এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে বিএনপি ও জোটের প্রার্থী কে হচ্ছেন তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত। নির্বাচনী কৌশল ও জোট মিত্রদের সঙ্গে চূড়ান্ত সমঝোতা না হওয়ায় প্রত্যাহারের শেষ সময়ে দল ও জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করে চিঠি দেবে বিএনপি। ওই সময়ই জানা যাবে ৩০০ আসনে বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের কে কোন আসনে প্রার্থী হচ্ছেন। আজকের মধ্যেই বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের শরিকদের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।

যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের সবাইকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রত্যাহারের শেষ সময়ে চূড়ান্ত প্রার্থীকে রেখে অন্যদের মনোনয়নপত্র তুলে নিতে বলা হবে। দলীয় কৌশল হিসেবে বিএনপি বেশিরভাগ আসনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। একাধিক প্রার্থী দেয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীদেরই বলে দেয়া হয়েছে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। এদিকে বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, শরিক দলগুলোর জন্য ৬০টির মতো আসন ছাড়ছে বিএনপি।

এসব আসনের মধ্যে কোন দল কতটি পাচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। দলগুলো অধিক সংখ্যক আসন চাইছে। তবে জয়ী হতে পারেন এমন প্রার্থী ছাড়া বিএনপি কাউকে জোটের মনোনয়ন দিতে চাইছে না। বিএনপির পুরনো মিত্র ২০ দলের জন্য আসন ছাড় দিচ্ছে সর্বোচ্চ।

বাকি আসনগুলো পাবে গণফোরাম, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও নাগরিক ঐক্য। শরিকদের প্রায় সবাই ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছে। এদিকে আসন বণ্টন নিয়ে গতকাল গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে অনির্ধারিত বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠক শেষে ইতিবাচক আলোচনার কথা জানিয়েছেন তারা দুজনই। তবে গণফোরাম কতটি আসন পাচ্ছে তা পরিষ্কার হয়নি।
বিএনপির মহাসচিব ও ঐক্যপ্রক্রিয়ার মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল জানিয়েছেন, শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনা করে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ফখরুল বলেন, ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচন থেকে প্রতিহত করার জন্যই দলের নেতাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনের আগে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। তিনি জানান, জামায়াত ছাড়া ২০ দলকে এখন পর্যন্ত ১৫টি আসন ছাড়া হয়েছে। সব মিলে কতটি আসন বিএনপি ছাড়বে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে ৬০টির বেশির হবে না। এটা এদিক সেদিক হতে পারে।
এদিকে নিজ বাসায় মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বৈঠক শেষে গণফোরামের সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা গণফোরাম ৩০-৪০টি আসন চেয়েছি। তার মধ্যে ঢাকাতে দুটি আসন থাকতে হবে। কামাল বলেন, আপাতত মনোনয়ন জোটগতভাবে হচ্ছে না।

আলাদা আলাদা হচ্ছে। পরে বসে এগুলোকে সমন্বয় করা যাবে। তিনি বলেন, সময় স্বল্পতার জন্য এখন দলীয়ভাবে হচ্ছে। তবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
বিএনপি ও জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত ২৫টি আসনে জামায়াতের প্রার্থী দেয়ার ব্যাপার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মাওলানা আবদুল হাকিম ঠাকুরগাঁও-২, মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ দিনাজপুর-১, মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম দিনাজপুর-৬, মনিরুজ্জামান মন্টু-৪. নীলফামারী-২, মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম- নীলফামারী-৩, অধ্যাপক গোলাম রব্বানী রংপুর-৫, মাজেদুর রহমান সরকার গাইবান্ধা-১, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ-৪, মাওলানা ইকবাল হুসাইন পাবনা-৫, অধ্যাপক মতিয়ার রহমান ঝিনাইদহ-৩, আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন যশোর-২, অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ বাগেরহাট-৩, অধ্যাপক আবদুল আলীম বাগেরহাট-৪, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনা-৫, মাওলানা আবুল কালাম আযাদ খুলনা-৬, আবদুল খালেক সাতক্ষীরা-২, মুফতি রবিউল বাশার সাতক্ষীরা-৩, গাজী নজরুল ইসলাম সাতক্ষীরা-৪, শামীম সাঈদী পিরোজপুর-১, ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা-১৫, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী সিলেট-৫, মাওলানা হাবিবুর রহমান সিলেট-৬, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের কুমিল্লা-১১, আ ন ম শামসুল ইসলাম চট্টগ্রাম ১৫ ও হামিদুর রহমান আযাদ কক্সবাজার-২। এসব আসনের বিষয়েও প্রার্থী চূড়ান্ত হবে শেষ মুহূর্তে। এ ছাড়া জামায়াতের প্রার্থীরা কী প্রতীকে নির্বাচন করবেন তা এখনো ঠিক হয়নি। এদিকে ৯টি আসনে ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়নের চিঠি পেয়েছে ঐক্যফ্রন্টের শরিক নাগরিক ঐক্য। গতকাল সকাল থেকে এসব চিঠি প্রার্থীদের হাতে তুলে দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। এ সময় তিনি জানান, নাগরিক ঐক্যের ৯ প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। জোট সূত্র জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত তাদের সবাই নির্বাচন করবেন না।

যাদের চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হবে তারাই কেবল নির্বাচনে লড়বেন। নাগরিক ঐক্যের মনোনয়নপ্রাপ্তরা হলেন, বগুড়া-২ আসনে মাহমুদুর রহমান মান্না, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এস এম আকরাম, চাঁদপুর-৩ আসনে অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকার, ময়মনসিংহ-২ আসনে অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা-২ আসনে ড. রবিউল ইসলাম, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মো. মোবারক হোসেন, বরিশাল-৪ আসনে জে এম নুরুর রহমান, রংপুর-৫ আসনে মোফাখখারুল ইসলাম নবাব ও রংপুর-১ আসনে শাহ মো. রহমতউল্লাহ। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদকে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে ধানের শীষের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। গণফোরামের প্রার্থী সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়ার হবিগঞ্জ-১ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পাচ্ছেন এটা অনেকটা নিশ্চিত। দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু ঢাকার একটি আসন থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন।

ঢাকার আরেকটি আসন থেকেও গণফোরামের প্রার্থী দেয়া হতে পারে। সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে পাবনা থেকে মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে ঐক্যফ্রন্টের হয়ে লড়বেন এটি নিশ্চিত। এ ছাড়া তার স্ত্রী ও দলের সহ-সভাপতি তানিয়া রব ঢাকা-১৮ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। এ ছাড়া জেএসডি সাধারণ সম্পাদকসহ আরো দু’একজন চূড়ান্ত মনোনয়ন পাচ্ছেন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ কয়টি আসন পাচ্ছে তা এখনো পরিষ্কার হয়নি। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আলোচনা করে দুই একদিনের মধ্যেই তাদের আসনের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে। ২০ দলের শরিক এলডিপিকে গতকাল পর্যন্ত চারটি আসনে ছাড় দিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা আরো কয়েকটি আসনে প্রার্থী দিতে চাইছেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version