এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক পাওয়ার পর আমাদের কেউ আটকাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, এখন নানা প্রতিবন্ধকতা আছে এটা ঠিক। কিন্তু মার্কা বের হওয়ার পর আমাদের কেউ আটকাতে পারবে না। গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বর্তমান নির্বাচন পরিস্থিতি এবং নিজের নির্বাচনী এলাকা নিয়ে কথা বলতে এ সংবাদ সম্মেলন করেন মান্না। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই দেশের সন্তান। আপনারা নাগরিকদের করের টাকায় বেতন পান।

আমরা এমন একটা রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি, যেখানে নাগরিকগণ রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে তার সেবক হিসেবে পাবে এবং সবাই শান্তিতে সহাবস্থান করবে। কিন্তু সেই সহাবস্থানের জরুরি পূর্বশর্ত হলো- পুলিশ বর্তমানে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের যে হয়রানি করছে সেটা এই মুহূর্তেই সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রশাসনের ন্যক্কারজনক পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের ফলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা তৈরি হলে যে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে তার সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব প্রশাসন এবং পুলিশকে বহন করতে হবে। সবার মনে রাখা উচিত এই সরকারই শেষ সরকার নয়। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর পর দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু এই নির্বাচনটি আদৌ ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য হবে কিনা সেটা নিয়ে গুরুতর সন্দেহ রয়েছে। বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের আচরণ আমাদের সমাজে এই সন্দেহ প্রতিদিন আরো বৃদ্ধি করছে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিরোধী দলের জন্য পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হওয়ার প্রত্যাশাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে সরকার। প্রতিদিন নতুন করে পরিস্থিতি আগের চেয়ে বেশি খারাপ হচ্ছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের একাকার হয়ে যাওয়ায় জনগণের মনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, সরকার একটি নীল-নকশার নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় থেকে যেতে চাইছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ধারে কাছেও নেই। একদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নিচ্ছে, অন্যদিকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন তীব্র হচ্ছে। মান্না বলেন, কথাগুলো আমাদের না। এই কথাগুলো বলা হয়েছে বৃটিশ এমপিদের জন্য তৈরি হাউস অব কমন্সের লাইব্রেরির গবেষণাপত্রের মূল্যায়নে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়- প্রতিদ্বন্দ্বিতার নিয়মকানুনের প্রতি সার্বিক আস্থার মাত্রা তলানিতে রয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় পুরো প্রশাসন ইসির অধীনে চলে না গেলেও সংবিধানের ১২০ এবং ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কমিশন যেকোনো প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সমর্থন সরকারের কাছে চাইলে সরকার সেটা দিতে বাধ্য থাকে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রতি কোনোরকম চাপ সৃষ্টি করছে না। বরং সরকার যা বলছে সেটাই করছে। কমিশনার রফিকুল ইসলামের বক্তব্য সেটাকে স্পষ্ট করেছে। বিরোধী দলকে সর্বোচ্চ চাপে রেখে একতরফা একটা নির্বাচন করার যে নীলনকশা ধরে সরকার এগিয়ে চলছে, অত্যন্ত হতাশাজনকভাবে নির্বাচন কমিশন সেই নীলনকশা বাস্তবায়নে পূর্ণ সহযোগিতা করে যাচ্ছে। মান্না বলেন, এই নীলনকশার অংশ হিসেবেই সারা দেশে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গায়েবি মামলা দিয়ে অসংখ্য মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেককে গুম করা হচ্ছে।

অবিশ্বাস্যভাবে এই গ্রেপ্তারের তালিকায় অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছে। একজন সম্ভাব্য প্রার্থীকে হোটেল রুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে লাশ বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়ার সংবাদও আমরা পেয়েছি। তিনি বলেন, নির্বাচনের আর খুব কম সময় বাকি থাকলেও এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো কথা বলছে না। মান্না বলেন, মামলা দিয়ে হয়রানির মাধ্যমে বিরোধী দলের কর্মীদের নিপীড়নের ধারা চলছে আমার নির্বাচনী এলাকাতেও। আমার নির্বাচনী এলাকা বগুড়া-২ এর শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক পৌরসভার মেয়র মতিয়ার রহমান মতিনকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। জয়পুরহাট জেলার কালাই-এর স্থানীয় কর্মকারদের তৈরি হাঁসোয়া উদ্ধার মামলায় স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির মদতে মতিনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমার নির্বাচনী এলাকার কর্মীদের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানুষ মতিনের বিরুদ্ধে এই রকম হয়রানিমূলক মামলা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে প্রশাসন আমার নির্বাচনী কাজে বাধা সৃষ্টি করতে চাইছে।

এলাকার কর্মীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় মতিন। এমন মামলায় জড়িত করা কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অবিলম্বে মতিনকে এই মামলা থেকে মুক্তির দাবি জানান মান্না। এ ছাড়া বগুড়া সদর থানা ছাত্রদল আহ্বায়ক সিফাদ সরকার, শিবগঞ্জ উপজেলার সৈকত, নাহিদ, আব্দুস সালাম, শাহজাহানপুর উপজেলার আব্দুল মজিদ, হজরত, সুজাউল সোনাতলা উপজেলার আহসান হাবিব রাজা, আহসান হাবিব রাসেল, ধুনট উপজেলার রেজাউল হক দুলাল, বাদশাহ, চান মিয়া, আমজাদ হোসেনসহ সকল কর্মীর দ্রুত মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহার দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহে আলম, নাগরিক ঐক্যের সদস্য ফজলুর রহমান, শহিদুল্লাহ কায়সার, নজরুল ইসলাম, আতিকুর রহমান প্রমুখ।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version