এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। তারা সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়ন করেই চলছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এই অবস্থায় কতটুকু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব? গতকাল বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ফখরুল বলেন, উনার কথার প্রতিক্রিয়া আমি দিতে চাই না কখনো। কারণ উনি অধিকাংশ অবান্তর কথা বলেন। ফখরুল বলেন, নির্বাচনটা দিন না সুষ্ঠুভাবে। দেখেন কে কতটা আসন পান।

আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি। ৩০টার বেশি আসন পাবেন না। তিনি বলেন, এত দুশ্চিন্তা কেন? এর আগে বলেছেন আমরা নাকি নির্বাচনে প্রার্থী খুঁজে পাব না। পরে দেখা গেল প্রতিটা আসনে দুইজন তিনজন করে প্রার্থী দিয়েছি। এখন বলছেন নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকবো কিনা সন্দেহ আছে। ফখরুল বলেন, আমরা নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকবো বলেই নির্বাচনে এসেছি। এত লড়াই সংগ্রাম করছি। তিনি বলেন, সারা দেশে আমাদের যারা প্রার্থী হয়েছেন প্রত্যেকের নামে একাধিক মামলা আছে। আমার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় মামলার বিবরণ দিতে ৪ পৃষ্ঠা লেগেছে। ফখরুল বলেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে কিনা তা নির্ভর করবে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ওপর।

আমরা বিগত ৭ বছর সংবিধান সংশোধনসহ নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি। আমরা আলোচনা করেছি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও। কিন্তু কিছুই করেনি। সরকার এসবে কোনো কর্ণপাত না করে একতরফা নির্বাচন করতে ও তাদের নিলনকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। আমরা বারবার অভিযোগ করার পরও আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেই চলেছে। কোনো ধরনের লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়নি। বর্তমানে যে অবস্থা তাতে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। ফখরুল বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ করেছিলাম। সেখানে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তফসিলের পর কোনো গ্রেপ্তার হবে না। কিন্তু বর্তমান প্রশাসন সরকারের নির্দেশে আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেই চলেছে।

এভাবে নির্বাচনের মাঠে খারাপ পরিবেশ তৈরি হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, ৮ তারিখে তফসিল ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জে ২৫ জন, ঢাকা মহানগরে ৩৯৪ সহ, মানিকগঞ্জ ও বগুড়ায় ৫৩৭ জন। ২৬ তারিখে ৩ জনসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে এখনও বলছি এসব বন্ধ করতে হবে। তা না হলে নির্বাচনের পরিবেশ কি হবে তা আমরা বলতে পারছি না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিচার বিভাগকে সরকার পুরোপুরিভাবে করায়ত্ত করে ফেলেছে। বৃহস্পতিবারও আমাদের সিনিয়র নেতা খায়রুল কবির খোকনকে আদালত জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অন্যদিকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। পুরো জাতিকে তারা সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাই কোনো ধরনের সংঘাত হলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটা জিনিসকেই ভয় পান।

সেটি হলো সুষ্ঠু নির্বাচন। নির্বাচনকে তিনি ভয় পান বলেই নিলনকশা বাস্তবায়নে সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। আর বর্তমান নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এগুলো করছে। এ সময় তিনি বলেন, শনিবার বা রোববার আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিতে যাব। ইতিপূর্বে আমরা বহু চিঠি দিয়েছি। তাতে কোনো কাজ হয়নি। তারপরও আমরা যাব। জামায়াতকে কত আসন ছাড়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ জামায়াত নেই। এখন সব ধানের শীষ। জামায়াতের কোনো প্রার্থী নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী কোন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেয়ার সময় শোডাউন বা মিছিল করতে পারবেন না। সমাবেশে বক্তব্য রাখতে পারবেন না। কিন্তু আমার আসনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মনোনয়ন জমা দেয়ার সময় শোডাউন করেছেন। মোটরসাইকেল শোডাউন করেছেন। এ সময় বেশ কয়েকটি ছবি দেখিয়ে বলেন, ওবায়দুল কাদের শোডাউন করেছেন, সমাবেশ করেছেন। সেখানে বক্তব্য দিয়েছেন। এসবের ছবিসহ ভিডিও আছে আমার কাছে।

তিনি বলেন, এই আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে আমি নির্বাচন কমিশনে একটি চিঠি দিয়েছিলাম ২০ তারিখে। কিন্তু তার কোনো প্রতিকার পাইনি। পরে ২৮ তারিখ আমি মোবাইলে সিইসির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, বিষয়টা আমি দেখি না। আমাকে এখনো এই ধরনের কিছু জানানো হয়নি। তারপরও আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। কিন্তু কোনো ধরনের পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত তিনি নেননি। এ সময় মওদুদ আহমদ বলেন, এই নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তারা বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু ইসি মূলত বর্তমান সরকারের তল্পিবাহক হিসেবে কাজ করছে। তাদের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, আমি ৫ বার নির্বাচিত হয়েছি। প্রায় ৬০-৭০ ভাগ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছি। ২০০৮ সালের পরিকল্পিত নির্বাচনে ওবায়দুল কাদের মাত্র ১৩ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন। অথচ আমি এর আগে ৮৬ হাজার ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছি। যাক এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না। গত ৫ বছরে আমার ২১ হাজার নেতাকর্মীকে জেলে পাঠানো হয়েছে।

ঘরবাড়ি, দোকানপাট লুট করে নেয়া হয়েছে। গত রমজানের ঈদে আমার নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ৭ দিন ঘর থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। পুলিশ পিকআপ বাড়ির রাস্তার মাঝখানে এলোপাথাড়ি করে রাখা হয়েছিল। কোরবানির ঈদেও আমাদের ঘর থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, আশা করেছিলাম তফসিল ঘোষণার পর থেকে এসব বন্ধ হবে। কিন্তু হয়নি। আমার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। বিনা দ্বিধায় বলতে পারি সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষ বিপুল ভোটের ব্যবধানে জিতবে। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version