এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : চীনের জিনজিয়াংয়ের বন্দিশিবির পুরো দেশেই সম্প্রসারণ করা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নতুনভাবে স্বাক্ষরিত একটি সন্ত্রাসবিরোধী চুক্তির কারণে এ সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি হুই মুসলিমদের আবাসস্থল নিংজিয়ার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জিনজিয়াংয়ের সাথে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা চুক্তিতে সই করে।

এ চুক্তির অংশ হিসেবে জিনজিয়াং কিভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং ধর্মীয় ব্যাপারটি আইনগতভাবে মোকাবেলা করছে তা দেখতে নিংজিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান জেং ইউনশেং জিনজিয়াং গেছেন। ২০ লাখ উইঘুর মুসলমানের আবাসস্থল জিনজিয়াংয়ের ১০ লাখ লোকই সেখানকার বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটক রয়েছেন।

চীনের হিউম্যান রাইট ওয়াচের ঊর্ধ্বতন গবেষক মায়া ওয়াং বলেন, এই চুক্তি এবং তার পরবর্তী বিষয়গুলোর কারণে জিনজিয়াং মডেলের নির্যাতন চীনের অন্যান্য প্রদেশে ছড়িয়ে পড়া এবং সেখানকার ধর্মীয় স্বাধীনতা বিনষ্ট হওয়ার ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে। নিংজিয়ার ৬৮ লাখ অধিবাসীর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ হুই মুসলিম।

সেখানে শব্দ দূষণের অজুহাতে ইতোমধ্যেই মসজিদের মাইকগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে, আরবের নকশার সুউচ্চ মসজিদে আপত্তি দেয়া হয়েছে, আরবি ভাষা ও রোজার দিনগুলোতে রোজা রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, হালাল খাদ্যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে সরকার একটি মসজিদও ভেঙে ফেলে।

সেখানে মুসলমানদের পক্ষে কোনো কথা বললেই পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বন্দিশিবিরে আটক করে রাখছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ইসলাম বা মুসলিমদের পক্ষের কথা মুছে ফেলতে বাধ্য করছে। জিনজিয়াংয়েও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। কয়েক বছর ধরে শি জিনপিংয়ের প্রশাসন পুরো চীনজুড়েই ধর্মের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। সব ধর্মকে চীনের আদলে নিয়ে আসার সে প্রচেষ্টায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও মুসলমানেরা।

সম্প্রতি চীনের জিনজিয়াংয়ে মুসলমানদের একটি বন্দিশিবিরের সন্ধান পাওয়া গেছে। কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা সে স্থানটির নাম দেয়া হয়েছে, বৃত্তিমূলক দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। জাতিসঙ্ঘ দাবি করছে, জিনজিয়াংজুড়ে বিভিন্ন বন্দিশিবিরে ১০ লাখ উইঘুর মুসলমান বন্দী রয়েছে। ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের কমপক্ষে ১২টি দেশ তাদের এ বন্দিশিবির বন্ধ করে দিতে আহ্বান জানায়।

যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও চিন্তা-ভাবনা করছে। চীন প্রথম দিকে এ ধরনের বন্দিশিবিরের কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেছিল। তবে পরে তারা জানায়, এগুলো বন্দিশিবির নয়, বরং এগুলো বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কিন্তু এসব বন্দিশিবির থেকে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সেখানে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন চালানো হয় এবং চীনের শাসকদল কমিউনিস্ট পার্টির প্রশংসা করতে বাধ্য করা হয়। তাদের নির্মম অত্যাচারের পরিপ্রেক্ষিতে মৃত্যু কামনা করেন বন্দীরা।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version