যুদ্ধ চালাচ্ছে বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন ১৪ দলের নেতারা। সিইসি বরাবর লিখিত অভিযোগে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের সচিবসহ প্রশাসনের কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তার শাস্তির দাবি সহ গোটা প্রশাসনে রদবদলের দাবি ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই না। আসন্ন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বানচালের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা গ্রহণের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এধরনের বাস্তবতা বিবর্জিত দাবি উত্থাপন করা হচ্ছে।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ সংক্রান্ত ১৪ দলের অভিযোগে বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামি দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান মহান জাতীয় সংসদের সদস্য পদপ্রার্থীদের বাছাই করতে পারেন না। যা সংবিধানের প্রতি চরম অবমাননা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান পরিপন্থি। বিএনপির এই কর্মকাণ্ডকে বেআইনি দাবি করে দলটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করা হয় ক্ষমতাসীন জোটের পক্ষ থেকে। অপর এক অভিযোগে বলা হয়, বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিপ্রায়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিপ্রায়ে গণমাধ্যমে লাগাতার মিথ্যাচার ও হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় ঐকফ্রন্টের ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার আহ্বান মূলত: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাহত করে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র। এধরনের বক্তব্যদাতাদের সতর্ক করার জন্য ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ১৪ দল। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছে বলেও সিইসির কাছে অভিযোগ করে প্রতিনিধিদল। ওই সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিও উচ্চ আদালতের রায়ের লঙ্ঘন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

১৪ দলের অভিযোগে আরো বলা হয়, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের নির্বাচনে অংশগ্রহণের খবর দেশবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ও চরম ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইসির প্রতি আহ্বান জানান ১৪ দল নেতারা। লিখিত অভিযোগে সংখ্যালঘুদের নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিতের জন্য ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এ ছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নামে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষকরা যাতে পক্ষাবলম্বন করতে না পারে সে ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রিটার্নিং অফিসাররা সভা করেছেন বলে বিএনপি যে অভিযোগ করা হয়েছে তা অস্বীকার করা হয়েছে ১৪ দলের পক্ষ থেকে। বিএনপির এ অভিযোগ বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে এবং ষড়যন্ত্রমূলক বলে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version