এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সবার চোখ তৃতীয় বেঞ্চে। কারণ হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চেই ফয়সালা হবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ভাগ্য। আজই দুপুর ২টার পরে এই শুনানি হতে পারে। কিন্তু তৃতীয় বেঞ্চের রায় অনুকূল না হলে বিএনপি যেমন, তেমনি নির্বাচন কমিশনেরও আপিল বিভাগের শরণাপন্ন হওয়ার পথ খোলা থাকবে।

অতীতে উচ্চ আদালতের রায়ের আদেশের ভিত্তিতে ব্যালট পেপারে নাম পরিবর্তন করা হয়েছে এবং এ জন্য লাখ লাখ ব্যালট পেপার পোড়ানো হয়েছে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনটি এ ক্ষেত্রে একটি বিরাট দৃষ্টান্ত। ইসি সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রায় ২০টি আসনের মুদ্রিত ব্যালট পেপার পুনরায় ছাপাতে হয়েছিল। এ জন্য ৩০ থেকে ৩৩ লাখ ব্যালট পেপার পোড়ানো হয়। ২০০১ সালে ইসলামী আন্দোলনের প্রতীক নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে প্রায় ২৫ লাখ ব্যালট পেপার পোড়ানো হয়েছিল।

আরো সপ্তাহখানেক পরে শুরু হবে ব্যালট ছাপানোর কাজ।

ঢাকায় চারটি সরকারি ছাপাখানায় মুদ্রণ চলবে। তবে ভোটের তারিখের কতদিন আগে ব্যালট মুদ্রণ শেষ করতে হবে, সে বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই। একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০০৮ সালে তিন দিন আগেও তারা উচ্চ আদালতের আদেশে ব্যালট পেপারে পরিবর্তন এনেছেন। আর ইসি সাধারণত যেসব বিষয়ে মামলা জটিলতা থাকে সেসব এলাকার ব্যালট তারা সব থেকে দেরিতে ছাপে।
তিনটি আসনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা পৃথক রিট শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য গতকাল বিকেলে তৃতীয় বেঞ্চ ঠিক করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, বিচারপতি জে বি এম হাসান বর্তমানে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চের প্রিজাইডিং জাজ রয়েছেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত সেই বেঞ্চের নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন। বিরতির পরে তিনি একক বেঞ্চের বিচারপতি হিসেবে শুনানি করবেন।

আশির দশকে গৃহবধূ থেকে ভীরু পায়ে রাজনীতিতে পদার্পণ করেছিলেন খালেদা জিয়া। ১৯৯১ সাল থেকে যতবারই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, ততবারই জয়ী হয়েছেন। পাঁচটি আসনেও একসঙ্গে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এবারে দণ্ডিত হিসেবে তিনটি আসনে ভোটে দাঁড়ানোর ভাগ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।

গত মঙ্গলবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বিভক্ত আদেশ হয়। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি রুল জারি করে মনোনয়নের পক্ষে মত দেন। বেঞ্চের অপর বিচারপতি মো. ইকবাল কবির তা গ্রহণের পক্ষে ছিলেন না। গতকাল এ বিভক্ত আদেশের নথি প্রধান বিচারপতির দপ্তরে পৌঁছানো হয়। কিন্তু দুপুরের দিকে সেই নথি বিভক্ত আদেশদানকারী বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ফেরত পাঠানো হয়। জানা যায়, বিভক্ত আদেশের কারণ অধিকতর বিস্তারিতভাবে দেয়ার জন্য নথি ফেরত পাঠালে তা দ্রুত তামিল হয়।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নথি পুনরায় ফেরত পাওয়ার পরপরই তৃতীয় বেঞ্চ গঠনের উদ্যাগ নেন।
আইনে এক বা একাধিক বিচারপতির সমন্বয়ে প্রধান বিচারপতির তৃতীয় বেঞ্চ গঠন করার সুযোগ ছিল। বেঞ্চ গঠনের ব্যাপারে প্রচলিত আইনে কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া নেই। তবে রেওয়াজ হলো, নথি পাওয়ার পরই প্রধান বিচারপতি এক সদস্যবিশিষ্ট তৃতীয় বেঞ্চ গঠন করে দেন। প্রধান বিচারপতি সেটাই করেছেন।

কিন্তু কতদিনের মধ্যে তৃতীয় বেঞ্চ নিষ্পত্তি করবেন, সে বিষয়ে কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় না। তৃতীয় বেঞ্চ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্বাধীন।

আইনবিদরা বলেছেন, তবে কোনো রিট দায়েরের পর রুল জারি এবং অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারির পর্যায়ে বিভক্ত আদেশ প্রদানের রেওয়াজ বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের এক চলতি প্রবণতা।

হাইকোর্ট রুলসে যা আছে
বিভক্ত রুল জারি করার বিষয়টি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ১৯৭৩ সালের রুলসের (২০১২ সালে সংশোধিত) চ্যাপ্টার ১১ক-এর আওতায় রুল ১৮ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এটি বলেছে, ‘যখন কোনো একটি দ্বৈত বেঞ্চ একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রশ্নে সমানভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েন, তখন বিভক্ত আদেশদানকারী বিচারকগণ তা প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠাবেন। প্রধান বিচারপতি তখন একজন বা একাধিক বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে তাদের মতামত চূড়ান্ত করবেন। বিভক্ত আদেশদানকারী বিচারকরাসহ পরে যারা সিদ্ধান্ত নিলেন, তাদের সবার মতামত বিবেচনায় নেয়া হবে। এবং বিষয়টি সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে স্থির হবে।’

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version