এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জামাতা ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক উপদেষ্টা জারেড কুশনার এখন আত্মার আত্মীয়। দহরম-মহরম সম্পর্ক।

মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে উভয়ের নিজ নিজ স্বার্থই তাদের খুব দ্রুতই ঘনিষ্ঠ হতে সহায়তা করেছে। স্বাভাবিকভাবে প্রথম থেকেই ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত বিষয়ে আগ্রহী ইহুদি ধর্মাবলম্বী কুশনার। রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলের হাত শক্তিশালী করা তার অন্যতম মিশন।

অন্যদিকে নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে সৌদির বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের প্রভাব খর্ব করে সৌদির একাধিপত্য কায়েম করাই যুবরাজের উদ্দেশ্য। নিজ নিজ স্বার্থ ও উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে পররাষ্ট্রনীতির সব নিয়মবিধি ভেঙে একে অপরের ‘প্রাণের দোস্ত’ হয়ে উঠেছেন তারা।
কিন্তু তাদের এই দোস্তি মধ্যপ্রাচ্যে এতটুকু শান্তি বয়ে আনেনি। এনেছে ধ্বংস, হত্যা আর দুর্ভিক্ষ। তাদের বন্ধুত্বেই আজ ছারখার এ অঞ্চলের দু-দুটি দেশ। ইসরাইলের হাতে ধ্বংসের প্রান্তে ফিলিস্তিন আর সৌদি জোটের বিমান হামলায় বিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্যের দরিদ্রতম দেশ ইয়েমেন।

৭০ বছর ধরে ফিলিস্তিনের অধিকার নিয়ে খেলছে ইসরাইল। ধর্মের অধিকার, ভূমির অধিকারসহ প্রত্যেকটা অধিকারই কেড়ে নিয়েছে। সর্বাধুনিক অস্ত্র দিয়ে জীবনগুলোও কেড়ে নিচ্ছে।

সেই শুরু থেকেই এই অনাচার-অবিচারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের দমন-পীড়ন আরও জোরদার করতে প্রতিবছর ৩০০ কোটি ডলার সহায়তা দিচ্ছে।

সেই অর্থ দিয়ে ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করে সেখানে বসাচ্ছে অবৈধ বসতি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্র–ম্যান থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প- কেউই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে কোনো উদ্যোগই নেননি। প্রত্যেক প্রেসিডেন্টই ‘চোখ বন্ধ নীতি’ অবলম্বন করেছেন। একই নীতি গ্রহণ করেছেন ট্রাম্প।
মধ্যপ্রাচ্যে নিজের মনমতো ‘শান্তি পরিকল্পনা’ গ্রহণ করেছেন তিনি। বন্ধুত্বের খাতিরে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে যুবরাজ ও বাদশাহ সালমানকে চাপ দিয়ে আসছেন জামাতা কুশনার।

ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক মাস পর গত বছরের ৬ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক সব উদ্বেগ পাশ কাটিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রাজধানী জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করেন ট্রাম্প। শুধু ঘোষণাতেই শেষ নয়। ইসরাইলে মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে সরিয়ে সেই জেরুজালেমে স্থাপন করেছেন।

এর মধ্য দিয়ে মূলত ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের অপমৃত্যু ঘটেছে। জেরুজালেমকে ইসারাইলের রাজধানীর ঘোষণার পর এক বছর পার হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি ফিলিস্তিন। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় গত এক বছরে নির্বিচারে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। প্রতিনিয়ত চলছে বিমান হামলা আর স্নাইপারের গুলি।

এসব সত্ত্বেও কোনো প্রতিবাদ নেই সৌদি যুবরাজ ও বাদশাহ সালমানের পক্ষ থেকে।

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও সামরিক সহযোগিতায় ২০১৫ সাল থেকে একটানা চার বছর ইয়েমেনে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছেন যুবরাজ। সৌদি জোটের বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ১০ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক। খাদ্য, পানি আর ওষুধের অভাবে মানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে দেশটিতে। দুই কোটি মানুষ আজ দুর্ভিক্ষের কবলে। ডায়রিয়া-কলেরায় মরছে হাজার মানুষ। এসব সত্ত্বেও ইয়েমেন আগ্রাসনে সৌদির প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। রোববার সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিরাপত্তা সম্পর্কিত এক ফোরামে উপসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা টিমোথি লেন্ডারকিং বলেন, ‘আমরা মনে করি, সৌদি জোটের জন্য আমাদের সমর্থন এখনও জরুরি।’

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version