এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : মহাজোটের শরিক দলগুলোর জন্য ৪২ আসন রেখে ২৫৮ আসনে নৌকার প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দল ও জোটগত মনোনয়নে এবার পুরনো ও অভিজ্ঞদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আছেন নতুন মুখও। নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে গতকাল মহাজোটের হয়ে ২৯ আসনে নির্বাচন করার তথ্য জানিয়েছে জাতীয় পার্টি। যদিও প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়ে ২৬টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ।
এ ছাড়া জোটের অন্য শরিকদের জন্য ১৬টি আসন ছেড়েছে মহাজোটের প্রধান শরিক। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়াদের মধ্যে অন্তত ২৮ জন একেবারেই নতুন মুখ। এ ছাড়া জোটের কয়েকটি আসনেও নতুন প্রার্র্থী দেয়া হয়েছে।
গতকাল দল ও জোটের চূড়ান্ত প্রার্থীদের নামে প্রতীক বরাদ্দ করতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি ৫টি, জাসদ (ইনু-শিরীন) ৩টি, জাসদ (আম্বিয়া-বাদল) ১টি, যুক্তফ্রন্ট ৩টি, তরীকত ফেডারেশন ২টি, জাতীয় পার্টি জেপি (মঞ্জু) ২টি আসনে লড়ছে। এর মধ্যে ১৪টি আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন শরিক দলের প্রার্থীরা। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপি বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। আসনগুলো হচ্ছে- পিরোজপুর-২ আসনে আনোয়ার হোসেন ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনে মো. রুহুল আমিন।
এদিকে গতকাল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ২৯টি আসনে জোটগত নির্বাচন করবে জাতীয় পার্টি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগের পাঠানো তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেখানে ২৬টি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে জোটের প্রার্থী হিসেবে ছাড় দেয়া হয়েছে। এদিকে হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) তিনটি আসনে নৌকা ও পাঁচটি আসনে দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে ভোট করবে।
এ ছাড়া দলটির ৩৭ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে। গতকাল এ বিষয়ে হাসানুল হক ইনু স্বাক্ষরিত তিনটি পৃথক চিঠি দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছেন। একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, দশম সংসদের মতো একাদশ সংসদেও জাসদ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ১৪ দলীয় নির্বাচনী মহাজোট মনোনীত আওয়ামী লীগের জন্য সংরক্ষিত নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে জাসদ।
নৌকা প্রতীক নিয়ে জাসদের যেসব প্রার্থী ভোট করবেন, তারা হলেন-কুষ্টিয়া-২ আসনে হাসানুল হক ইনু, ফেনী-১ আসনে শিরীন আখতার ও বগুড়া-৪ আসনে একেএম রেজাউল করিম তানসেন। অন্য চিঠিতে বলা হয়েছে, জাসদের যেসব প্রার্থী দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে যারা ভোট করবেন তারা হলেন-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে অ্যাডভোকেট শাহ জিকরুল আহমেদ, গাইবান্ধা-৩ আসনের এসএম খাদেমুল ইসলাম খুদি, ময়মনসিংহ-৬ আসনে সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু, রংপুর-২ আসনে কুমারেশ চন্দ্র রায় ও বরিশাল-৬ আসনে মো. মোহসীন। নির্বাচন কমিশন সচিবকে লেখা পৃথক চিঠিতে এই বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়। এসব চিঠির অনুলিপি সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
অভিজ্ঞদের প্রাধান্য
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন ২৮ নতুন মুখ। এর মধ্যে সাবেক সচিব, সাবেক আইজিপি, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস, জাতীয় দলের ক্রিকেটার, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) ভাগনে ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন। কিশোরগঞ্জ-২ আসনে প্রথমবারের মতো নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ। সিলেট-১ আসনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেন। ফরিদপুর-১ আসনে নতুন মুখ হিসেবে আছেন রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মনজুর হোসেন।
এই আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাদ পড়েছেন। পটুয়াখালী-৩ আসনের এস এম শাহজাদা। তিনি বর্তমান সিইসি কে এম নূরুল হুদার ভাগনে। এই আসনের বর্তমান এমপি সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন বাদ পড়ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস-২) এবং ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান (শিখর) মাগুরা-১ আসনে প্রথমবারের মতো নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন। নতুন মুখ হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা নড়াইল-২ আসন থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন। এই আসনের এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ হাফিজুর রহমান বাদ পড়ছেন। বাগেরহাট-১ আসনের বর্তমান এমপি শেখ হেলাল উদ্দীনের ছেলে শেখ সারহান নাসের (তন্ময়) বাগেরহাট-২ আসনে প্রথমবারের মতো নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন। খুলনা-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন শেখ হেলালের ভাই শেখ সালাহউদ্দিন (জুয়েল)।
এই আসনের এমপি ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান বাদ পড়েছেন। আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রথমবারের মতো নেত্রকোনা-৩ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় দুই সাংগঠনিক সম্পাদক বাদ পড়েছেন, অন্য দুজন প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন। এর মধ্যে একেএম এনামুল হক (শামীম) শরীয়তপুর-২ ও প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল) চট্টগ্রাম-৯ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। শরীয়তপুর-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হকের পরিবর্তে নতুন মুখ হিসেবে এসেছেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন (অপু)। পার্শ্ববর্তী জেলা মাদারীপুর-৩ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান (গোলাপ)।
এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিমকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। পিরোজপুর-১ আসনের নতুন মুখ শ. ম. রেজাউল করিম। টাঙ্গাইল-৩ আসনে মনোনয়ন পাওয়া আতাউর রহমান খান খুনের মামলায় কারাবন্দি এমপি আমানুর রহমান খান রানার বাবা। ঢাকা-১৩ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। এখানকার বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাদ পড়েছেন। কুমিলা-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সেলিমা আহমাদ। টাঙ্গাইল-৮ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম। নওগাঁ-৫ আসনে নিজাম উদ্দিন জলিল চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের ছেলে।
নেত্রকোনা-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান। এই আসনের বর্তমান এমপি যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় মনোনয়ন পাননি। নেত্রকোনা-১ আসনে নতুন মুখ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মানু মজুমদার। তিনি বর্তমান এমপি ছবি বিশ্বাসের ভগ্নিপতি। গাজীপুর-৩ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন। এই আসনের বর্তমান এমপি প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মো. রহমত আলী বাদ পড়েছেন। পাবনা-২ আসনে আহমেদ ফিরোজ, খুলনা-৬ আসনে আকতারুজ্জামান বাবু এবং টাঙ্গাইল-৬ আসনে আহসানুল ইসলাম (টিটু) এবার মনোনয়ন পেয়েছেন।
নৌকা নিয়ে লড়বেন আওয়ামী লীগের ১৮ নারী প্রার্থী
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন আওয়ামী লীগের ১৮ নারী প্রার্থী। এ তালিকায় আছেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-গোপালগঞ্জ-৩, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী- রংপুর-৬, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী-ফরিদপুর-২, মতিয়া চৌধুরী-শেরপুর-২, সাহারা খাতুন-ঢাকা-১৮, দীপু মনি-চাঁদপুর-৩, সিমিন হোসেন রিমি-গাজীপুর ৪, মাহাবুব আরা বেগম গিনি-গাইবান্ধা ২, ইসমাত আরা সাদেক-যশোর ৬, হাবিবুন্নাহার- বাগেরহাট ৩, মুন্নুজান সুফিয়ান-খুলনা ৩, সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি-মুন্সীগঞ্জ ২, মেহের আফরোজ চুমকি-গাজীপুর ৫, জয়া সেনগুপ্তা-সুনামগঞ্জ-২, মমতাজ বেগম-মানিকগঞ্জ ২, সেলিমা আহমেদ-কুমিল্লা ২, শাহীন আকতার চৌধুরী-কক্সবাজার-৪ ও রেবেকা মোমিন-নেত্রকোনা ৪।