এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে এবার ভোট বিপ্লব হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, জগাখিচুড়ি ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে এবার ভোট বিপ্লব হবে। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা উদ্বিগ্ন হচ্ছেন, দেশি- বিদেশি সবাইকে বলতে চাই, এবারের নির্বাচন খুব সুন্দর হবে। অনুকূল পরিবেশে জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দিতে পারবেন। এখানে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ হবে না। নির্বাচন কমিশনকে যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, শেখ হাসিনার সরকার সব ধরনের সহায়তা করছে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভূমিকা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা এখনো নির্বাচন বানচাল করা থেকে পিছু হটেনি।

আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে তারা নাশকতা ও সহিংসতার পথে যেতে পারে।

তারা যা যা বড় গলায় বলেছিল, এক মাসের মধ্যে চেহারা পাল্টে দেবে। চেহারা কোথায় পাল্টালো? মওদুদ সাহেব বলেছেন, তাকে হাজার হাজার মানুষ এসকর্ট করে এলাকায় নিয়ে যাবে। কই, সে ছবি বাস্তবে নেই। এমনকি মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষদিনে ঢাকায় বিএনপির যে শোভাযাত্রা ছিল, তাতে কোনো উৎসব ছিল না। কারণ, তারা বুঝে গেছে এই নির্বাচনে তাদের জয়ের কোনো আশা নেই। তাদের এখন কথা ছাড়া কোনো পুঁজি নেই। তারা যদি নাশকতা করে, এবার দেশের জনগণই প্রতিরোধ করবে। জামায়াতের অনেককেই বিএনপির মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, জামায়াত এবং বিএনপির নীতি-আদর্শ একই। আগে মনে করা হতো স্ট্র্যাটেজিক বিষয়ে তারা সঙ্গে আছে। কিন্তু না, স্ট্র্যাটেজিক কোনো বিষয় না। তাদের সম্পর্কটা একেবারেই নীতি আদর্শের ব্যাপার। তাদের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য এবং কর্মকাণ্ড একই। সারা বছরই তারা একসঙ্গে কাজ করে। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। তিনি বলেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয় আদালতের এখতিয়ারে।

এই বিষয়টা এখন সরকারের এখতিয়ারে নেই। ২৪ দিন বাকি, এই সময় সামনে রেখে আদালত ও তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। আমার বিশ্বাস, জামায়াতের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের যে পর্যবেক্ষণ, আমার মনে হয় আদালতের গোচরেও তা গেছে। বিএনপি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বিএনপির বন্ধুত্ব এখনো অটুট। বন্ধুহীন হয়ে পড়বে, এটা এই মুহূর্তে বলছি না। তবে উন্নত গণতান্ত্রিক বিশ্বে বিএনপি ক্রমেই বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, অন্যায় আর অসত্যের সঙ্গে কেউ থাকে না। বিএনপি অনেক দেশে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। কই, আওয়ামী লীগ তো লাখ লাখ ডলার দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করতে যায়নি? বিএনপি লাখ লাখ ডলার খরচ করেও মার্কিনিদের সাড়া পাচ্ছে না। তিনি বলেন, বিএনপি অগণতান্ত্রিক আচরণ করতে থাকবে, আর অন্যরা (বিদেশি রাষ্ট্র) সমর্থন করতে থাকবে-এটা হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি আমাদের কথায় চলে? শেখ হাসিনা সরকারের আন্ডারে নাকি তারা? ওদের নিজস্ব সত্তা আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কার পক্ষে থাকবে, আর কার পক্ষে থাকবে না, এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়াশিংটনের ব্যাপার। হাউস অব কমন্স ও কংগ্রেসের প্রতিবেদন নিয়ে মাথা ঘামান না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে গণতন্ত্রের চর্চা আছে। তবে হাউস অব কমন্স, কংগ্রেসে তারা যেসব আলোচনা করেন, এখানে নানা বিষয় আছে। সেখান থেকে একটা বিষয় নিয়ে স্বার্থের অনুকূলের অংশ নিয়ে ব্যবহার করে, এটা হয়তো আপাতদৃষ্টিতে সমস্যার কারণ। হয়তো টোটাল প্রতিবেদন একরকম। সেখান থেকে কোনো একটা অংশ নিয়ে, কেউ কেউ রাজনৈতিক স্বার্থে নির্বাচনের ওপর প্রভাব বিস্তারে, অনেকেই এসব করে থাকে। নির্বাচন এলে এগুলো বেশি হয়। তাই প্রতিবেদনে কি কি থাকলো এটা আমাদের দেখার বিষয় না। আমাদের পক্ষে বললেও আমরা সেটাকে এভাবে দেখবো না।

কি প্রতিবেদনে এলো সেটা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। আমরা দেখবো জনগণের সমর্থন। আমাদের কনফিডেন্স আছে, বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। মানুষ আজ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। আমাদের বিশ্বাস সারা দেশে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিজয়ের মাসে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে। নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার ব্যাপারে বিএনপির অভিযোগের প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ শুরুতেই তারা নষ্ট করেছে। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। সেই অবস্থা কাটিয়ে এখন সুন্দর একটা পরিবেশ বিরাজ করছে। বিদেশি যারা আসছেন, তারা আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তারা পরিস্থিতি অনুকূল পাচ্ছেন। বিএনপি শঙ্কা করবে, এটা তাদের পুরনো অভ্যাস। পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গণনা পর্যন্ত তারা শঙ্কা প্রকাশ করেছে। এটা তাদের পুরনো অভ্যাস, এটা তারা করবেই। একটা ভাঙা রেকর্ড, এটা তারা বাজাতেই থাকবে। এ নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। কারণ, আমরা জানি সুষ্ঠু, সুন্দর, স্বচ্ছ একটা নির্বাচন হবে।

পরিবেশ নষ্ট করে আমাদের লাভ কি? ক্ষতিটা তো আমাদেরই হবে। সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে জানান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন আপনি মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, তাদের গুণধর ব্যারিস্টার সাহেব আগের দিন জমা দিয়েছেন। উনি তো শোডাউন করেছেন লাঠি নিয়ে। মওদুদ সাহেব যদি শোডাউন না করতেন, তাহলে আমাকে বলতে পারতেন। আমি কাউকে বলিনি শোডাউন করার জন্য। আমি দুইশ’ গজের মধ্যে কাউকে যেতে দেইনি। শুধু আমার পার্টির উপজেলা পর্যায়ের ৮-১০ জন নেতা নিয়ে গেছি। ২৬ তারিখে লাঠি নিয়ে মওদুদ সাহেব যে শোডাউন করলেন তাতে কি আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি? মার্কিন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যেভাবে সহায়তা করার কথা সেরকম সহায়তা বিএনপি পাচ্ছে না বলে মির্জা ফখরুলের অভিযোগের ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই প্রশ্ন মার্কিনিদের করা উচিত। মার্কিনিরা কী আমাদের কথায় চলে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কার পক্ষে থাকবে, এটা তাদের ব্যাপার।

এতো দেন-দরবার করে সাড়া পাচ্ছেন না কেন, এই জবাব বিএনপিকেই দিতে হবে, এখানে আমাদের করার কিছুই নেই। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version