এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগের (বিদ্রোহী) অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন তালিকায় ত্রুটি থাকায় বেশির ভাগের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এছাড়া তাদের কেউ কেউ ঋণ খেলাপি বা হলফনামায় ভুল তথ্য দেয়ায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে অন্তত ৯১ জন প্রার্থী হয়েছিলেন যাদের নিয়ে দলেও অস্বস্তি রয়েছে। তাদের একটি বড় অংশের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে যাচাই-বাছাইয়ে।
দেশের সবচেয়ে ছোট জেলা মেহেরপুরের দুটি আসনে ১০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জনই আওয়ামী লীগের নেতা। তারা হলেন- মেহেরপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম। পাশাপাশি মেহেরপুর-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন না থাকায় জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, আওয়ামী লীগ নেতা মখলেছুর রহমান মুকুল, গাংনীর সাবেক মেয়র আহম্মেদ আলী, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নূরজাহান বেগমের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা।
বান্দরবানে মনোনয়ন বাতিল হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মীপদ দাশের।
বগুড়া-৪ আসনে কামাল উদ্দীন কবিরাজ, এ এন এম আহসানুল হক এবং ইউনুস আলী মন্ডলের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। বরিশালে রুবিনা আক্তার, ক্যাপটেন মোয়াজ্জেম ও ফায়জুল হক রাজুর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। সাতক্ষীরায় বিএম নজরুল ইসলাম, বিশ্বজিত সাধু, পিরোজপুরে গোলাম হায়দার, কুষ্টিয়ায় আফাজ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুর রউফ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আনিছুর রহমান, নীলফামারীতে আখতার হোসেন বাদল, আমেনা কোহিনুর আলম, আমিনুল ইসলাম ও ইঞ্জিনিয়ার সেকেন্দার আলী, কুমিল্লায় মো. আবদুল মজিদ, জাহাঙ্গীর আলম সরকার, আহসানুল আলম কিশোর, মো. আবুল কালাম আজাদ, গাজীপুরে কামাল উদ্দিন সিকদার, নারায়ণগঞ্জে ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম ও কাউসার আহমেদ পলাশের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ গতকাল মানবজমিনকে বলেন, দলের মনোনয়ন সিদ্ধান্ত না মেনে অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন। যারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন তাদেরকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। এদিকে সারা দেশে ৩০০ আসনে দলীয় বা মহাজোটের প্রার্থীর কি অবস্থা তা লিখিত আকারে জমা দিতে কেন্দ্রীয় পাঁচ নেতাকে দল থেকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক ও আফজাল হোসেন। এজন্য তাদের ৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, দলের চিঠি ছাড়া যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আগামী ৭ই ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হবে। ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৯ই ডিসেম্বরের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে। যদি তা না করেন তাহলে তাদের জন্য আওয়ামী লীগের দরজা চিরদিনের জন্য বন্ধ করা হবে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার রাতে গণভবনে দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে দল ও মহাজোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহী হয়েছেন তাদের উদ্দেশে এমন হুঁশিয়ারি দেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতা মানবজমিনকে বলেন, এসব ্তুস্বতন্ত্র্থ প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের ঘুম হারাম করছে। ‘বিদ্রোহী’ এসব প্রার্থী শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে টিকে থাকলে দুশ্চিন্তা বাড়বে দলীয় প্রতীকধারীদের। দলীয় পদধারী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিবৃত্ত করতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।