এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অন্তরালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পার্টির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তিনি অসুস্থ। কয়েক দফায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও থাকছেন অন্তরালে। নেতাকর্মীরা দেখা পাচ্ছেন না। কথা বলতে পারছেন না। পার্টির সিদ্ধান্ত কারা নিচ্ছেন, কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাও জানতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ শুক্রবার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন তিনি।

বাসায় ফেরার পর পার্টি মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জানিয়েছেন, এরশাদ সুস্থ আছেন। তিনি শিগগির নির্বাচনের মাঠে নামবেন।

তবে সহসা তার দৃশ্যপটে আসার লক্ষণ দেখছেন না নেতাকর্মীরা। তারা প্রশ্ন তুলছেন পার্টি চেয়ারম্যান তবে কি স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি হয়ে আছেন। নাকি অন্য কোনো কারণে তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। দলীয় সূত্রের দাবি স্বাভাবিক অবস্থায় এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এরশাদ এভাবে অন্তরালে থাকতে পারেন না। অদৃশ্য কারণে তিনি হয়তো এমন অবস্থান নিয়েছেন।

জাপা চেয়ারম্যান সর্বশেষ ২০শে নভেম্বর পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিতে গুলশানের ইমানুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ওই অনুষ্ঠানে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা থাকলেও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। ওই অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেছিলেন দলীয় মনোনয়ন দেয়ার এখতিয়ার কেবলমাত্র তার। যেকোনো জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্তও তিনিই নেবেন। তার বক্তব্য দেয়ার পর দলে আলোচনা ছিল এরশাদ নির্বাচনী জোটে অংশ নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত বদল করতে যাচ্ছেন কিনা? তার এ বক্তব্য দেয়ার পর তিনি ফের হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই সময় এরশাদের অবস্থা গুরুতর দাবি করে সিঙ্গাপুর নেয়ার আলোচনা চলছিল। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার বিষয়ে বলেছিলেন, এরশাদ সাহেব গুরুতর অসুস্থ, তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হতে পারে। পরে অবশ্য জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছিলেন, পার্টি চেয়ারম্যান সুস্থ হয়ে উঠছেন, তাকে আর সিঙ্গাপুর নেয়া লাগবে না।

সর্বশেষ হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর এরশাদ নেতাকর্মীদের থেকে অন্তরালে থাকায় নতুন করে রহস্য দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তিনি বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে অবস্থান করলেও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ হচ্ছে না। দলের সিনিয়র নেতারও সেখানে যাচ্ছেন না। নেতাকর্মীরা তার কাছ থেকে কোনো বার্তাও পাচ্ছে না। এরশাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেন এমন নেতারা প্রেসিডেন্ট পার্কে যাচ্ছেন না খুব একটা।

পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের অবস্থান নিয়েও রহস্য দেখা দিয়েছে। এরশাদ কর্তৃক পার্টির একমাত্র মুখপাত্র নিয়োগ পাওয়ার পর তিনিও অনেকটা কোণঠাসা অবস্থানে আছেন। সর্বশেষ গতকাল পটুয়াখালী-১ আসনে তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। দলীয় মনোনয়নে বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠার পর নানাভাবে তা সামলানোর চেষ্টা করেছেন হাওলাদার। সবশেষ নিজের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় তিনি এখন নতুন চ্যালেঞ্জে পড়েছেন। পার্টি সূত্র বলছে, যে কারণে এরশাদ রহস্য অবস্থানে আছেন একই কারণে হাওলাদারও চাপে পড়েছেন। পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকেও দৃশ্যপটে দেখা যাচ্ছে না। দলের হাল হকিকত সম্পর্কে তিনি তেমনটা ওয়াকিবহালও নন।

তফসিল ঘোষণার আগে তৎপরতা থাকলেও এখন পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদও আছেন নীরব ভূমিকায়। দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, শীর্ষ নেতৃত্বের এমন অবস্থানে সারা দেশের নেতাকর্মীরা দিকভ্রান্ত। এখন পর্যন্ত জানা যায়নি কতোটি আসনে জাপা নির্বাচন করছে। এককভাবে নাকি মহাজোটগতভাবে নির্বাচন হচ্ছে এটিও খুব জোরালোভাবে স্পষ্ট করেননি নেতারা। শুধু বলছেন, জাতীয় পার্টি মহাজোটের সঙ্গী হয়েই নির্বাচন করছে। এখন আসন নিয়ে দরকষাকষি চলছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version