এম মাহাবুবুর রহমান

বাস্তবতা হলো বাংলাদেশে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনটি একটি ভারত নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন (এখন পর্যন্ত)! নির্বাচন অায়োজন, ফরমেট তৈরী এবং সব পক্ষকে একটি সিস্টেমে নিয়ে অাসার স্ক্রিপ্ট লিখেছে প্রতিবেশী দেশটি। সফলতার সাথে বাস্তবায়নও করে যাচ্ছে। এই নির্বাচনকে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের ধারাবাহিকতা বললে অত্যুক্তি হবে না। তবে ফলাফল নিয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে। এই কথাগুলো বিশ্বাস করাটা কঠিন। কিন্তু এটাই বাস্তবতা।

তাহলে প্রশ্ন জাগে, এমন নির্বাচনে জনগণের ভূমিকা কী হবে? এই প্রশ্নের জবাব পাওয়ার সুযোগ এখনো আসেনি। আগামীকাল থেকে কেবল দুই জোটের প্রার্থীরা নির্বাচনী যুদ্ধ শুরু করবেন। অারো দুই সপ্তাহ গেলে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। তখন জনগণের ভুমিকা রাখার সুযোগ অাসবে। যদিও স্ক্রীপ্টে জনগণের ভুমিকাও নির্ধারিত এবং টাইম টু টাইম তা আপডেট হবে। এরপরও স্ক্রীপ্টের বাইরে গিয়ে যদি জনগণ ভুমিকা রাখতে পারে, তখনই বাংলাদেশের মানুষের প্রকৃত মুক্তি সম্ভব হতে পারে।(তরুন প্রজন্মের গত দুইটি অান্দোলন উদাহরণ হতে পারে)।    স্ক্রীপ্টে এটাও বিবেচিত হয়েছে যে, শেখ হাসিনার জোটের সাথে আছে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র ও সুবিধাভোগী গোষ্ঠী। অন্যদিকে বিএনপি জোটের পেছনে অাছে জনগণের মুক্তির আকাঙ্থা। দুই জোট দুই শক্তির ওপর নির্ভর করে ভোটে অংশ নিয়েছে।

মনোনয়ন ও মার্কা চুড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রীয় শক্তি (নির্বাচন কমিশন, ডিসি ও পুলিশ) ইতোমধ্যে শেখ হাসিনাকে সুবিধা দেয়া শুরু করেছে। প্রার্থী মনোনয়নে আওয়ামী জোটে জনপ্রিয়তা কিংবা ভাল প্রার্থী বিবেচ্য নয়। শেখ হাসিনার পছন্দই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা নির্বাচনে রেফারি-সমেত  দৃশ্যত পুরো শক্তিই শেখ হাসিনার কোর্টে। সেজন্য শেখ হাসিনা কিছুটা নির্ভার অাছেন এখনো।

তবে, বিএনপি এখনো জনগণের মুক্তির আকাঙ্খায় সেভাবে নাড়া দিতে পারেনি। প্রার্থী মনোনয়নে ৭/১০ পারসেন্ট ভুল হওয়ায় শুরুতেই সেখানে বিএনপি কিছুটা খারাপ পজিশনে পড়েছে। এরপরও ৯০/৯৩ পারসেন্ট সঠিক প্রার্থী তাদের পুরো সামর্থ্য দিয়ে জনগণের মাঝে ওয়েভ তুলতে পারবে কি-না সেটাই বড় প্রশ্ন। সেক্ষেত্রে বিএনপি জোটের নির্বাচনী ইশতেহারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তরুনদের দুইটি সাম্প্রতিক আন্দোলনের অাবেগ ও ভারতের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি কিভাবে অ্যাড্রেস করা হয় – সেটি দেখা জরুরী। একইসাথে মনোনীত প্রার্থীরা তাদের ইশতেহারের আওয়াজ জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারলো কি-না এবং ভোটারের রেসপন্স কি হবে,  সেটাও দেখার বিষয়। সাথে নেতাকর্মীদের অাবেগে নাড়া দেবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ইসু্ ‌্যটি।

প্রশ্ন আসতে পারে, এমন কঠিন বাস্তবতা কেন পাবলিকলি লিখছি? এমন একটি নির্বাচনে বিএনপি কেন অংশ নিচ্ছে? প্রথম প্রশ্নের উত্তর হলো- জনগণের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট করা জরুরী। দৃশ্যত স্বৈরাচারের পেছনে কিভাবে আধিপত্যবাদ সফলভাবে এগিয়ে চলছে, তা দেশবাসীর জানা জরুরী। দেশপ্রেমিক জনতা জেগে উঠলে সবকিছু ওলটপালোট হয়ে যেতেও পারে।

দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব, আপনারা সবাই জানেন। কোনো বিকল্প না থাকায় এই নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হয়েছে বিএনপি। এরপরও একজন সংবাদকর্মী হিসেবে বিএনপি কিংবা ঐক্যফ্রন্টের বিষয়ে দায়িত্ব নিয়ে কোনো কমেন্ট করা আমার সমীচীন নয়। ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারেই তাদের রাজনৈতিক গতিপথ ও ভবিষ্যত চিন্তা-দর্শনকে আঁচ করা যাবে।

পাঠক, এরপরও কিছু বিষয় এখনই চিন্তা করে দেখতে পারেন। শেখ হাসিনার অধীনে জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী। খালেদা জিয়া নির্বাচনে প্রার্থী-ই হতে পারলেন না। এইচএম এরশাদ আওয়ামী জোটে থেকেও অন্তরালে। বৃদ্ধ লোকটি সঠিকভাবে চিকিৎসার অধিকারটুকু পাচ্ছেন না। জাতীয় পার্টির মহাসচিব দৃশ্যত সরকারের ইচ্ছায়ই পরিবর্তন হয়ে গেল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও বর্তমান বিকল্পধারার সভাপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী গত ১৯ নভেম্বর ভারতীয় হাইকমিশনারের সাথে বৈঠক করার পর শেখ হাসিনার সাথে দেখা করলেন। এরপর ছেলেকে এমপি বানানোর লক্ষ্যে নৌকায় উঠলেন। অন্যদিকে, ড. কামাল হোসেন বিএনপি জোটের প্রধান হলেন। কাদের সিদ্দিকী ভারত ঘুরে এসে বিএনপি জোটে যোগ দিলেন। কর্নেল অলি আহমেদ ভারত ঘুরে এসে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন মাঠে নামতেই তাকে কারাবন্দী করা হলো। এই প্রতিটি ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নবমাত্রা যোগ করেছে। আশার বিষয় হলো- এর মধ্যে স্ক্রীপ্টের বাইরে অনেক কিছু হতে শুরু করেছে। যদিও তারা আবার লাগামও টেনে ধরছে। দেখা যাক, শেষ অবধি কি হয়।

এমন পরিস্থিতিতে জনগণের দায়িত্ব কী হবে? এটা সত্যি-ই এক বড় প্রশ্ন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব নিয়ে কিছুদিন পরে আবার লিখবো।

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version