এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এমন একটি নতুন ন্যানোজেল আবিষ্কার করেছেন, যা অস্ত্রোপচারের পর স্প্রে করে দিলে আক্রান্ত এলাকায় ক্যান্সার ফিরে আসা প্রতিরোধ করবে।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলেসের (ইউসিএলএ) একদল বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে গবেষকরা এই অভিনব জেলটি আবিষ্কার করেছেন। জেলটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি দেহের ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধব্যবস্থাকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাবে। আর জেলটি তৈরি ক্যালসিয়াম কার্বোনেট দিয়ে, যা এক ধরনের ন্যানো পার্টিকেল। এটি ধীরে ধীরে মানবদেহের ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু সারিয়ে তুলবে।
এই ন্যানো পার্টিক্যালগুলোতে রয়েছে সুনির্দিষ্ট প্রোটিন প্রতিরোধক অ্যান্টিবডি (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা)। আর ক্যান্সার সেল হিসেবে কাজ করা সুনির্দিষ্ট ওই প্রোটিনগুলো যাতে আমাদের রোগপ্রতিরোধব্যবস্থার ভেতর লুকিয়ে থাকতে না পারে তা নিশ্চিত করতে এই ন্যানো পার্টিক্যাল বা ন্যানোজেল। মানুষের শরীরব্যাপী বিভিন্ন মাত্রার কোষীয় প্রক্রিয়ায় (সেলুলার প্রসেস) থাকা সিডি৪৭ নামের এক ধরনের প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সেলটি প্রায়ই খুব নিরীহ বা মোলায়েম ধরনের, যা সব সময়ই ‘আমাকে খেয়ো না’ বলে সংকেত দিয়ে ইমিউন সিস্টেমকে আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখে। দেহে অপরিচিত ও ক্ষতিকারক পদার্থ হজমকারী এই সিডি৪৭ (ক্লাস্টার অব ডিফারেন্সিয়েশন ৪৭) নামের প্রোটিনটি। কিন্তু ক্যান্সার কোষগুলো প্রায়ই নিজেদের সিডি৪৭ নামে আত্মপ্রকাশ করে, যাতে নিজেদের ইমিউন সিস্টেমের শনাক্তের হাত বেঁচে থাকতে পারে।
ইউসিএলএর গবেষকরা ক্যান্সার জীবাণুর এই চালাকিটাই বন্ধ করতে চাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, আবিষ্কৃত ন্যানোজেলটি ক্যান্সার টিউমার অপসারণের পর সেখানে তা প্রয়োগ করা হবে মানবদেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিডি৪৭ অ্যান্টিবডিকে যুক্ত করে; যাতে ‘আমাকে খেয়ো না’ নামের সিডি৪৭ প্রোটিনটি আরো সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে এবং এই কোষের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ক্যান্সার কোষগুলোকে ইমিউন সিস্টেম শনাক্ত ও ধ্বংস করতে পারে।
এ ব্যাপারে ইউসিএলএর স্যামুয়েলি স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং জৈব প্রকৌশলী ও অন্যতম গবেষক অধ্যাপক ঝেন জো বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসায় বাধা দূর করতে এই স্প্রেযোগ্য জেল তার অঙ্গীকার প্রমাণ করেছে।
প্রসঙ্গত, এই গবেষণাটি গত মঙ্গলবার ‘নেচার ন্যানোটেকনোলজি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা প্রবন্ধটি ইউসিএলএ ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। সূত্র : নিউ অ্যাটলাস, দি উইক।